হবিগঞ্জে বাড়ছে চোখ ওঠা রোগী, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
রাকিব উদ্দিন লস্কর, বিশেষ প্রতিনিধি। মাধবপুর উপজেলা সহ হবিগঞ্জ জেলার প্রায় সর্বত্র সাম্প্রতিক কালে চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস ভাইরাসের প্রকোপ দেখার দিয়েছে।এ রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে এবং স্থাণীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।চিকিৎসায় যথারীতি আরোগ্য লাভও করছেন এসব রোগী।তবে এ নিয়ে আতংকিত হওয়ার মতো আসলে কিছু নেই বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ রোগ হলে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতার অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
চোখ ওঠলে কখনো কখনো এক চোখে অথবা দুই চোখেই জ্বালা করে এবং লাল হয়ে চোখ ফুলে গিয়ে চোখ জ্বলা, চুলকানি, খচখচে ভাব থাকা, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখে বার বার সাদা ময়লা বা পিচুটি আসা, কিছু ক্ষেত্রে চোখে তীব্র ব্যথা এ রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
চিকিৎসকেরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটিকে কনজাংটিভাইটিস বা কনজাংটিভার বলা হয়।
তবে এ সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই বেশি পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
চোখের একেবারে বাইরের স্বচ্ছ অংশটির ডাক্তারি নাম ‘কনজাংকটিভা’। ভাইরাসের সংক্রমণে সেখানে তৈরি হয় প্রদাহ, ফুলে যায় চোখের ছোট ছোট রক্তনালি। ফুলে থাকা রক্তনালিগুলোর কারণেই চোখের রং লালচে হয়ে যায়, যেটাকে চোখ ওঠা বা ‘কনজাংকটিভাইটিস’ বলা হয়।মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন চোখ ওঠা রোগ নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।ডাক্তারের পরামর্শ মতো ক্ষেত্র বিশেষে আই ড্রপ কিংবা আই অয়েন্টমেন্ট এবং সেই সাথে এন্টি হিস্টামিন গ্রহণের মাধ্যমে খুব দ্রুতই এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।আক্রান্ত ব্যক্তিদের সানগ্লাস ব্যবহারের পাশাপাশি রোদে চলাফেরা না করতেও পরামর্শ তাদের।আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩ টায় ছাতিয়াইন বাজারের একটি ফার্মেসিতে বেশ কয়েকজনকে একইসাথে চোখের ড্রপ টেরামাইসিন কিনতে দেখা যায়।এদের মধ্যে বাঘাসুরা ইউনিয়নের সাতপাড়িয়া গ্রামের রহিমা ও ছালেক জানান তাদের পরিবারে একাধিক লোক চোখের রোগে(কনজাংটিভাইটিস) এ আক্রান্ত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ এএইচএম ইশতিয়াক মামুন জানান, প্রতিদিনই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (২০/২২ জন) কনজাংটিভাইটিস এর রোগী চিকিৎসার জন্য আসছেন।তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।তিনি জানান কনজাংটিভাইটিস রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়। রোগীর ব্যবহার্য বস্তু যেমন রুমাল, তোয়ালে, বালিশ, টিস্যু অন্যরা ব্যবহার করলে অন্যরাও এতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া কনজাংটিভাইটিসের জন্য দায়ী ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে যারা থাকে, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কিছুতেই যাওয়া যাবে না বলে ডাঃ ইশতিয়াক জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।
এ রোগে সতর্কতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চোখ ওঠা রোগ হলে, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। ভাইরাসজনিত এ রোগ যার হবে, সে যেন অন্যের সংস্পর্শে না আসে। রোগীর ব্যবহার করা তোয়ালে, বিছানা, বালিশ যেন অন্য কেউ ব্যবহার না করে। বাচ্চাদের চোখ উঠলে, স্কুলের অন্য বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখতে সে যেন কিছু দিন স্কুলে না যায়।তবে আসল কথা হচ্ছে কনজাংটিভাইটিস নিয়ে আতন্কের আসলে কিছু নেই।
এ বিষয়ে কথা হয় হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ নুরুল হকের সাথে। ডাঃ নুরুল হক বলেন,কনজাংটিভাইটিস মূলত ছোঁয়াছে রোগ।একটু সতর্ক থাকলেই এর হাত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।আর রোগ হলে প্রচলিত চিকিৎসায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই সুস্থ হওয়া যায়।এ নিয়ে ভয় বা আতংকের কিছু নেই বলেও তিনি যোগ করেন।