কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : কুয়াকাটা সৈকতে রমজান মাসে অবৈধ স্থাপনা
নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই দিকে পাকা আধা-সেমিপাকা
অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জোট বেধেছে সৈকতের মালিকানা দাবীদাররা। সৈকতের
মালিকানা দাবীদার সাজেদুল ইসলাম হিরো, কেএম শাহজালাল গংরা পরিবেশে
প্রতিবেশ বিনষ্ট করে ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা বীরদর্পে নির্মাণ করছে। সৈকত
এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে পৌরসভা, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমোদন নেয়ার
নিয়ম থাকলেও এরা কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে
ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
উল্টো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে গিয়ে তোপের মুখে পরতে হয়েছে ভূমি
প্রশাসনকে। হুমকি দিচ্ছে দখলদাররা। আদালতের নিষেধাজ্ঞার ধুয়ো তুলে সরকার
পক্ষ সৈকতের বিরোধীয় ভূমিতে প্রবেশ কিংবা হস্তক্ষেপের এখতিয়ার নেই এমন
হুমকি ধামকি দিচ্ছে দখলদাররা। অথচ দখলদাররা পর্যটনের পরিবেশ প্রতিবেশের
তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত পাকা,আধাপাকা মার্কেট, আবাসিক হোটেল,খাবার
হোটেল ও পর্যটন নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে আসলেও ব্যবস্থা
নিতে পারছে না জেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। এতে কুয়াকাটা
সমুদ্র সৈকত এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এসব স্থাপনার
বর্জ্যমল-মুত্র সমুদ্রের পানিতে ফেলা হচ্ছে। খোলা পায়খানা ও
পয়ঃনিস্কাশনের ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল পর্যটকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা চৌরাস্তার বাহিরে সমুদ্র সৈকত লাগোয়া
অর্ধ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সৈকতের এসব জমি জেলা প্রশাসন
তাদের দাবি করে কয়েকবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও মামলা জটিলতায় বার বার
ব্যর্থ হচ্ছে। সৈকতের মালিকানা দাবী করে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে
ভোগদখলকারীগন। কাগজপত্রের জোর না থাকলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞাই দখলদারদের
একমাত্র সম্ভল। সৈকত এলাকার এসব জমির মালিকানা দাবী নিয়ে সরকার বনাম
দখলদারদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলে আসলেও কোন সুরাহায় যেতে পারছে না
জেলা প্রশাসন। সমুদ্র আইন অনুযায়ী সৈকতের জমির মালিকানা সরকারের এমন আইন
থাকলেও তা শুধু কাগুজে আইন।বাস্তবতায় ভিন্ন।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাহে রমজান শুরু হতে না হতেই সরদার
মার্কেটের নামে এঙ্গেল দিয়ে তিনতলা দোকান ও আবাসিক হোটেল নির্মাণ করছে
সাজেদুল ইসলাম হিরো। যা উপজেলা প্রশাসন অবগত রয়েছে। অপরদিকে আবাসিক হোটেল
সী কুইন কতৃপক্ষ নতুন করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছিলো। খবর পেয়ে
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
এসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গুড়িয়ে দেন নির্মাণাধীন অবৈধ স্থাপনা।
একদিকে উচ্ছেদের উদ্যোগ, অন্যদিকে একাধিক নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তোলা
হচ্ছে। পরিবেশ আইনবিধ সমিতি (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন
বায়েন বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটকদের
আগমন ঘটে। সেখানে ঝুঁকিপুর্ন ভবন নির্মাণ করা বেআইনি। তিনি আরো বলেন
সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করে পর্যটনের পরিবেশ সৃষ্টি করার নির্দেশনা থাকলেও
দখলদাররা প্রতিনিয়ত আরো দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এবিষয়ে নির্মাণাধীন সরদার মার্কেটের দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা নিপু (৩০)
দম্ভোক্তি করে জানায়, আপনারা যা পারেন লেখেন। আমরা আমাদের কাজ করবো। এ
ব্যাপারে নির্মাণাধীন সরদার মার্কেটের মালিক সাজেদুল ইসলাম হিরো এর মুঠো
ফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সমুদ্র সৈকত দখল
করে ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা নির্মাণে নিষেধ কিংবা বাধা দিতে গেলে হুমকি
দিচ্ছে দখলদাররা। এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত রয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সৈকতের
পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা এবং দখল রোধে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠক হয়েছে।
কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ নির্মাণ করে থাকলে তার বিরক্ত ব্যবস্থা নেয়া
হবে। ইতোমধ্যে একটি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে।