কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
কুষ্টিয়া পৌর মেয়রের অনিয়ম ও প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির মাধ্যমে পৌরসভার আদায়কৃত অর্থ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলী বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়া অফিস। জানা যায়, ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ পূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আগামী ১৩ মার্চ ২০২৩ তারিখের মধ্যে ৯টি বিষয়ের জবাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়া অফিস। দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম মোড়ল এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌর মেয়র বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছেন। সম্প্রতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে পৌর মেয়রকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ মার্চ দুদকের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিটি গ্রহণ করেছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব মো. কামাল উদ্দিন। অনুসন্ধানের স্বার্থে আগামী ১৩ মার্চ সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র জমা দিতে ইতোমধ্যে মেয়র বরাবর এ চিঠি দেয়া হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম মোড়ল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা কোনো অভিযোগ পেলে সেটির প্রাথমিক তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই এবং অভিযোগের বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য হাইকমান্ডের অনুমতি চেয়ে আবেদন করি। তাদের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। কিছু নথিসহ তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো অনিয়ম এবং অসংগতি পাওয়া গেলে তখন আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাই কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না। কমিশন থেকে নির্দেশ আছে। তদন্তের স্বার্থে যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পৌরকরের টাকা উন্নয়ন খাতে খরচ না করে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম মোড়লকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১৩ মার্চের মধ্যে ২০২২–২৩ অর্থবছরের খাতওয়ারী আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ পৌরসভার আওতাধীন সব দপ্তর ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দেয়া করের তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে দেখা যায়, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত রেকর্ডপত্র আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তা বরাবর জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিঠিতে পৌরসভার পৌরকর নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন ও ম্যানুয়ালের সত্যায়িত কপির পাশাপাশি ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত খাতওয়ারী হিসাব বিবরণী চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে পৌরসভার আওতাধীন ব্যবসা ও ভবনসমূহের ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত পৌরকর নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি ও ধার্যকৃত পৌরকর আদায় রেজিস্টারের সত্যায়িত ছায়ালিপিও জমা দিতে বলা হয়।
ভবন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিআরবি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, লাভলী টাওয়ার, সমবায় টাওয়ার, পরিমল টাওয়ার, ছয় রাস্তার মোড়ের ফটিক টাওয়ার ও খেয়া রেস্টুরেন্টে টাওয়ার, জেলা স্কুল সংগ্ন শাহজাহান টাওয়ার, পুলিশ লাইন সংলগ্ন ফয়সাল টাওয়ার, উডল্যান্ড ও মনির প্লাইউড ফ্যাক্টরি। পৌরসভাধীন আবাসিক হোটেল সমূহেরও ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত পৌরকর নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি ও ধার্যকৃত পৌরকর আদায় রেজিস্টারের সত্যায়িত ছায়ালিপি চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। আবাসিক হোটেল সমূহ হলো- দিশা টাওয়ার, রোজ ভিউ হোটেল, পদ্মা হোটেল, প্রীতম হোটেল, আজমিরি হোটেল, রিভারভি, হোটেল নুর ইন্টারন্যাশনাল, ডাইং ডিভাইন। পৌরসভার অধীনে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ২০১৫-১৬ হতে ২০২১-২২ বছর পর্যন্ত পৌরকর নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি এবং ধার্যকৃত পৌরকর আদায় রেজিস্ট্রারের সত্যায়িত ছায়ালিপি জমা দিতে বলা হয়েছে।
পৌরসভার অধীনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, টিটিসি, পূর্ত অফিস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, ওজোপাডিকো, বিটিসিএল, আরপিটিআই, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, গৃহ সংস্থাপন, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, কলকারখানা পরিদর্শন অফিস, পিটিআই, পাবলিক লাইব্রেরী সহ অন্যান্য সরকারী হোল্ডিংয়ের ২০১৫-১৬ হতে ২০২১অর্থ বছর পর্যন্ত পৌরকর নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ধার্যকৃত পৌরকর আদায় রেজিস্ট্রারের সত্যায়িত ছায়ালিপি জমা দিতে বলা হয় চিঠিতে। এছাড়া পৌরসভার অর্গানোগ্রামের সত্যায়িত ছায়ালিপির সাথে সাথে পৌরসভাটিতে বর্তমানে কর্মরত জনবলের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) তালিকা চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে মেয়র মহোদয় বরাবর চিঠি এসেছে। আমরা তাদের চাওয়া সব ধরনের নথি এবং তথ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরবরাহ করব। তবে চিঠিতে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
মেয়র মো. আনোয়ার আলী বলেন, আমার কাছে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি আসেনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোনো বক্তব্য নেই। যার বিরুদ্ধে এত সব অভিযোগ সেই মেয়র অবশ্য এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র জানেন না, যদিও ২০২২ সালের ৭ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ তদন্ত করে আসছিল দুদক। তিনি এড়িয়ে গেছেন অভিযোগের ব্যাপারে।