কলাপাড়ায় নিজ জমি বিক্রির টাকায় ১২০০ ফুটের সড়ক নির্মান করলেন কৃষক কামাল ॥
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : কলাপাড়ায় নিজ জমি বিক্রির টাকায় ১২০০ ফুট
দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক নির্মান করেছেন কামাল হোসেন নামের এক কৃষক। নীলগঞ্জ
ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামে প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে স্কেভেটর ও শ্রকিক দ্বারা
তিনি সড়কটি নির্মান করেন। এরফলে ভোগান্তি লাঘোব হয়েছে ওই এলাকার তিনশো
পরিবারের। স্ব-উদ্যেগে করা এ মহতী কাজে এলাকার মানুষের বেশ বাহবা
কুড়িয়েছেন কৃষক কামাল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষই কৃষক। এ
এলাকার কুমিরমারা গ্রামে ওই সড়ক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে
হতো কৃষকসহ সাধারন মানুষের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে আন্ধারমানিক নদীর
জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যেতো এ এলাকা। এরফলে অনাবাদি থাকতো কৃষকের শত একর
জমি। এছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ গর্ভবতী মায়েদের যাতায়াতে ব্যাপক
ভোগান্তি পোহাতে হতো। এসব মানুষের দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে সড়কটি
নির্মানের উদ্যোগ নেয় কৃষক কামাল হোসেন, নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে এ
সড়কটি নির্মান করেন তিনি। ১৪ ফুট প্রস্থ ও ১৪ ফুট উঁচু এ সড়কটি নির্মানে
তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। তার এ কাজে স্থানীয়রাও শ্রমিক হিসেবে
ব্যাপক সহযোগিতা করেছেন।
কুমিরমারা গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন জানায়, আগে এখানে একটি ভেড়ির মতো
(ছোট সড়ক) ছিলো। এখান থেকে একজন মানুষ হাটাচলা করতে খুবই কষ্ট হতো। এছাড়া
জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সবই তলিয়ে থাকতো। আমরা বার বার মেম্বর
চেয়ারম্যানে কাছে ধর্না ধরে এমনকি মানববন্ধন করেও রাস্তাটি নির্মান করাতে
পারিনি। পরে কৃষক কামাল হোসেন এই রাস্তাটি নির্মান করেছেন। আমরা তার জন্য
দোয়া করি। একই এলাকার অপর বাসিন্দা সুলতান মিয়া জানান, আমদের কুমিরমারা
গ্রামে সবচেয়ে চেয়ে সবজি চাষ হয়। এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষক।
দীর্ঘদিন ধরে সড়ক না থাকার কারনে আমাদের সবজি বাজারে পৌছাতে ব্যাপক
ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন এই সড়কটি নির্মানের ফলে আর সমস্যা হবেনা। কামাল
হোসেনের এই মহতী কাজের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।
কৃষক কামাল হোসেন বলেন, গত এক বছর আগে আমি এই ভেড়ি (ছোট সড়ক) দিয়ে
যাচ্ছিলাম। তখন এক গর্ভবতী মাকে একটি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।
ভেড়ির অবস্থা এতটা খারাপ ছিলো যে, ভ্যানটি হঠাৎ বিলের মধ্যে পড়ে যায় এবং
ওই গর্ভবতী মা ওখানে বসেই সন্তান প্রসব করেন। যেটা দেখে আমার খুবই খারাপ
লেগেছে। তখনই আমি নিজ থেকেই পন করি ওই সড়কটি নির্মান করে দিবো। পরে আমার
নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মান করে দেই।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বাবুল মিয়া জানায়, কৃষক কামাল হোসেন সড়ক
নির্মানে যে মহতী কাজ করেছেন তাকে আমি স্বাধুবাদ জানাই এবং ব্যক্তিগত
ভাবে ধন্যবাদ জানাই। তার মতো সমাজের যারা বিত্তবান আছে তাদেরকেও এধরনের
সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।