শত শত বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে আছে লক্ষ্মীপুরের দালালবাজার জমিদারবাড়ি। জমিদার বাড়িটিতে ঢুকতে হাতের ডান পাশে রয়েছে কর্মচারীদের ঘর। এখানে এখন ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলছে। মূল গেটটি না থাকলে কিছুদূর এগোতে চোখে পড়বে ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি বেশ কয়েকটি কামরা।
ডান দিকে রয়েছে পুকুর ও শানবাঁধানো ঘাটলা। ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে বিরাট আকারে বিম ও ওপরে লোহার তৈরি থাম দিয়ে তৈরি জলসা ঘর। আর বাঁ পাশে রয়েছে হলরুম। জলসা-ঘর লাগোয়া তিনটি বিভিন্ন আকৃতির কামরা। সামনের কামরাগুলো ছিল অতিথিদের জন্য। সামান্য ভেতরে হাতের ডানে একটি স্বতন্ত্র কামরা।
পাশের ভবনের নিচেই রয়েছে কয়েকটি গুহামুখ। এ গুহাগুলো ব্যবহার করা হতো প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে। একটু ভেতরে গেলেই সামনে পড়ে রানীর বাসস্থান। দোতলা এ ভবনের নিচে রয়েছে গুপ্ত-কুঠরি আর ওপরে রয়েছে বিশাল খোলা জায়গা। সামনেই রয়েছে আরও একটি ভবন। যেখানে বিভিন্ন মালামাল রাখা হতো।
মনোরম পরিবেশ ও নীরব জায়গায় এত চমৎকার নির্মাণশৈলী দেখে প্রায় ৪০০ বছর আগের রাজা ও জমিদারদের চিন্তা-চেতনার প্রশংসা করতে হয়। ভবনের চারপাশে রয়েছে নানা ধরনের ফলের গাছ। জানা যায়, ১৮৫০ এর দশকে দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌরকিশোর ও তার উত্তরসূরি নরেন্দ্র কিশোর রায় ৭.৮৬ একর জমিতে এটি নির্মাণ করেন।
জমিদারবাড়ির ভেতরে কারুকার্য খচিত ও মার্বেল পাথর দিয়ে বিশাল বিশাল দালানকোঠা । লক্ষ্মীনারায়ণ নামে একজন ব্যক্তি কাপড়ের ব্যবসা করার উদ্দেশ্যেই দালালবাজারে আসেন। তার পুত্র ব্রজবল্লভ স্বীয় দক্ষতাগুণে ব্যবসার প্রসার ঘটান। ব্রজবল্লভের পুত্র গৌরকিশোর কলকাতায় লেখাপড়ার সুবাদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহচর্যে আসেন এবং জমিদারি খরিদ করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে তাদের ছিল এজেন্ট ব্যবসা। আর এ কারণে স্থানীয় লোকজন তাদের গোপনে দালাল বলে ডাকত। পরিত্যক্ত জমিদারবাড়িটির রাজগেট, রাজপ্রাসাদ, জমিদার প্রাসাদ, অন্দরমহল, বাড়ির প্রাচীর, শানবাঁধানো ঘাট, নাটমন্দির, পূজামণ্ডপ, বিরাট লোহার সিন্দুক, কয়েক টন লোহার বিম দেখার জন্য অনেক অনেক পযর্টক আসেন। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন কার্যকর হওয়ার পর ১৯৫৮ সালে সরকার বাহাদুর জমিদারবাড়ি কাছারি এলাকায় দালালবাজার তফসিল অফিস স্থাপন করে। দালালবাজার এন কে উচ্চ বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, মন্দির এ পরিবারের অবদান। এক বেলাতেই পুরো বাড়িটি ঘুড়ে দেখা সম্ভব।
যাবেন যেভাবে
ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা এক্সপ্রেস, রয়েল কোচ, ইকোনো সার্ভিস (এসি, নন-এসি) গাড়িতে করে সাড়ে ৪ ঘণ্টার পথ লক্ষ্মীপুর। সকাল ৬টায় সায়েদাবাদ থেকে রওনা হয়ে লক্ষ্মীপুর শহরে না নেমে গাড়ির সুপারভাইজারকে দালালবাজার বাস টার্মিনালে নামিয়ে দেওয়ার কথা বললেই হবে। দালালবাজার নেমে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবে দালালবাজার জমিদারবাড়িটি। বাস টার্মিনাল থেকে হাঁটাপথে মাত্র দুই মিনিটের রাস্তা।
থাকবেন যেখানে
দুপুরের খাবারের জন্য দালালবাজারে কয়েকটি রেস্তোরা রয়েছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর রয়েছে খাবার হোটেল ক্যাফে কুইন, রাঁধুনি, মোহাম্মদিয়া, নুরজাহান ও মদিনা রেস্তোরা । এ ছাড়া বিভিন্ন চাইনিজ রেস্তোরাঁও রয়েছে। যাদের হাতে অফুরন্ত সময় রয়েছে বা একদিন থাকতে চান তাহলে আগে থেকে লক্ষ্মীপুর সার্কিট হাউজ বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন। শহরের ভেতরে রয়েছে আধুনিক মানের সোনারবাংলা, মুক্তিযোদ্ধা গেস্ট হাউজ বা সেন্টমার্টিন রেস্ট হাউজ।