কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
কৃতিত্বের সঙ্গে বার এট ল সম্পন্ন করায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুরের আমিনুল ইসলাম মুকুলের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার সুইটি আহমেদকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এলাকাবাসী গণসংবর্ধনা প্রদান করেন। সম্প্রতি দ্য অনারেবল সোসাইটি অব লিঙ্কনস ইন থেকে বাংলাদেশের কৃতি সন্তান সুইটি আহমেদকে বার এট ল এর কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য অভিনন্দন জানান। সেখানে কল টু দ্য বারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বার এট ল এর সনদ তুলে দেন লিঙ্কনস ইনের সভাপতি ও কোষাধক্ষের দায়িত্বে থাকা স্যার জিওফ্রে ভোস।
জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক শিক্ষক আলহাজ্ব মো. সোহরাব হোসেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতির সভাপতি এ্যাড. নুরুল ইসলাম দুলাল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. সাজ্জাদুর রহমান টিটু, কুষ্টিয়া জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এ্যাড. সুধির চন্দ্র শর্মা, উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছানোয়ার হোসেন মোল্লা, ব্যারিস্টার সুইটি আহমেদের মাতা সাবেক শিক্ষিকা শাহিদা বেগম, কুষ্টিয়া জজ কোর্টের নারী ও শিশু আকরাম হোসেন দুলাল, মুজিবুল শেখ, খাতের আলী কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সত্য বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট পান্না, সাবেক মেম্বার সিরাজুল ইসলাম, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা উম্বাদ আলী, আব্দুস সালাম, খোর্দ আইলচারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নওয়াব আলী, স্বস্তিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন, আলামপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাদউর রহমান, আলামপুর মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক জাহাঙ্গীর আলম অরফেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শহিদুজ্জামান টিটু ও সুজন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা ব্যারিস্টার সুইটি আহমেদের জন্য শুভ কামনা করে বলেন, আগামী দিনে অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য তিনি কাজ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সুইটি আহমেদ বলেন, তাকে ঘিরে যে আনন্দঘন অনুষ্ঠানের আয়োজনের করা হয়েছে তার জন্য তিনি বিনীতভাবে আয়োজকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ও উপস্থিত এলাকাবাসী সবাইকে বিনম্র অভিবাদন জানান। তিনি বলেন, পড়াশোনার জন্য ঢাকা ও ইংল্যান্ডসহ দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে লম্বা সময়, কিন্তু সব সময় মন পড়ে থেকেছে এখানে, এটাকেই সম্ভবত নাড়ির টান বলে। নানা প্রতিকূল পরিবেশে এলাকাবাসী তার পরিবারকে আগলে রেখেছেন, নিজেরা অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন, তাদের জন্য মানুষের এই ভালোবাসা তিনি কখনও ভুলবেন না। তিনি জানান, তার স্কুল শিক্ষিকা মা লেখাপড়ার বিষয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করেছেন। বাবা মা দুজনেই চাইতেন তিনি ডাক্তার হয়ে গরিব দুখি মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু তিনি আইন পেশা বেছে নেন, বাবার আগ্রহে তিনি বার এট ল সম্পন্ন করেছেন।
উপস্থিত এলাকাবাসীকে তিনি বলেন, সন্তানের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি বাবা ও মা। তাদের পরামর্শ, সাহস এবং স্নেহ ভালোবাসা পেলেই সন্তান শত বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবে। সন্তান যোগ্য হলে, সফল হলে সব থেকে খুশি বাবা মা হয়। অন্য দিকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অহরহ যা হচ্ছে, খেয়াল করুন, আপনি অনেক সম্পদ করলেন, মিল কারখানা, জমি-বাড়ি এসব বানালেন, কিন্তু আল্লাহ না করুন আপনার সন্তানকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলেন, আপনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, সারা দিন ছুটাছুটি করে যেসব অর্থ সম্পদ ঐ সন্তানের জন্য রেখে যাচ্ছেন, তা ধ্বংস হতে সময় লাগবে না। তিনি অনুরোধ করেন, আজ থেকেই আপনারা সন্তানদের স্বপ্ন দেখাবেন। কষ্ট করে হলেও তাদের উচ্চ শিক্ষা নিতে হবে, মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। তা হলে আপনার কোন সম্পদ না থাকলেও ঐ সুসন্তান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। আপনাদের সন্তানদের মধ্যে কেউ যদি আইন পেশায় আসার জন্য ল পড়তে চায়, তিনি তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন। কেউ ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখলে, তাকে সব রকমের সহযোগিতা করার কথাও জানান।
তিনি বলেন, কাজের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকে। মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় শ্রেষ্ঠ সম্পদ, দোয়া করবেন আমিও যেন আপনাদের এ শ্রেষ্ঠ সম্পদের ভাগিদার হতে পারি। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তার আব্বু এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে সহযোগিতা করেন, পাশে থাকেন। তিনিও যেন আব্বুর মতো সবার আপনজন হতে পারেন, যে কোন প্রয়োজনে এলাকাবাসীর পাশে থাকতে পারেন সে দোয়া কামনা করেন। তিনিও মায়ের মতো শিক্ষক হতে চানি। আইন পেশার পাশাপাশি যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করবেন এবং একই সঙ্গে একটা সময়ে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি যেন মানুষের কল্যানে, মানুষের উপকারে তাদের পাশে থাকতে পারেন, তিনি যেখানেই থাকেন, পৃথিবীর যেখানেই যান, এলাকাবাসীর কন্যা হিসেবে, আপনজন হিসেবে আজীবন থাকতে চান।
সর্বশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের প্রতি, যারা কষ্ট করে এসেছেন, সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।