হাটহাজারীতে নিজ ভবনের ছাদে ডেকে বড় ভাইকে জবাই করে হত্যা করল ছোট ভাই

প্রকাশিত: ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী
হাটহাজারীতে অর্থ সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নিজ ভবনের ছাদে ডেকে কুপিয়ে ও জবাই করে
মোহাম্মদ এরশাদ (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করল তারই ছোট ভাই প্রবাসী মঞ্জুর আলম (৩০)।
সোমবার মধ্যরাতে হাটহাজারী পৌরসভাধীন উত্তর মিরেরখিল খন্দকার পাড়াস্থ নুরজাহান ভিলায় নির্মম এ ঘটনা ঘটে।
নিহত এরশাদ হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের পেশকারহাটস্থ ফকির ডাক্তার বাড়ির মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে। তিনি হাটহাজারী কাচারি সড়কস্থ এন জহুর কমপ্লেক্সের নিচতলায় মীম কসমেটিকস নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন।
অর্থ সংক্রান্ত বিরোধ ও দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে বড় ভাই এরশাদকে খুন করেছেন জানিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ছোটভাই মঞ্জুর আলম।
পুলিশ ও নিহত এরশাদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৫ বছর আগে এরশাদ এবং তার ছোট ভাই প্রবাসী মঞ্জুর আলম মিলে মিরেরখিল এলাকায় জায়গা কিনে নুরজাহান ভিলা নামের একতলা বাড়িটি তৈরি করেন। মঞ্জুরের পরিবারও একই ভবনে থাকেন। ভবন তৈরিতে খরচের টাকা মঞ্জুর আলমের তুলনায় এরশাদ কিছুটা কম দেন। তবে এরশাদ কম টাকা দিলেও বাড়িটি নির্মাণ করতে অনেক পরিশ্রম করেন। তবে তা মানতে নারাজ ছিল মঞ্জুর। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব ছিল। গত শুক্রবার মঞ্জুর আলম ওমান থেকে দেশে ফেরেন। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মঞ্জুর এরশাদের দোকানেই অবস্থান করেন এবং রাতে এক টেবিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করেন।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা দুই ভাই ভবন তৈরির হিসাব ও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলেন। তখন এরশাদের স্ত্রী রহিমা তার কন্যাসন্তান মীমকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ছাদে চোর এসেছে বলে কৌশলে এরশাদকে ভবনের ছাদে পাঠায় মঞ্জুর। ২/৪ মিনিট পর পেছনে পেছনে মঞ্জুরও সেখানে গিয়ে এরশাদকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। এ সময় ছাদে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে রহিমা ও মঞ্জুরের স্ত্রী আঁখি ছাদে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় এরশাদ মাটিতে পড়ে আছে। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ডাকাত এসে এরশাদকে খুন করেছে বলে প্রচার করে মঞ্জুর। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এরশাদের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় এ সময় এরশাদকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সেখানে তিনি পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে খুনের দায় স্বীকার করেন। মামলা হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হলে বিকেলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। নিহত এরশাদের স্ত্রী রহিমা সাংবাদিকদের বলেন, ভবন তৈরিতে ব্যয় করা অর্থ নিয়ে বিরোধের জের ধরে মঞ্জুর আলম আমার স্বামীকে গলা কেটে খুন করেছে। আমার স্বামীর হত্যাকারী মঞ্জুরের ফাঁসি চাই। এদিকে ঘটনাটি চারিদিকে জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে হত্যাকারী মঞ্জুরকে নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠে। সবারই এক বাক্য সামান্য অর্থের দ্বন্দে এভাবে ভাইকে ভাই জবাই করতে পারে।




error: Content is protected !!