মোংলায় কবি রুদ্র’র মৃত্যু বার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২২
আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট):
তারুন্যের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লার ৩১তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ১৯৯১ সালের এই দিনে লক্ষ কবিতা প্রেমিদের কাঁদিয়ে (১৯৫৬-১৯৯১) মাত্র ৩৫ বছর বয়সে চির বিদায় নিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। বাংলাদেশের কবিতায় এক অবিসস্মরণীয় নাম রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।
মাটি ও মানুষের প্রতি আমূল দায়বদ্ধ এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি। অকাল প্রয়াত এই কবি তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। সাহস ও স্বপ্নে, শিল্প ও সংগ্রামে আপদমস্তক সমর্পিত এই কবি তার স্বল্পায়ু জীবনকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তারুণ্যের দীপ্র সড়কে। নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে; হয়ে উঠেছিলেন তাদেরই কন্ঠস্বর।
‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’– এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন- ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। মাত্র ৩৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।প্রয়াত এই কবি ও গীতিকার “প্রতিবাদী রোমান্টিক” হিসাবে খ্যাত ছিলেন।
আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কয়জন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠে উঠে- তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম কবিতা “বাতাসে লাশের গন্ধ”।পৃথিবী, নারী, স্বপ্ন, সংগ্রাম আর শিল্পের প্রতি নিমগ্ন কবিতার -কারিগর রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ; বড় অসময়ে অবহেলায় চলে গেলে বাউল , ভাল থেকো তোমার আকাশে । আজও বেদনার বেনোজলে, দ্রোহের স্পর্ধায় তোমার কাছেই আসি বার বার।তার কবিতায় বারবার উঠে এসেছে মানুষ, সমাজ, চেতনার ত্রিকোনো উঠোন আর জীবনের শুভ্র কঙ্কাল। রুদ্রের কবিতা নিজেই এক মহান ইতিহাস।
সময়ের চিলেকোঠায় ‘কবিতা’নাম্নি বর্গক্ষেত্রের মধ্যেই রুদ্র মানুষের একাকিত্বতা, নিমগ্নতা, লৌকিক সভ্যতার মানচিত্র এঁকেছেন দক্ষ হাতে।রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কবি, কবি এবং কবি। কবির ঊর্ধ্বে আর কিছুই নন তিনি। রুদ্রের কবিতা স্বপ্ন দেখায় কবিতার আড়ালে এক বিশুদ্ধ সময়ের। রুদ্র তার কবিতায় অপ্রতিরোধ্য গতি সৃষ্টি করে সহজেই পৌঁছে গেছেন কালোত্তীর্ণের কাতারে। ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়, চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী।চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে, আমার না-থাকা জুড়ে’মোংলার মিঠেখালির বুকে শুয়ে আছেন কবিতার এই খেয়ালী চাষা । সব বাঁধা ছিঁড়ে যে কবি বেরিয়ে এসেছেন, তাঁর কাঁধে এখন বাংলা কবিতার জোয়াল!
দিনটি উপলক্ষে রুদ্র স্মৃতি সংসদ মিঠেখালী, মোংলা নাগরিক সমাজ, প্রথম আলো বন্ধু সভা, মোংলা স্টুডেন্টস ক্যাটারস্, শিরিয়া বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যাপীঠ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন যৌথ ভাবে দিনটি পালন করে।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ৯টায় মোংলার মিঠেখালী বাজার থেকে শোভাযাত্র সহকারে কবির মাজারে পুস্পমাল্য অর্পণ করে কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে সংগঠনগুলি।
পরে শিরিয়া বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় শোক ও স্মরণানুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি সুমেল সারাফাত। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিঠাখালী ইউপি চেয়ারম্যান উৎপল মন্ডল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক সাংবাদিক মো. নূর আলম শেখ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য সচিব গীতিকার মোল্লা আল মামুন, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, সিপিবি নেতা কমরেড নাজমুল হক, রুদ্র স্মৃতি সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, দি হাঙ্গার প্রোজেক্ট বাংলাদেশ’র মো. মিজানুর রহমান, রুদ্র সংদের লিটন গাজী ও মাহারুফ বিল্লাহ।
স্মরণানুষ্ঠান শেষে রুদ্রের গান পরিবেশন ও রুদ্রের কবিতা আবৃতি করা হয়।



error: Content is protected !!