ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রাহক হাটহাজারীতে ঘরে ঘরে ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল

প্রকাশিত: ৯:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২০

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী থেকে:
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় লকডাউনের মধ্যে ঘরে ঘরে ভুতরে বিলের কাগজ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে হাটহাজারী উপজেলাতে। যা দেখে গ্রাহকের মুখ হতাশার মতো অবস্থা। ১০-১২ গুণ বেশি বিল এসেছে অনেকের। ২৩০ টাকার বিদ্যুৎ বিল হয়েছে ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর ২হাজার টাকার বিল হয়েছে ১০থেকে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত। গ্রাহকদের অভিযোগ, মিটার না দেখে বিল করলেও পূর্বের রেকর্ড দেখে বিল করলে এতোটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতো না। এর নেপথ্যেও কারসাজি আছে। কোনো কোনো এলাকায় অতিরিক্ত বিল কাটছাঁট করার জন্য মিটার রিডাররা উপরি দাবি করছে। ভূতুড়ে বিল নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ এতোটাই বেড়েছে যে,গ্রাহকরা এ নিয়ে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও সুত্রে জানা যায়।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বাধ্যবাধকতার ফলে গ্রাহক ও বিদ্যুৎ কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের আগের মাসের বা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের বিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাক্বলিত বিল প্রদান করা হচ্ছে বলে দাবি পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের। মিটার রিডিংয়ে এত বেশী ইউনিট উঠানো হচ্ছে যা পূর্বের চেয়েও দশ বারো গুন বেশী। গ্রামাঞ্চলের পল্লীবিদ্যুতের ভুতুরে বিল এত বাড়তি যা পরিশোধ করতে দিনমজুর দরিদ্র পরিবাররা হিমশিম খাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় প্রায় তিনমাস ঘরবন্ধী সকলে।নেই কোন অায়ের উৎস।এরই মধ্যে ধরিয়ে দিচ্ছে ভুতুরে বিদ্যুৎ বিলগুলো।যেগুলো পরিশোধ করতে অসম্ভব বলে দাবি করেন অনেক গ্রাহক।

এদিকে, ভুক্তভোগি গ্রাহকদের প্রশ্ন, মিটার রিডাররা কখনোই বাসায় গিয়ে বিল করে না। ফলে সমন্বয় কীভাবে করা হবে সেটা স্পষ্ট না। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারি-কর্মকর্তাদের ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ তাদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহকের সঙ্গে তারা দুর্ব্যবহার করে থাকেন। আবার কোনো কোনো এলাকার মিটার রিডাররা প্রদত্ত বিল পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের চাপ দিচ্ছে। এমনকি লাইন কাটা হবে, জরিমানা হবে বলেও ভয় দেখাচ্ছে তারা।

পৌরসভার অাদর্শগ্রাম এলাকার কয়েকজন গ্রাহক জানান,পল্লী বিদ্যুতের প্রতি মাসে ২০০থেকে ৩০০টাকা বিল অাসে।কিন্তু করোনায় বিদ্যুৎ বিল ৩মাস দিতে না পারায় সে সুযোগে ১০গুন বিল ধরিয়ে দিয়ে মিটার রিডার নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।ওই গ্রাহকগুলো বলেন, আমরা বিদ্যুৎ অফিসে এই ভূতুড়ে বিলের কথা জানিয়েছি। তারা উল্টো প্রশ্ন করে- বিল নিয়ে তো অন্য কেউ প্রশ্ন তুললো না। আপনারা যেটুকো ব্যবহার করেছেন সেই পরিমান বিল অাসছে। পুরো হাটহাজারী উপজেলাতে বিদ্যুতের বিল নিয়ে ঘরে ঘরেই সমস্যা। কারো বাড়িতে সঠিক বিল আসেনি। বিদ্যুৎ বিভাগ ইচ্ছে করেই এই খামখেয়ালি করেছে। তাদের কাছে পূর্ববর্তি বিলের রেকর্ড আছে। সেই রেকর্ড দেখে বিল করলে এমনটা হতো না। এর নেপথ্যে তাই কোনো অনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন গ্রাহকরা।
করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে তিনমাস সরকার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসের আবাসিক গ্রাহকের বিদ্যুতের বিল নেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তিনমাস পর এই ১০-১২ গুন বিল আসায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। প্রায় এলাকায় এই ভুতুড়ে বিলের শিকার হয়েছেন তারা।

এদিকে প্রতিদিন পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বিল নিয়ে গ্রাহকদের বাকবিতণ্ডতা সৃৃষ্টি হয়। গ্রাহকদের সাথে কারা বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে কথা বলতেও নারাজ। শুধু বলে যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছ ততটুকু বিল আসছে।সেগুলো পরিশোধ করতে হবে। তবে গ্রাহকদের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের দায়িত্বরত প্রকৌশলীর সাক্ষাত করতে চাইলেও সম্ভব হয়নি বলেও গ্রাহকরা ও প্রায় তিন মাসের বেশী কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ম অায়ের মানুষগুলো কি ভাবে এত বিল পরিশোধ করবে এমন অভিযোগ গ্রাহকদের।

হাটহাজারীর দুই বিতরণ সংস্থা বিউবো হাটহাজারী শাখা এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৩ সমিতির গ্রাহকের একই অবস্থা।বিদ্যুৎ বিল নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ দ্রুত
নিষ্পত্তি করার দাবি জানান গ্রাহকরা।
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে পৌরসভার অালমপুর,চন্দ্রপুর,অাদর্শগ্রাম সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের একাধিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।তারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ মাইকিং করে বলেন,বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে ও অাইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলেও চাপ প্রয়োগ করেন।এতে নিম্ন অায়ের মানুষরা হতাশা হয়ে পড়েছে। কি ভাবে এত বিল পরিশোধ করবে। না করলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে সব মিলিয়ে মহা বিপদে হাটহাজারীর বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।
বিষয়টি নিয়ে দুই বিদ্যুৎ সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি প্রতিবেদকের।




error: Content is protected !!