চার ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত কললিষ্ট ফাঁসের হোতা পাবনা আমিনপুর থানার বিতর্কিত ওসি প্রত্যাহার, মিষ্টি বিতরণ

প্রকাশিত: ৮:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২০

আলাউদ্দিন হোসেন,পাবনা: টাকার বিনিময়ে বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার চার ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত কললিষ্ট ফাঁস করে প্রতিপক্ষের কাছে হস্তান্তরের হোতা পাবনার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাইনুদ্দিনকে অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওসি প্রত্যাহারের ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে। রোববার (০৯ আগস্ট) সকালে পাবনা পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম ওসি মাইনুদ্দিনকে প্রত্যাহার করে পাবনা পুলিশ লাইনসে সংযুক্তির আদেশ দেন। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার মিলি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুত্র জানায়, ওসি মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে বেড়া উপজেলার চার ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কলরেকর্ড ফাঁস করে বেড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের অব্যহতিপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল বাতেন ও পাবনা ২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের হাতে তুলে দেয়া, ঘুষ নিয়ে ভিজিডি কার্ডের চাল চুরি অভিযোগে অভিযুক্ত ঢালারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কোরবান আলীর পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া, চরমপন্থী ও সর্বহারা পার্টির সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়া, কাজীরহাট ও নগরবাড়ী ঘাটে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার জানান, রোববার সকালে ওসি মাইনুদ্দিনকে অব্যহতির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে, ওসি মাইনুদ্দিনকে পাবনা পুলিশ লাইনসে সংযুক্তির কথা নিশ্চিত করলেও অব্যহতির সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে রাজি হননি তিনি।
এর আগে, ওসি এস এম মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতা চার ইউপি চেয়ারম্যানের তিন মাসের ফোনালাপের কললিস্ট অর্থের বিনিময়ে ফাঁসের অভিযোগ করেন পাবনার বেড়া উপজেলার জাতসাখিনী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু, মাসুমদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরোজ হোসেন,নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এম এ রফিকুল্লাহ এবং রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম উজ্জল।
এমন অভিযোগ তুলে গত ২ জুন তারা স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও পাবনার জেলা প্রশাসকের কাছে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে লিখিত আবেদন জানান। অভিযোগ তদন্তে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসকে (বর্তমানে ময়মনসিংহ পিবিআই এর পুলিশ সুপার) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও করা হয়। তবে, পরবর্তীতে সে তদন্ত প্রতিবেদন বিস্তারিত প্রকাশ করেনি জেলা পুলিশ।
এছাড়া, গত ১৩ এপ্রিল পাবনার ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলী ২২৯ বস্তা ভিজিডি চাল চুরির অভিযোগে আটক হলেও,অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের পক্ষে ঘুষের বিনিময়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ ওঠে আমিনপুর থানার ওসি এস এম মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে।
জিজ্ঞাসাবাদে চাল চুরির বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় র‌্যাব-১২ ডিএডি মো. সোহরাব আলী বাদী হয়ে ওই রাতেই আমিনপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে, অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে, গত ১৯ মে চাঞ্চল্যকর এই মামলাকে ‘তথ্যগত’ ভুল দাবি করে র‌্যাবের অভিযোগকে অসত্য বলে কোরবান আলী সরদারকে অব্যাহতি দিয়ে তড়িঘড়ি করে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আমিনপুর থানা পুলিশ। ওসি মাইনুদ্দিন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কোরবান আলীকে খালাস দেয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশও করেন। পুলিশের এমন তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে অভিযানের সত্যতার বিষয়ে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপনের কথা জানান র‌্যাব ১২ এ কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল খায়রুল ইসলাম। র‌্যাব পুলিশের এমন পরস্পর বিরোধী অবস্থানের বিষয়ে সে সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ওসি মাইনুদ্দিন বহাল তবিয়তেই ছিলেন।
রুপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম উľল জানান, দীর্ঘ দুইমাসেও ওসি মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়নি জেলা পুলিশ। নিজের ক্ষমতার দম্ভোক্তি করে কিছুই হবেনা বলে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করেন। কাজীরহাট ঘাটে চাঁদার টাকা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও ওঠে নৌ পরিবহন ব্যবসাও বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। রোববার এই বিতর্কিত ওসির অব্যহতির খবরে স্থানীয়রা মিষ্টিও বিতরণ করে।
সম্প্রতি সারাদেশে পুলিশের বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় তাকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র।
তবে, বিষয়টি স্পর্শকাতর ও পুলিশের অভ্যন্তরীন বিষয় উল্লেখ করে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের উর্ধতন তন কোন কর্মকর্তা।




error: Content is protected !!