কলাপাড়ায় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্তে ও রামনাবাদ নদীর জোয়ারে কৃষি জমি ভাসছে কৃষকের আমন চাষাবাদ ব্যহত ॥
রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ কলাপাড়ায় দীর্ঘ ছয়
কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্তে ও রামনাবাদ নদীর জোয়ারে কৃষকের আমন চাষাবাদ
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষকরা আগামী বছরের জন্য ধান সংগ্রহ কীভাবে করবে তা
ভেবে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই।
বেড়িবাঁধ কোথাও কোথাও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এলাকার মানুষ এখন স্বাভাবিক
জোয়ারের চেয়ে অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে।
মানুষজন বাড়ি-ঘর থেকে জোয়ারের সময় নৌকা ছাড়া বের হতে পারছেনা। ‘ত্রাণ নয়,
টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’ ‘ভাসতে চাইনা, বাঁচতে চাই’- এ দাবিতে কলাপাড়ায়
রাবনাবাদ নদীর ভাঙ্গণকবলিত চর বালিয়াতল গ্রামে মানববন্ধন করেছেন শত শত
নারী-পুরুষ। সিডরের পর থেকে দীর্ঘ বছর ধরে এ বেড়িবাঁধের ভাঙ্গণ অব্যাহত
রয়েছে। এ ভাঙ্গণের অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, সামনের অমাবস্যার
জোঁতে বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ রামনাবাদ চ্যানেলের গর্ভে হারিয়ে যাবে। এতে করে
বাঁধ না থাকলে জোয়ারে পানি বাড়লেই প্রায় ১৫শ’ একর ফসলি জমি তলিয়ে যাবে।
কর্মসংস্থান হারিয়ে ফেলবে দুই-আড়াই হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ। কৃষকরা আমন
চাষাবাদ শুরু করলেও গত ১৫ দিনের স্থায়ী জলাবদ্ধতায় প্রায় সকল কৃষকের
বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিনে দেখা যায়, লালুয়া ইউনিয়নের চরচান্দুপাড়া,
মুন্সিপাড়া, বুড়োজালিয়া, চান্দুপাড়ায় কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেসে গেছে
জোয়ারের প্রবল ঝাপটায়। গিলে খেয়েছে রাবনাবাদ। দেবপুর এলাকায় এমন দৃশ্য
দেখা গেছে। মানুষ এখন বসবাসের অবস্থাও হারিয়ে ফেলছে। হাজার হাজার কৃষক
ইতোমধ্যে পুকুরের মাছ হারিয়ে ফেলেছে। ভেসে গেছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি
পালন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। মৌসুম শেষ হতে চললেও আমনের বীজতলা করতে পারছে
না। এমন কী সন্তানদের স্কুল মাদ্রাসায় যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও
বিকল্প বাঁধ করার জন্য জমি পাচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। আবার কোথাও
কোথাও পায়রা বন্দর অধিগ্রহণ করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে নতুন করে বাঁধ
নির্মাণ কিংবা পুরনো বেড়িবাঁধ মেরামতও করছে না। অনেক অসহায় দরিদ্র
শ্রেনির মানুষ উপায় না যেখানে বাঁধ রয়েছে, সেখানে বাঁধের চাপে চরম ঝুঁকি
নিয়ে ফের ঠাঁই নিয়েছেন। চরচান্দুপাড়া গ্রামের কাশেম তালুকদার এ বছর আমন
আবাদ তো দুরের কথা, বাড়িঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। একই দশা
দেলোয়ার চৌধুরী, সুলতান চৌধুরী, খালেক সিকদার, শহিদ হাওলাদারের মতো
অনেকের। তারা বাড়িঘর ছেড়ে ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
লালুয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মর্জিনা বলেন, গত এক যুগেরও
বেশি সময় ধরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গা বাঁধ এবং স্লুইজগেইট দিয়ে
পানি প্রবেশ করে চর বালিয়াতলি, লেমুপাড়া, আমতলীপাড়া, বড় বালিয়াতলি,
দ্বিগর বালিয়াতলিসহ পাঁচ গ্রামের প্রায তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে
পড়ে। অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভেঙ্গে পড়ে স্যানিটেশন
ব্যবস্থা। দেখা দেয় বিশুদ্ধ পনির তীব্র সঙ্কট।
চর-বালিয়াতলি গ্রামের ইউপি সদস্য মো: মহসীন জানান, চর বালিয়াতলি বাঁধের
বর্তমানে ১২টি স্পট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অমাবষ্যার জোতে পানি
বাড়লেই বাঁধ ভেসে যাবে। নতুন আরও এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা
দিয়েছে। গেল পূর্ণিমার সময় অস্বাভাবিক জোয়ারে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
বহু পরিবার আতঙ্কে ঘর ছেড়ে ওই ক’দিন রাস্তায় আশ্র নিয়েছিল।
কমিউনিটি বেইজ্ড সংগঠণের (সিবিও) সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহারের দাবি,
ত্রাণ নয়, চর-বালিয়াতলি গ্রামের ভাঙ্গা বাঁধগুলো ভাল করে মেরামত করা হোক।
একই সঙ্গে চর-বালিয়াতলি ও লেমুপাড়া গ্রামে পানির চাপে ভেঙ্গে পড়া
স্লুইজগেট গুলো সংস্কার করা হোক। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশু
হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, এ ইউনিয়নের
রাবনাবাদ পাড়ের দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত রয়েছে। মানুষের
বাড়ি-ঘর, সম্পদ সব অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে।
ধানখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার জানান, দেবপুরের বেড়িবাঁধ
বিধ্বস্ত থাকায় তার ইউনিয়নে বর্তমানে তিন গ্রাম জোয়ারের পানিতে ভাসছে।
এখন আমন চাষাবাদ করলেও ধান পাকার আগে লোনা পানিতে সব নষ্ট হয়ে যাবে।
চম্পাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, দেবপুরের বাঁধ নেই।
প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা দিয়ে ইউনিয়নের অর্ধেক ডুবে যায় জোয়ারের
পানিতে। এমনকি অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট পর্যন্ত ভেঙে একাকার হয়ে গেছে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফ হোসেন জানান,
লালুয়ায় বেড়িবাঁধ করবে পায়রা বন্দর, আর দেবপুরের বেড়িবাঁধ করার জন্য জমি
না পাওয়ায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না।