হবিগঞ্জে শীতকালীন সবজি শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্য সবজির তুলনায় কম পুঁজিতে বেশি লাভের কারণে ইদানীং শিম চাষে ঝুঁকছেন এ জেলার চাষিরা। গত বছরের তুলনায় ফলন ও দাম দুটোই ভালো হওয়ায় বেজায় খুশি কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা না পাওয়ায় অনেক কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার হবিগঞ্জ জেলায় ১৩ হাজার ৮৬ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। ধানী জমিগুলোতে আমন চাষ না করে সেই জমিগুলোতে জেলার মাধবপুর ও বাহুবলের বেশিরভাগ কৃষক চাষ করেছেন শীতকালীন সবজি শিম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শিমের ফলনও হয়েছে ভালো। শুরুতে প্রতি কেজি শিম ১০০/১২০ টাকায় দামে বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতি কেজি শিম কৃষকরা পাইকারি ৫০/৬০ টাকা দামে বিক্রি করছেন।
অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় শিম চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। ধান চাষের চেয়ে শিম চাষে বেশি লাভবান হচ্ছে কৃষক। এখানকার উৎপাদিত শিম জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে অনেক কৃষক জানিয়েছেন তারা কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা না পাওয়ার তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ঢাকা সিলেট-মহাসড়কের বাহুবল এলাকায় দিয়ে গেলে দেখা যায় শিম চাষের জমি। ধান চাষ করে লাভ না হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন শিম চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। বাহুবল উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের হাওরে গিয়ে অসংখ্য শিম চাষের জমি দেখা গেছে। এ গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় গ্রামের কৃষকরা মূলত ধান চাষ করতেন। কিন্তু বাজারে ধানের মূল্য না থাকার কারণে ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছে। বরং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন বর্তমান বাজারে ধানের মূল্য সাড়ে ৪ থেকে ৪৮০ টাকা। আর প্রতি মণ শিমের মূল্য বর্তমান বাজারে পাইকারি ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে কৃষকরা চলতি মওসুমে জমিতে আমন ধান চাষ না করে শিমের চাষ করেছেন। তবে এ অঞ্চলের কৃষক কৃষি বিভাগের কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে শিমের উৎপাদন বাড়ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে ধান চাষের চেয়ে শিমের চাষ লাভজনক হওয়ার দিন দিন এর চাষের চাহিদা বাড়ছে। উৎপাদিত শিমের জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে লাভবান হচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। তাদের হিসেবে এক মৌসুমে এখানে ১৫ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন শিমের উৎপাদন হবে। এতে প্রায় ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা উপার্জিত হবে। শিম খেতেও সুস্বাদু সবজি। তাই তিনি শিম চাষ করার জন্য পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমান ধান চাষের চেয়ে শিম চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা শিশ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।