প্রশাসনের যৌথ অভিযানে আশরাফুল চেয়ারম্যানের আন্ডারওয়ার্ল্ড আস্তানায় মিলল মাদক-নকল সিগারেট তৈরির মেশিনসহ অবৈধ পণ্য সামগ্রী

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২২
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের ব্যক্তিগত আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের অফিস ও সিগারেট তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিল, মদ, সরকারি চাউল-টিসিবির তেল-ডালসহ নকল পণ্য তৈরির মেশিনপত্র জব্দ করা হয়েছে। কাস্টমস, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ দল গত বুধবার দিনব্যাপী ৭ নং সদরপুর ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামে অবস্থিত চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত কার্যালয় ও আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায় চেয়ারম্যানসহ সেখানকার কর্মচারীরা।
মিরপুর থানা পুলিশ ও র‌্যাব জানায়, কুষ্টিয়া কাস্টমসের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে সদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশরাফুল টেড্রার্সে। তাদের সাথে র‌্যাব ও পুলিশের একটি দল সহযোগিতা করে।
অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের এমন একজন কর্মকর্তা বলেন,‘ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। ঠিকাদরি ব্যবসা করেন তিনি। এর আড়ালে সিগারেট তৈরির জন্য সদরপুর এলাকায় মাঠের মধ্যে গোডাউন তৈরি করেন। চারিদিকে প্রচীরবেষ্টিত এ কারখানায় বাইরের লোকজনের তেমন কোন নজর ছিলনা। এছাড়া আশরাফুল সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক হওয়ায় ভয়ে কেউ এদিকে আসত না। এ সুযোগে সেখানে নামি-দামি কয়েকটি কোম্পানীর সিগারেট নকল করে তৈরি করে আসছিলো সে। পাশাপাশি অন্যান্য নানা পণ্য নকল করে বাজারে বিক্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। গোডাউনে নকল ব্যান্ডরোল ছাড়াও মেশিনপত্র পাওয়া গেছে। এসব মেশিনপত্র জব্দ করেছে কাস্টমস।
তিনি আরো জানান, কারখানার গোডাউনে আশরাফুলে অফিস রয়েছে। সেখানে থাকার জন্য খাটসহ নানা সরাঞ্জম রয়েছে। এ অফিসে নকল পণ্য তৈরির পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে আসামিজক কর্মকাণ্ড ও মাদকের কারবার চলে আসছিলো এমন আলামত মিলেছে। অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, গাঁজা, সরকারি চাল, টিসিবির সয়াবিন তেল-মুসুর ডাল, কনডম পাওয়া গেছে। এতে করে বোঝা যায় বাইরে থেকেও লোকজন এসে এখানে অসামাজিক কাজে অংশ নিত।
এক আওয়ামীলীগ নেতা জানান, চেয়ারম্যান আশরাফুল স্থানীয় ক্ষমতাধর এক আওয়ামীলীগ নেতার আস্থাভাজন হওয়াই তার অপকর্ম জেনেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরোধীত করে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হওয়ার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘদিন থেকে এ কারখানায় নকল পন্য তৈরি করে কোটি কোটি টাকার মালিকও বনে গেছেন অল্প দিনের মধ্যে। তার যে অফিস সেখানে রাতের বেলা অসামাজিক কর্মকান্ড চলে আসছে অনেক দিন ধরে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে থানা পুলিশের কর্মকর্তারাও নিয়মিত আসা যাওয়া করতো। মিরপুর থানা পুলিশ বিষয়টি জানলেও তারা এতদিন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি এটাও বলেন, তার এই আস্তানা থেকে বিভিন্ন আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন।
কুষ্টিয়া র‌্যাব-১২ এর ক্যাম্প কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান বলেন, কাস্টমস মুলত অভিযান পরিচালনা করেছে আমাদের সহযোগিতা নিয়ে। সেখান থেকে বেশ কিছু মালামাল উদ্ধার হয়েছে। আমরা সহযোগিতা করেছি। কাস্টমস এ বিষয়ে বাকি পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
কুষ্টিয়া কাস্টমসের সহকারি কমিশনার বিএম সাজ্জাদুল হক বলেন,‘ আশরাফুল টেড্রার্সে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখান থেকে সিগারেট তৈরির সব ধরনের সারঞ্জাম পাওয়া গেছে। ৫টি মেশিন ছিলোসেখানে। আমরা জব্দ করেছি। মিরপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের দেখে বেশ কয়েকজন পালিয়ে যায়। কাউকে আটক করা যায়নি। এসব ছাড়াও সেখানে মাদকসহ নানা ধরনের পন্য পাওয়া গেছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেওয়া হবে।
মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, অভিযানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে ছিল। তবে কি সারঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে আমি বলতে পারব না। এসব নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
এদিকে কথা বলতে সদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের মোবাইলে রিং দিলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।



error: Content is protected !!