নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : বহুগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি ফল ড্রাগন এবার হবিগঞ্জে চাষ হচ্ছে। জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল বলে পরিচিত দিনারপুর পরগনার এক নিভৃত পল্লীতে চাষ হচ্ছে বিদেশি এই ফলটির। আর প্রথম পর্যায়েই সফলতার মুখ দেখছেন এর উদ্যোক্তা। এমনকি তার এই সফলতা দেখে এলাকার অন্যান্য যুবকরাও আগ্রহী হচ্ছেন এই ফল চাষে। আর কৃষি বিভাগ মনে করছে- অল্প সময় ও পুঁজিতে ড্রাগন ফল চাষ করে বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিশাল সুযোগ রয়েছে।
প্রায় ১ বছর আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ড্রাগন চাষের পরিকল্পনা করেন ববানি চা বাগানের মালিক মশিউর রহমান। জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা এলাকায় অবস্থিত ববানি চা বাগানের প্রায় ১ একর জায়গা পরিষ্কার করে আমেরিকান এই ফলটির চাষ শুরু করেন তিনি।
বাগান ম্যানেজার বিনয় চন্দ্র বর্মন জানান, ড্রাগন ফল চাষ করতে তেমন পুঁজির প্রয়োজন হয় না। অল্প পুঁজিতে ভালো লাভের সম্ভাবনাময় একটি খাত ড্রাগন চাষ। ১ একর জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য প্রথমে সিমেন্ট দিয়ে প্রায় ৫শ পিলার তৈরি করেন। পরে কিছু দূর দূর সাড়ি করে পিলারগুলোকে দাঁড় করিয়ে ১টি পিলারের চারপাশে চারটি করে ড্রাগনের চারা রোপণ করেন। এভাবে প্রায় ২ হাজার চারা রোপণ করেন বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা।
প্রথম মৌসুমেই দেড় লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করা হয়েছে ওই বাগানটি থেকে। এখন পরিচর্যা খরচ ছাড়া কোন ব্যয় না থাকায় সামনে আরও ৩ গুণ বেশি ফল বিক্রির আশা করছেন তারা।
পুষ্টিবিদদের মতে, ড্রাগন মূলত সেন্ট্রাল আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল। ড্রাগন ফল দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। পাতাবিহীন এই ফলটি দেখতে ডিম্বাকার ও লাল রঙের। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার রয়েছে। জুস তৈরির জন্যও ফলটি অত্যন্ত উপযোগী। এ ফলের কালো বীজে থাকে ল্যাক্সেটিভ ও পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা হজমে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের সহায়ক। এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে বলে ডায়েট করার সময় এটি খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তবে ড্রাগন ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ঠিক রাখার জন্য সাধারণত এটি কাঁচা অবস্থাতেই খেতে হয়।
এদিকে, এলাকার আরও অনেক যুবকরা এখন ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তারা প্রায়ই কৃষি অফিসে ড্রাগন চাষের জন্য পরামর্শ নিতে যান। এতে নবীগঞ্জ এলাকায় ড্র্রাগন চাষের বিপ্লব ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম বলেন- ‘অল্প পুঁজিতে এই ফলটি চাষ করা যায়। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এই ফলটি চাষে যুগান্তকারী সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘প্রায়ই অফিসে অনেক যুবকরা ড্রান ফল চাষের পরামর্শ নিতে আসেন। এছাড়া পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় কোন এক সময় নবীগঞ্জে ড্রাগন চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে’।
নবীগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে ড্রাগন ফল চাষের খোঁজ খবর নিতে সরেজমিনে আসে কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খাঁন। তিনি মনে করেন আমাদের দেশে ড্রগন ফল সম্ভাবনাময় একটি ফল। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা রাখবে এবং ফলটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। অনেক কম শ্রমে বিদেশি ফলটি চাষ করা হয়। অন্য ফসলের তুলনায় এই ফল চাষে ব্যয় কম আয় বেশি।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খাঁন বলেন, ‘শিক্ষিত বেকাররা চাকরির পেছনে না ছুটে বসতবাড়ির আশপাশে ড্রাগন ফল চাষ করতে পারেন। এই ফল চাষে বিশাল সফলতার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে সর্বাত্তক সহযোগিতা করা হবে’।
তিনি বলেন, ‘যেসব জমিপূর্ণ সূর্যলোক পায়। বর্ষায় পানি উঠে না বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে না- এমন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষ করা সহজ। বাগান করার মাত্র নয় মাসের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে বছরে ৮০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়’।