সিরাজদিখানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে কয়েক কোটি টাকা কৃষকদের স্বপ্ন ভঙ্গ।

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২২

হাবিব হাসান মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি,

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছামতী নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে আর্থিক ক্ষতির কবলে পরেছে ইছামতী নদীর তীরবর্তী গ্রামসমূহ ও চরাঞ্চরের অন্তত একশ’রও অধিক কৃষক। কয়েকদিন পরে যেখানে ফলন ঘরে তোলার আনন্দে মুখে হাসি থাকার কথা কৃষকের। ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে লালিত স্বপ্ন ভেঙে গিয়ে আজ তাদের মুখ অনেকটাই মলিন।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদীর তীরবর্তী চরে চর নিমতলা, গয়াতলা, রামকৃষ্ণদী, চোরমর্দ্দন, রাঙামালিয়াসহ চরটির এপার ওপারের বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেন। বর্ষা মৌসুমের আগে কৃষকদের আবাদকৃত পাকা ধানের ফলন ঘরে তোলেন। কিন্তু আচমকা পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চরের অন্তত ৫০০ বিঘা ধানী জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার লোকসানের কবলে পরেছে এ অঞ্চলের কৃষক। চরের ধানী জমিগুলোর ধান সবে মাত্র পাকতে শুরু করেছে। মাস খানেকের মধ্যে পাকা ধান ঘরে তোলার কথা থাকলেও ধানের জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে। প্রায় ১০ দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে ৫০০ বিঘা জমির ধান। দীর্ঘদিন ধরে তলিয়ে থাকার কারণে ধানের গোড়ায় পচন ধরতে শুরু করেছে। ফলে ফলন ঘরে তুলতে না পারার শঙ্কা কৃষকদের জেকে বসেছে। চরম ক্ষতির কবলে পরার আশঙ্কায় ঘুম হারাম হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। এছাড়া অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে অনেক কৃষক তাদের রোপিত ধান থেকে প্রাপ্ত চালের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে ফলন হারিয়ে আর্থিক ও পারিবারিক ভাবে বেকায়দায় পরার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি সাত শতাংশে ফলন আসে প্রায় ৫ মন। প্রতি সাত শতাংশ ধান চাষে চারা, সার, পরিচর্যা ও কীটনাশকসহ আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে কৃষকের যে টাকা খরচ হয় সে হিসেবে বাজারের চালের দাম খুব একটা কম বেশী না হলেও চাল কিনে খাওয়ার চাইতে চাষ করে খাওয়াটাকেই গুরুত্ব দেন স্থানীয় কৃষকরা। এর মধ্যে অনেক কৃষক ভালো দাম পেলে বছরের খাওয়ার জন্য রেখে বাকী ধান বিক্রিও করে থাকেন। ইছামতী নদীর তীরবর্তী চোরমর্দ্দন গ্রামের কৃষক আঃ আলিম, মোঃ ইদ্রিস, চানু খা, আওলাদ ঢালী, আব্দুর রব, শাহানূর ও চরাঞ্চলের চর নিমতলা গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিকের সাথে কথা বললে তারা বলেন,হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চরের প্রায় সব জমির ধান ডুবে গেছে। সবে মাত্র ধান পাকা ধরেছে। কিছু কিছু জমির ধান প্রায় অর্ধেকটা পেকে গেছে। ১০ দিন ধরে পানিতে ডুবে থাকার কারণে ধান গাছের গোড়ায় পচন ধরা শুরু হয়েছে। আর কয়েকদিন যদি পানিতে ধানগাছ তলিয়ে থাকে তাহলে ফসলের চিন্তা ছেড়ে দিতে হবে। যদি ধান পেকে যেতো তাহলে কষ্ট করে হলেও কেটে বাড়িতে নিয়ে যেতাম।এমতাবস্থায় আমাদের কিবা করা আছে।হঠাৎ করে পানি বাড়ার কারণটাও জানা নেই। পানি কমবে কিনা তাও জানি না। যদি ধান গাছ পুরোপুরি পচে যায় তাহলে আমাদের চরম লোকসানের কবলে পরতে হবে। উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ৫ হাজার ১ শত ৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি২৮, ব্রি ২৯, ব্রি ৫৮, ব্রিধান ৮৮, ব্রি ৯০ ও বিনা ১৪ জাতের ধানসহ বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধানের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়তনের ধান চাষের জমি হিসেবে ইছামতী নদীর তীরবর্তী চরকেই বিবেচনা করা হয়। যেটির সমাপূর্ণই এখন পানির নিচে ডুবে রয়েছে।




error: Content is protected !!