কুয়াকাটা সৈকতে আবারো প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে আয়রনের টং ঘর তৈরী প্রভাবশালীদের ॥
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ
কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টে পশ্চিমে
চর দখল করে লোহার টং ঘর নির্মাণ করছে সাজেদুল ইসলাম নামে এক প্রভাবশালী।
টং ঘরের নিচের ফাঁকা জায়গা সমুদ্রের বালু কেটে ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন
বীরদর্পে। একদিকে সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে অপরদিকে টং ঘর নির্মাণ কাজ
চলছে। সমুদ্র আইন অনুযায়ী বালু চরে কোন প্রকার স্থাপণা নির্মাণ নিষিদ্ধ
থাকলেও আদালতের দোহাই দিয়ে দখল কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। স্থানীয় ভূমি
কর্মকর্তা মৌখিকভাবে সমুদ্রের বালু চরে স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে
বললেও তা মানছেনা। সমুদ্রের সাদা বালুরচর দখল করে লোহার টং ঘর নির্মাণ
কাজ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, সমুদ্রের চরে মালিকানার দাবী নিয়ে টং ঘর
নির্মাণে অন্যসব দখলদাররাও এতে উৎসাহিত হবে। এমনিতেই দখল দূষণে সৈকত
এলাকার পরিবেশ নোংরা ও ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধে পর্যটকরা নাকাল। একসময়
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এই সমুদ্র সৈকতটির সৌন্দর্যে বিমোহিত হতো
পর্যটকরা। জিরো পয়েন্টের সৈকতে নামতেই এমন দখল দূষণ পর্যটকদের অস্বস্তিতে
ফেলছে। এ দখল দূষনে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে
পর্যটকরা। সৈকতের এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এখন সময়ের দাবী বলে মনে করেন
স্থানীয়রা।
স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, সমুদ্রের চর দখল করে সরদার মার্কেট,
ঝিনুক মার্কেট নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন
সাজেদুল ইসলাম গংরা। ভূমি কর্তৃপক্ষ সমুদ্রের চরের ওই জমি তাদের দাবী করে
দফায় দফায় উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে এসব ভুমিদস্যুরা আদালতের স্বরনাপন্ন হলে
আদালত উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে আবারো তারা স্থাপনা নির্মানে ভোগদখলে
মেতে উঠে। আদালতের এমন নিষেধাজ্ঞার কারনে জেলা প্রশাসন এসব অবৈধ দখল
উচ্ছেদ করতে পারছেন না। মালিকানার সঠিক কাগজপত্র না থাকলেও আদালতের
নিষেধাজ্ঞার দোহাই দিয়ে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে সমুদ্রের বালুরচর
দখল করে আবাসিক হোটেল, মার্কেট ও দখলকৃত বালুরচর পর্যটন মৌসুমে ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে ভবৈধ উপায়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার আ: আজিজ এ প্রতিবেদককে জানায়,
সমুদ্রের চরে টং ঘর নির্মাণ কাজ মৌখিকভাবে বন্ধ রাখার জন্য তিনি বলেছেন।
মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জমা দিতে বললেও
তারা তা দেননি। সমুদ্রের বালুরচর কেটে নেয়ার বিষয়ে এ্যাসিল্যান্ডকে অবহিত
করা হয়েছে। কাগজপত্র ও মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জেনে উর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে তারা
চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
সাগরের চর দখল করে টং ঘর নির্মাণ এবং বালু কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে উক্ত
সাজেদুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, ২০০৬ ইং: সালে তিনি কে এম শাহজালাল এর
কাছ থেকে এই জমি কিনেছেন, যখন এই জমি পতিত ছিল। ঘুর্নীঝড় ইয়াসের সময় তার
আবাসিক হোটেল ও মার্কেট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেখানেই তিনি আয়রনের টং ঘর
নির্মাণ করছেন। এই জমিতে তারা ঘর-দরজা তুলে ভোগদখল করতে পারবেন, সরকার
পক্ষ বাধা দিতে পারবেন না, আদালতের এমন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং এ জমি এবং
মামলার বিষয়ে কে এম শাহজালালের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন সাজেদুল ইসলাম।
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল
হক সাংবাদিকদের জানায়, টং ঘর নির্মাণ এবং বালু কাটা তহসিলদার পাঠিয়ে বন্ধ
করা হয়েছে। মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে আসার কথা কিন্তু এখনও কাগজপত্র নিয়ে
কেউ আসেনি। তবে নিষেধ করার পরও যদি নির্মাণ কাজ এবং বালু কাটা বন্ধ না
করলে বিধি মোতাবেক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।