ভেড়ামারা পৌরসভার ময়লার ভ্যানে করে সংগৃহীত বর্জ্য বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সুফল মেলার আভাস। বাঁকা পোলে ১২ শতক জমিতে ভাগাড় নির্মাণের কাজ শুরু।
মোঃ শৌভন আহম্মেদ সবুজ নিজস্ব প্রতিনিধি
গতকাল মঙ্গলবার ভেড়ামারা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পৌরসভার ময়লা ফেলার ভ্যানে করে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সুফল মিলতে শুরু করেছে। বাঁকা পুলে ১২ শতক জমিকে ভাগাড়ের উপযোগী করতে কাজ শুরু হয়েছে। ভেকুসহ জনবল সেখানে কাজ শুরু করার সংবাদ নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় প্রশাসন ও দায়ীত্বশীল জনপ্রতিনিধিগণ।
এবিষয়ে প্রকাশিত খবরে প্রকাশ, এলাকাবাসী জীবানুযুক্ত ময়লা অপসারণ না করায় চরম দূর্ভোগে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।গতকালের প্রতিবেদনের পর পৌর এলাকার অধিবাসীরা আজ বুধবারেও এই প্রতিবেদকের শরনাপন্ন হন এবং তাদের দূর্ভোগ আর স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে প্রতিকারের আশায় প্রকৃত চিত্র প্রতিবেদককে অবহিত করেন। ভেড়ামারা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ রেলগেটের অস্থায়ী ট্রাক স্ট্যান্ডে বসত বাড়ি ঘেঁসে পঁচা ময়লা ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ভুক্তভোগী জনৈক সোহাগ জানান, তার বাড়ির পাশে গত কোরবানীর ঈদের আগে ভ্যানে করে এনে ময়লা ফেলে যায় পৌরসভার ময়লার ভ্যান চালকেরা। এরমধ্যে একবার কিছু ময়লা সরিয়ে নেয়ার পর বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও অবশিষ্ট বর্জ্য অপসারণের নাম-গন্ধ নেই কোন। ময়লা ফেলায় পৌর এলাকার সব চেয়ে শুষ্ক স্থানটিই এখন স্যাঁতস্যাতে ও পুঁতি গন্ধময় অবস্থায় রয়েছে। রাস্তার পাশে হওয়ায় পথচারী এবং বাড়ির পাশে হওয়ায় আশেপাশের বাড়ির লোকজনের ত্রাহি অবস্থা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ যত্রতত্র ময়লা ফেলার ফলে তাদের নাগরিক জীবনের স্বাভাবিকত্ব ব্যাহত হচ্ছে। দূর্গন্ধের কারনে বাড়িতে অবস্থান করা বিষম দায় হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত বিকট গন্ধে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম তাদের। বাড়িতে শিশু ও বয়স্ক লোকজনের জন্যে বর্তমান করোনা মহামারীর কারনে এই আবর্জনা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় মশার প্রজননের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজমান থাকায় মশাবাহিত রোগ সংক্রমণের আশংকা জেগেছে।
এদিকে গতকাল ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র ময়লা অপসারণের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন সংবাদকর্মীদেরকে। কিন্তু এখনো যেখানকার আবর্জনা সেখানেই আছে। এলাকাবাসীর আবেদন বসত বাড়ি বা আবাসিক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফেলে রাখা বর্জ্য অতিসত্ত্বর সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। এব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছেন। তাদের অভিমত, পৌরসভার ময়লা নিয়ে এরুপ বিদঘুঁটে অবস্থা অতীতে কোনদিনই ছিলনা। কারন এর আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহের কোন ব্যবস্থা ছিলনা। গত কয়েক মাস পূর্বে পৌরসভার প্রতিটি বাড়ি হতে ময়লা অপসারনের লক্ষ্যে পৌরসভার পক্ষ হতে ময়লা পরিবহনের জন্য ভ্যান প্রদান করা হয় এবং এই ময়লা অপসারনের জন্য প্রতিটি পরিবার হতে ১০০ টাকা মাসিক ধার্য্য করা হয়। সংগৃহীত ময়লা ফেলার জন্য উপযুক্ত কোন ভাগাড়ের জায়গা ঠিক না করেই বাড়ি বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে তা স্তুপে পরিণত করার ফলে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আগে যার যার ময়লা সে সে ফেলে আসতো বা ধ্বংস করতো। পৌরসভার সংগৃহীত বর্জ্যের স্তুপের কারণে ভুক্তভোগীরা তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
এবিষয়ে জানানোর জন্যে আজ ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীনেশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পৌরসভার আবর্জনা সরকারি খাস জমিতে ফেলা হয়েছে বলে পৌর মেয়র মহোদয় তাকে অবহিত করেছেন। পার্শ্ববর্তী বসত বাড়ির বাসিন্দাদের অসুবিধার বিষয়টি আমলে নিয়ে বাঁকা পোল এবং ১২ মাইলে ময়লা ফেলার ভাগাড়ের জন্য জমি নির্ধারনের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে ১২ শতক জমিও নির্ধারণ করা হয়েছে বলে ইউএনও দীনেশ সরকার জানিয়েছেন। ভেড়ামারা রেলগেটের সন্নিকটে ময়লার স্তুপের বিষয়ে তিনি পৌর মেয়রকে ব্যবস্হা নিতে বলবেন বলে আশ্বাস দেন।
ভেড়ামারা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী হাসান সবুজের সাথে মোবাইল ফোন’র মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে, এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন যে, পৌরসভার ময়লা ফেলার ভাগাড়ের জন্য নির্ধারিত স্থানটিতে বালু ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ভেকু নিয়ে গিয়ে সেখানে কাজ চলছে। ২/১ দিনের ভিতরেই ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থানটি ব্যবহারের জন্য উপযোগী হলে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের আবর্জনা সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান হবে।