ভারতে নারী পাচার করে দেহ ব্যবসা ও ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে র্যাবের হাতে নবীগঞ্জের সোহেল গ্রেফতার৷ ৷
এম. মুজিবুর রহমান নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসইবুক ও টিকটকের মাধ্যমে পরিচয়ের সুবাদে প্রেমিকাকে অতি সুকৌশলে ভারতে পাচার করে কলকাতায় পতিতালয়ে আটকে রেখে দীর্ঘদিন অবৈধ ব্যবসা করে লক্ষ লক্ষ্ টাকা কামাই করে নবীগঞ্জের সোহেল নামের যুবক, এছাড়াও ধর্ষণ সহ অহরহ গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়া মিয়ার পুত্র এই আলোচিত সমালোচিত মানবপাচারকারী সোহেল মিয়াকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্প র্যাব-৯ সিলেট।
জানাযায়, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়া মিয়ার পুত্র সোহেল মিয়া গত ৩ বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসইবুক ও টিকটকের মাধ্যমের পরিচয় হয় পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ডেমরা গ্রামের রুকশিপাড়া এলাকার এক জনৈকা প্রেমিকা সুন্দরী তরুণী (২২) এর সাথে ফেইসবুকের পরিচয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাদের একে অপরদের প্রতি ভালবাসা গভীর থেকে গভীরে জন্ম নেয়। প্রেমিক যুবক ভালোবাসার দুর্বলতার সুযোগে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় তার সহযোগীদের সহযোগিতায় নিয়ে যায় তরুণীকে। সেখানে নিয়ে তরুণীকে তারা আটকে রেখে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করে ঐ যুবক, সেখানের পতিতালয় থেকে কয়েক লক্ষ টাকাও ইনকাম করে সোহেল। এক পর্যায়ে অনেক সুকৌশলে মেয়েটি লুকিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে আসেন,
পরে একে অপরকে তারা বিয়েও করেন।
এরপর আবারও সোহেল তার পূর্বের নেশায় যুবতীকে ভারতে পাচার করতে মরিয়া হয়ে উঠে৷ তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গত ১২ মে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশে ওই তরুণীকে পাচার করলে অবশেষে ভাগ্যক্রমে ফিরে এসে সে সোহেল সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন৷ এদিকে, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের নৃশংস ও ঘৃণ্যতম অপরাধ বিশেষ করে ধর্ষণ, মানবপাচার, হত্যা মামলা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। নরহত্যাসহ যেকোন ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে র্যাবের প্রতিটি সদস্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে জনসাধারণের জন্য একটি নিরাপদ বাসযোগ্য সমাজ তথা দেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৯, সিলেট এর একটি আভিযানিক দল লালমনিরহাট জেলা পাটগ্রাম থানায় ৯(১)/৩০, ২০০০ নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) তৎসহ ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬(২)/৭/১০/১১ ধারায় গত ২১ মে রাতে ১১নং একটি মামলা দায়ের হয়। এতে সোহেলকে প্রধান আসামি করে ৫ জনের বিরোদ্ধে মামলা করেন ঐ তরুণী। ঐ মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামী হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়া মিয়ার পুত্র সুহেল মিয়া (২৭)কে সকাল ১০টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মৌলভীবাজার জেলার সদর থানা এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
ঘটনার বিবরণ ও আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে গত প্রায় ৩ বছর পূর্বে থেকে ফেসইবুকের মাধ্যমে ঐ তরুনীর সাথে পরিচয় ও সর্ম্পক হয়। সম্পর্কের জেরে যুবক সাতক্ষীরা জেলায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে গত ২০২১ সালের মার্চ মাসের দিকে পাশ্বর্বর্তী একটি শহরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসা করায়! এতে ঐ তরুণী নানান অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়েই চলতি বছরের ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসের দিকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এর কিছু দিন পর ঐ যুবকও দেশে ফিরে এসে ঐ তরুণীকে আবারো মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দেখাতে শুরু করে। তরুণীও ঐ যুবকের প্রলোভনে পড়ে যান। মামলার অভিযোগে আরো উল্লেখ্য যে, যুবকের অন্যান্য সহযোগীদের সহযোগীতায় তিনবিঘা করিডোর দিয়ে তরুনীকে দহগ্রামে নিয়ে সেখানে ঐ যুবক ও তার অন্যান্য সহযোগী তরুনীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে মানবপাচারকারীর মূল হোতা যুবক ও তার সহযোগীরা ঐ তরুণীকে পাশ্ববর্তী দেশে পাচার করে দেয়। সেখানে নানান পথ অতিক্রম করে পাশ্ববর্তী দেশের একটি শহর থেকে ওই তরুণী কৌশলে গত ১৫ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। আসার পর চলতি মাসের (২১ মে) লালমনিরহাট জেলা পাটগ্রাম থানার উক্ত ঘটনায় সোহেলকে (২৪ মে) মঙ্গলবার প্রধান আসামী সুহেল মিয়া সহ ৫ জনের বিরোদ্ধে থানায় ৯(১)/৩০, ২০০০ নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) তৎসহ ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬(২)/৭/১০/১১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন ঐ তরুণী। গ্রেফতারের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী সুহেল তার নিজের কৃতকর্মের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এবং ঘটনায় অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব-৯ এর চলমান গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযান অব্যাহত থাকবে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃত আসামীকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যবপারে সিলেট র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি আফসান-আল-আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।