সিলেটের জলবন ‘রাতারগুল’

প্রকাশিত: ১২:৫৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০
সিলেটের সুন্দরবন বলে ‘রাতারগুল’ জলবনকে। বনটি দেখলে মনে হবে সুন্দরবনের আদলে আরেক বন। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের কাছে তাই বনটি সিলেটের সুন্দরবন নামেই পরিচিত। রাতারগুল জলবনের দক্ষিণে সিলেট সদর, উত্তরে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর ও গোয়াইন নদী, পূর্বে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এবং পশ্চিমে সিলেটের সালুটিকর ও ওসমানী বিমানবন্দর। এর মধ্যে রাতারগুল অবস্থিত।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ‘জলার বন’ রাতারগুল। হিজল, করচ, তমাল, অর্জুন, কদম, জালিবেত, বনজাম, মুর্তা, পিটালি আর জারুল গাছে ভরপুর। এই বনেই আছে বানর, নানা প্রজাতির সাপ যেমন- অজগর, দাঁড়াশ, গোখরো, গুইসাপসহ বেশ কয়েক জাতের সাপ, বিচ্ছু, মেছোবাঘ, বুনো শূকর, কাঠবিড়ালি, বেজি, ভোঁদড়, বনবিড়ালসহ জল ও স্থলের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, ঘুঘু, চড়ুই, পানকৌড়ি, চিল, বালিহাঁস, বকসহ নানা প্রজাতির পাখি ও উদ্ভিদ। স্বচ্ছ নীল পানির ওপরে জেগে ওঠা এ বন রাতারগুল। বর্ষা মৌসুমে পানিতে টইটম্বুর থাকে। শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়।

দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রাতারগুলের মটরঘাট অবস্থিত। ঘাটে থাকে অসংখ্য খেয়ানৌকার সারি। নৌকাগুলো এখানে আসা পর্যটকদের পুরো বন ঘুরিয়ে দেখায়। মটরঘাট থেকে খেয়ানৌকা ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় পুরো বন। বন ঘুরতে নৌকায় ভাড়া নেবে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।

মটরঘাটে যেতে পরবে মাজার শরিফ ও মন্দির। একেবারে পাশাপাশি দুই উপসানালয়। মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের এ দুটি পবিত্র স্থানের দূরত্ব মাত্র একটি দেয়াল। মাজার জিয়ারত ও মন্দিরে পূজা-অর্চনা হয় নিয়মিতই।

মটরঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে বনের যত গভীরে যাওয়া যায়, ততই মুগ্ধতা বাড়ে। বনের মধ্যে রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ার থেকে দূরে দেখতে পাওয়া যায় বাড়িঘর, হাওর, সারি-সারি বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। ভারতের পাহাড় বেয়ে নেমে আসা অনেকগুলো ঝরনার জলধারা।

৩৩১ একর আয়তনের রাতারগুল বনকে ১৯৭৩ সালে বণ্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে এ বনের আয়তন ৫০৪ একর। পৃখিবীতে ২২টি সোয়াম্প ফরেস্ট আছে। বাংলাদেশের রাতারগুল এর মধ্যে একটি। অপরূপ সৌন্দর্যময় বিশাল জল বন রাতারগুলের গাছপালা বছরের সাত মাস থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমে এ বনের গাছপালা থাকে গড়পড়তা ১০ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। গাছপালার বাকি অংশ থাকে পানির ওপরে। শুকনো মৌসুমে এ বনের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে সবুজ এ বনের গাছপালা মাথা তুলে দাঁড়ায়। শীত মৌসুমে বেড়ে যায় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা।

এ সময় রাতারগুলের সৌন্দর্য হয়ে যায় অন্যরকম। বনের অভ্যন্তরে অবস্থিত লেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির বিচরণ মন ভরিয়ে তোলে।

কীভাবে যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানযোগে বিভাগীয় শহর সিলেটে আসতে হবে। সিলেটের আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় রাতারগুলের মোটরঘাট। সেখান থেকে নৌকায় ঘোরা যায় পুরো জলবন রাতারগুল। সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ নিলে ভাড়া নেবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। সারা বন ঘুরতে নৌকা ভাড়া নেবে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের পাশঘেঁষে শালুটিকর ও চেঙ্গীর খাল পাড়ি দিয়েও যাওয়া যায় রাতারগুল। সে ক্ষেত্রে সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশায় আসতে হবে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে।

সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নেবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সেখান থেকে ট্রলার পাওয়া যায়। গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল পর্যন্ত ট্রলার ভাড়া নেবে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। রাতারগুল বনে পৌঁছে নৌকা নিতে হবে।




error: Content is protected !!