নবীগঞ্জে চাঁদা না দেয়ায় ঘরবাড়ি ছাড়লেন প্রধান শিক্ষক মাহবুব – থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের৷
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ নবীগঞ্জ উপজেলার কামার গাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুব আহমদ নামের এক ব্যক্তিকে শারিরিক ও মানষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে,নিয়মিত চাঁদা না দেয়ায় আপন দুই ভাই কর্তৃক নির্যাতন ও হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে৷ হয়রানির শিকার শিক্ষক প্রাণ বাঁচানোর ভয়ে ঘর-বাড়ি ও স্ত্রী সন্তান রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে নবীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ অভিযোগ দায়েরকারী স্কুল শিক্ষক তিনি উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর গ্রামের মৃত ইমতিয়াজ মাস্টারের ছেলে ও দীঘল বাক ইউনিয়নের কামার গাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক৷ তিনি অভিযোগে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন,তিনি ২০১০ সাল হইতে অদ্যবদি নবীগঞ্জ উপজেলার ৩৭ নং কামারগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ও বর্তমানে (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন৷ সাংসারিক জীবনে তার পরিবার স্ত্রী,সন্তান নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে পৃথকভাবে বসবাস করেন,
তারই আপন ভাই মহসিন আহমদ, (৪৯)ও উপজেলা গণফোরামের সদস্য সচিব মুরাদ আহমদ (৪৬) নামের উল্লেখিত ব্যক্তি দ্বয় তার আপন ভাই হলেও তারা আইন কানুনের ধার ধারেন না, আইন অমান্যকারী,পর সম্পদ লোভী ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক । তাদের অত্যাচারে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন৷তাদের সাথে ওই শিক্ষকের পারিবারিক সহায় সম্পত্তি ও চাঁদাদাবী নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলে আসছিলো। তার সহায় সম্পদ,টাকা পয়সা গ্রাস করার জন্য মহসিন ও মুরাদ উঠেপড়ে লেগেছেন, এমনকি নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য, নানাভাবে নির্যাতন চালায় তারা৷ তাকে সাজানো মিথ্যা অপবাদের নাটক সাজিয়ে গত ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের উপশহরের তেররতনে অবস্থিত এইম ইন লাইফ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে জোর পূর্বক ৮/১০ জন ভাড়াটিয়া গোন্ডা বাহিনী দিয়ে বাসা থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে মাদকাসক্ত বানিয়ে অতি সুকৌশলে তার উপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক চরম নির্যাতন৷ এতে প্রথমত তাকে প্রায় সাড়ে তিন মাস বন্দী করে নির্যাতন করা হয় । সাড়ে তিন মাস পর যখন তাকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে ছাড়িয়ে আনার পরে উপরোক্ত বিবাদীগণ তাকে হুমকি দেয় উপরোক্ত ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করলে পূণরায় আবারো মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন করা হবে। এর পর থেকে তাদের হুমকির মুখে জিম্মি হয়ে তিনি তাদেরকে প্রতি মাসে তার সরকারী বেতনের একটি অংশ উপরোক্ত বিবাদীগণকে মাসোহারা দিয়ে আছিলেন। যখনই তাদেরকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতেন , তখনই আবারো তার বর্তমান কর্মস্থল বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠদানরত অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে হঠাৎ করে আবারো সাদা মাইক্রোবাস ও একদল ভাড়াটে লোক বিদ্যালয়ের অফিসের সামনে গাড়ী থামিয়ে সেই এইম ইন লাইফের ৮/১০ জন ভাড়াটিয়া গোন্ডা তাকে জোর পূর্বক গাড়িযোগে তুলে নিয়ে এইম ইন লাইফ সিলেটে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাবার পর তিনি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাকে কেন হঠাৎ করে বিদ্যালয় থেকে ধরে নিয়ে আসলেন। প্রতি উত্তরে উনি বলেেছিলেন এসব বিষয় আপনার জানার দরকার নেই। আপনার ভাই দ্বয় আমাকে বলেছেন আপনি নেশা সেবন করেন,। তখন আমি আমাকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করার অনুরোধ জানালে তারা আমার কোন কথা বার্তা বা আর্থনাদ না শুনে আমার উপর অমানবিক নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাতে থাকেন। বিনিময়ে মহসিন ও মুরাদ তাকে
মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি৷ একপর্যায়ে প্রায় দেড় মাস পরে বিবাদীগণ তাকে উক্ত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে মৌখিক শর্ত সাপেক্ষে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হবে মর্মে তাকে উক্ত বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এর পর থেকে তাদেরকে তিনি নিয়মিত টাকা দিয়ে আসছিলেন, বিবাদীগণকে টাকা দিতে দিতে এক পর্যায়ে তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ঋণগ্রস্থ হওয়ার পরে যখন আবারও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন তখন ২০১৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর রাতে পূণরায় রাত ২ ঘটিকার সময় তার বাসা থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় পূর্বের ন্যায় মাইক্রোবাস যোগে সিলেটের কদমতলীস্থ এইম ইন লাইফ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে আবারো প্রায় ২ মাস প্রচন্ড রকমের অমানসিক ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়। ্এরপর আবারও তিনি তার মান সম্মানের কথা চিন্তা করে মুরাদ ও মহসিনের হুমকির মুখে জিম্মি হয়ে প্রতি মাসে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসছিলেন। ইদানিং আবারো তার সহায় সম্পদ গ্রাস করিতে ও চাঁদা দেওয়ার জন্য চাপসৃষ্টি করিলে তিনি অনীহা প্রকাশ করলে,
গত ০৭ জুলাই রাত সাড়ে ১১ টার সময় একদল অপরিচিত ৭/৮ জন লোক সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে তার বাসার সামনে এসে হাকডাক দিলে তিনি প্রাণের ভয়ে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন৷ বর্তমানে তাদের কারণে তিনি তার সংসার, স্ত্রী সন্তান, বাসা বাড়ী সব ত্যাগ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও এ প্রতিনিকে জানান৷ উল্লেখিত বিবাদীগণ কর্তৃক যে কোন সময় তার জানমালের ক্ষতি সাধন সহ তাকে আবারো মাদকসেবী বানিয়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে ভয়ংকর রকমের শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের সম্ভাবনা রয়েছে৷ তিনি আরো বলেন আমার জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি ও আমাকে প্রাণে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে তারা।মাহবুব কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন আমি জীবনে কোনদিন মাদক সেবনতো দূরের কথা এসবের দ্বারপ্রান্তে কখনোই যাইনি, কিন্তু আমার আপন ভাই হয়েও তারা আমার সম্পদ ও টাকার লোভে আমাকে এভাবে শারিরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করছেন,তিনি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানান৷ এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে৷