করোনার হটস্পট এখন খুলনা নগরী! লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী!

প্রকাশিত: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২০

মোঃ রায়হান আলী,খুলনা ব্যুরো প্রধানঃ-
খুলনা মহানগরীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। আর শনাক্ত হওয়া রোগীরা সবাই আলাদা আলাদা এলাকার বাসিন্দা। এতে জালের মত বিস্তৃত ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) একদিনে শুধুমাত্র শহরে ৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ জন। রোগীরা পৃথক এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় ছোট শহরের কত জায়গায় লকডাউন করা যায় এমনি প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং খুলনা সিভিল সার্জন।

খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) পিসিআর ল্যাব ও খুলনা সিভিল সার্জনের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১৫২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরীর মধ্যে রয়েছে ৯২ জন, দিঘলিয়ায় ২৪ জন, রূপসায় ১৩ জন, ডুমুরিয়ায় ৭ জন, দাকোপে ৬ জন, বটিয়াঘাটা ৩ জন, তেরখাদায় ৩ জন, ফুলতলায় ২ জন পাইকগাছায় ১ জন ও কয়রায় ১ জন। আর করোনায় মারা গেছেন ৪ জন। যার মধ্যে রূপসায় ৩ ও দিঘলিয়ায় ১ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৭ জন। পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন। মারা গেছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে রূপসায় ৩ জন ও দিঘলিয়ায় ১ জন।

খুমেকের উপাধ্যাক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, বৃহস্পতিবারে খুমেকের পিসিআর ল্যাবে মোট ১৮৮ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে খুলনার নমুনা ছিল ১৪১ টি। নমুনা পরীক্ষার পর ৩৫ টি পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। যার মধ্যে খুলনা শহরের ৩০ টি, যশোরের ৪ টি ও ঢাকার ১ টি।

বৃহস্পতিবারে শহরে শনাক্ত হওয়া রোগীরা সকলে আলাদা আলাদা এলাকার বাসিন্দা। বিশেষ করে ছোট বয়রা, সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, বয়রা, খালিশপুর, হরিণটানা, গোবরচাকা, সিএমভি কলোনী, হাজী মহশীন রোডের বাসিন্দা। এছাড়াও জেলা পুলিশ সদস্য, মেট্রোপুলিশ সদস্য ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সদস্যরা রয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার শহরে ১০ জন শনাক্ত হয়েছিলেন, তারা তারা ছোট বয়রা, নিউ মার্কেট, খান এ সবুর রোড (পুরাতন যশোর রোড), দৌলতপুর, ক্রিসেন্ট কলোনী ও কেডি ঘোষ রোড এলাকার বাসিন্দা।

খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সুজ্জাত আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত খুলনায় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১২২ জন। সন্ধ্যায় খুমেকের পিসিআর ল্যাব থেকে জানতে পেরেছি আরো ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা সকলে খুলনা শহরের বাসিন্দা। এমনকি প্রত্যেকের বাড়ী পৃথক পৃথক এলাকায়। এখন চিন্তার বিষয় আসলে কত জনের বাড়ি লকডাউন করা যাবে। ছোট শহরের এ পর্যন্ত ৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। একজন শনাক্ত হলে তার আশে পাশের কয়েকটি বাড়ী, কখনো ছোট বা সড়ক ধরে লকডাউন করা হয়। তাহলে পৃথক এত জায়গায় লকডাউন করা কিভাবে সম্ভব।

আবার খুলনায় করোনার পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার পর ফলাফল পেতে কোন কোন সয়য় ৫দিন পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার এটি একটি মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন ফলাফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময় পজিটিভ ব্যক্তিরা আশাপাশে ঘুরাঘুরি করে অনেককে সংক্রমিত করছেন।

সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পিসিআর মেশিনে একদিনে করোনা পরীক্ষার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ১৯২টি। গত ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭ হাজার ২২১টি, গড়ে দিনের হিসাবে প্রতিদিন ১২০টির বেশি। সম্প্রতি যশোর ও কুষ্টিয়ায় পরীক্ষা শুরু হলে খুলনার ল্যাবে নমুনা আসার পরিমাণ কিছুটা কম ছিল, কিন্তু বর্তমানে নমুনা আসছে বেশী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হওয়ার অপেক্ষায় আছে, ল্যাবের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে টেস্ট করলেও তা শেষ হতে অন্তত ৫ দিন লাগবে। এর মধ্যে আরও বেশী নমুনা আসে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একজন রোগীর নমুনা নেয়ার পর ৫ দিনের বেশি সময় লাগবে রিপোর্ট দিতে, যার কারণে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি রেজা সেকেন্দার বলেন, আমাদের সর্বচ্চো সক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করেও রোগীকে ফলাফল দিতে বিলম্ব করে ফেলছি। এতে তো করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করছি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পিসিআর ল্যাব রয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে বারবার করোনা পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করেছি। তবে তারা কোব ভাবেই এটা আমলে নিচ্ছেন না।

তিনি খুলনা বাসীর উদ্দশ্যে বলেন, এ পরিস্থিতিতে মাত্র ৫টি অভ্যাস গড়তে পারলে আমরা করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারবো। অযথা বাইরে বের না হওয়া, নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করা, নিয়মিত হাত ধোয়া, অন্যদের কাছে হাঁসি-কাঁসি না দেওয়া ও একান্ত প্রয়োজনে বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। এই অভ্যাস গুলো গড়তে পারলে আমরা করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।

এদিকে খুলনার বর্তমান পরিস্থিতিতে সংক্রমণরোধে বাড়ির বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করেছেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তিনি গণ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, খুলনায় রাত আটটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ঔষধ ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) ব্যতীত বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এ নির্দেশ অমান্যকরীর বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকে। সরকার যখন যেমন নির্দেশনা দিবেন তখন শতভাগ সেই নির্দেশ পালন করা হবে। এখন সরকারের যে নির্দেশনা আছে তা পুরোপুরি পালিত হচ্ছে। ভবিষতে যদি নতুন কোন নির্দেশনা আসে সেটা পালন করা হবে।




error: Content is protected !!