এম.মুজিবুর রহমান:নবীগঞ্জ ( হবিগঞ্জ) থেকে: ক’দিনের টানা বর্ষণে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে৷
উজানের পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টির ফলে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে৷ এতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছুস্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়- গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টির ফলে ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসার কারনে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বান্দেরবাজার-কসবা সড়ক ডুবে দ্রুত গতিতে পানি প্রবেশ করছে কসবা গ্রাম, কসবা বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর, ফাদুল্লাহ, দুর্গাপুর, মথুরাপুর, হোসেনপুর, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর, পারকুল, উমরপুর, দীঘর ব্রাহ্মণগ্রাম,বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের সোনাপুর , চরগাঁওসহ কয়েকটি গ্রাম, বড় ভাকৈর (পূর্ব), ইনাতগঞ্জের উমরপুর, মোস্তফাপুর, দক্ষিণগ্রাম, পাঠানহাটি, মনসুরপুর, দরবেশপুর, দিঘীরপাড়, নোয়াগাঁও, চন্ডিপুর, প্রজা, লামলীপাড়, আউশকান্দির বনগাঁও, পারকুল গ্রাম পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে।পানি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ রূপ আকার ধারণ করছে বন্যা, মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ। দিশেহারা অসহায় মানুষজন ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়- ইনাতগঞ্জের মোস্তফাপুর পাঠানহাটি গ্রামের পাকা সড়ক, দীঘলবাক গ্রামের পাকাসড়কসহ ১৫-২০ টি পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ইনাতগঞ্জ অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ও পারকুলে অবস্থিত কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র হতে ২-৩ হাত নিচে বর্তমান পানি রয়েছে। তবে দ্রুতহারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসক্ষেত্রে পানি প্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।সকাল তেকে সন্ধা পর্যন্ত সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু, ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল জাহান চৌধুরী দিঘলবাক ইউনিয়নে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বানবাসী মানুষের মধ্যে এমপি ত্রান বিতরন করেন।দিঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া বলেন- বন্যার পানি দীঘলবাকের প্রতিটি গ্রামে প্রবেশ করেছে। বন্যার পানি সড়ক ডুবে দ্রুতহারে প্রবেশ করছে। পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মাসুক আলী বলেন, নবীগঞ্জে প্রতিটি গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে অনেক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন- পানি দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ, আউশকান্দি ইউনিয়নে প্রবেশ করছে। আমরা বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের পাশে আছি। তিনি এসব এলাকাকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানান।
নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছি, উজানের বৃষ্টি বন্ধ না হলে আমাদের উপজেলার অবস্থা আরও ভয়াবহের দিকে দাবিত হবে। তিনি সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের বানবাসী মানুষের সাহায্য এগিয়ে আসার আহবান জানান।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাশ অনুপ জানান, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক শতাধিক পরিবার অবস্থান নিয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। হবিগঞ্জ-১ আসনের (নবীগঞ্জ- বাহুবলের) সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, আকষ্মিক এ বন্যায় মানুষ অসহায় অবস্থায় আছেন। খবর পেয়ে তাদের পাশে দারিয়েছি। দিঘলবাকে বানবাসী মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরন করেছি।সেটা অব্যাহত থাকবে।