মিঠুন গোস্বামী রাজবাড়ীঃ
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি গত কয়েকদিন কমলেও নতুন করে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পানি। গত ২৪ ঘন্টায় জেলার তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টের মধ্যে দুইটি পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং একটি পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও নতুন করে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে এসব তথ্য মতে গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে পানি ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সদরের মাহেন্দ্রপুর পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।
অন্যদিকে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে পাংশার হাবাসপুর, সেনগ্রাম, কালুখালীর রতনদিয়া, হরিণাবাড়িয়ার চর, সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের চর কাঠুরিয়া, চর মৌকুড়ি, চর আমবাড়িয়া, বরাট ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, ছোট ভাকলা, কুশাহাটার চর, বেতকার চরে কায়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
পানিবন্দি ওইসব এলাকার মানুষ বাচ্চা ও গবাদিপশু নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। এ ছাড়া প্লাবিত কিছু দুর্গম চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে জলদস্যু ও ডাকাতদের উৎপাত। ফলে ওই সকল চরাঞ্চলের অনেক মানুষকে রাত জেগে লাঠি হাতে পাহারা দিতে হচ্ছে।
সদরের আমবাড়িয়া চরের পানিবন্দি সালমা খাতুন বলেন, আমরা গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছি। বাড়ির চারপাশেই পানি। চুলা জ্বালাতে পারি না। ছোট ছোট দুই সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। চারপাশে পানি থাকায় সাপ ও পোকামাকড়ের ভয়ও রয়েছে। নতুন করে আবার ডাকাতের ভয় যোগ হয়েছে। খুবই দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি। কোনো জনপ্রতিনিধি সাহায্য-সহযোগিতা করেনি।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, পদ্মার পানি কমতে শুরু করেছিল। হঠাৎ করেই তা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে গতকাল সিদ্দিক কাজীর পাড়ায় একমাত্র মসজিদসহ কয়েকটি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া পানি বৃদ্ধিতে দৌলতদিয়ায় প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলেই পদ্মার পানি বাড়ছে। আরও কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। পানি বাড়ায় গতকাল দৌলতদিয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ সমন্বয় করেই দৌলতদিয়ায় ভাঙন ঠেকাতে কাজ করবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক বলেন, জেলায় আমরা পানিবন্দি ৭ হাজার ৫১৫ পরিবারের তথ্য পেয়েছি। এদের মধ্যে ৫ হাজার ৭৮৭ পরিবারকে এই পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এখনও ত্রাণসামগ্রী দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।