কলাপাড়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বললেন – দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে আমরা আলো পৌছে দিলাম ॥
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ কলাপাড়ার ধানখালীতে সোমবার ২১ মার্চ
দুপুরে ১৩২০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক পায়রা তাপ
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন – ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে জাতীর পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্ম গ্রহন করেন, যাঁর জন্ম না হলে আমরা কোনদিন
স্বাধীনতা পেতাম না, জাতি হিসেবে মর্যাদা পেতাম না, আর এ মার্চ মাসের
২৬মার্চ তিঁনি স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানী সামরিক জান্তাা
২৫শে মার্চ যে গনহত্যা শুরু করে তার পরপরই তিঁনি স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।
তাই এ মার্চ মাসেই আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আজ আলো
জ্বালতে পারলাম। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে
হেলিকপ্টার যোগে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে এসে পৌঁছালে রামনাবাদ
চ্যানেলে ২২০ টি বর্নাঢ্য পাল তোল নৌকা পতাকা নাড়িয়ে ও সঙ্গীত পরিবেশন
করে আকর্ষনীয় ডিসপ্লের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়। প্রতিটি
নৌকায় ৫ জন জেলে রঙীন পোষাকে সজ্জিত হয়ে এ ডিসপ্লেতে অংশ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে বসে জেলেদের এ ডিসপ্লেতে
মুগ্ধ হয়ে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে তাঁকে ছবি তুলতে দেখা গেছে। এছাড়া ১৩২০
মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ
খাতের অগ্রগতির উপর বিশেষ প্রমান্যচিত্র উপভোগ করেন। পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র
উদ্বোধন ও দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষনার পর পর রঙীন আতশবাজিতে বর্নিল
হয়ে ওঠে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার রৌদ্রজ্জ্বল নীল
আকাশ।
উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো
বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগষ্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল জাতীর পিতা
বঙ্গবন্ধুকে। স্বজন হারা, দেশ হারা হয়ে রিফিউজি হয়ে থাকতে হয়েছিল বিদেশের
মাটিতে। বেশ সময় লেগেছিল এ আঘাত সহ্য করতে। ৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন
করি। তখন দেশে ছিল বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, সামান্য কিছু লোক বিদ্যুৎ
পায়। গ্রামে গ্রামে তো বিদ্যু নাই। আমরা উদ্দোগ নিলাম। শুধু সরকারই না,
বেসরকারী খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছাঁবো। যেখানে
মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম, পাঁচ বছরের মধ্যেই আমরা ৪৩০০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলাম। এরপর আবার ২০০৯ সালে সরকার গঠনের
পর ২০২২ পর্যন্ত এই ১৩ বছর এক টানা গনতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে
পেরেছি বলেই দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল
প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের
১৩তম দেশ। এশিয়ায় সপ্তম ও দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ
ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি মানুষ ও
ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবেনা। রাঙ্গাবালী, নিঝুম দ্বীপ, স্বন্দীপ এলাকায় নদীর
তলদেশ থেকে আমরা সাব মেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি।
এসময় বিদ্যুত ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপির
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার
কোম্পানী লিমিটেড (বিপিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদ আলম,
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চীনের রাষ্ট্রদূত লে চিং, প্রধানমন্ত্রীর
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পাদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই- ইলাহী
চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো: হাবিবুর রহমান প্রমূখ। এসময়
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সিনিয়র সচিব
বৃন্দ, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয়
নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠান
স্থলে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না
ন্যাশনাল মেশিনারি ইমর্পোট অ্যান্ড এক্সর্পোট করপোরশনের (সিএমসি)’র
মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে চুক্তি স্বাক্ষর
হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কলাপাড়ার ধানখালীতে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ
কেন্দ্র নির্মানের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। নির্মান কাজ শুরুর পর ২০২০ সালের ১৫ মে প্রথম ইউনিটের ৬৬০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে দিতে সক্ষম হয়
(বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড) বিসিপিসিএল। পরে ওই বছরের ৮
ডিসেম্বর আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। কিন্তু গোপালগঞ্জ
সাবষ্টেশনের ধারন ক্ষমতা কম থাকায় এবং গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমিন বাজার
পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ এখন পর্যন্ত সরবারহ করতে পারছেনা এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। তবে এ
বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে পুরো ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে দিতে
সক্ষম হবে এ পাওয়ার প্লান্টটি। ১ হাজার একর জমির উপর নির্মিত এ বিদ্যুৎ
কেন্দ্রটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে ২.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। প্রতিদিন এ কেন্দ্র
থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজন হবে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা।