নোয়াখালী বসুরহাটে সংঘর্ষ: ৯৮ জনের নামে মামলা

প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২১

মোঃইব্রাহিম নোয়াখালী প্রতিনিধি।

নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে।
পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা ও হামলার ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় বুধবার দুপুর দেড়টায় মামলাটি করেন উপপরিদর্শক জাকির হোসেন। আসামি করা হয়েছে ৯৮ জনের নামসহ ২৪৮ জনকে।কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।এর আগে বুধবার সকালে সংঘর্ষের ঘটনায় আটক করা হয়েছে ২৮ জনকে। তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান ওসি।সংঘর্ষে একজন নিহতের পর এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা চলছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউল হক মীর জানান, সার্বিক পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। উপজেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে মঙ্গলবার রাতে বসুরহাটের নবনির্বাচিত পৌর মেয়র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা কাদের ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৩ জন ও আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন।
বসুরহাটে গুলিতে নিহত মো. আলাউদ্দিন যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। মিজানুর রহমান বাদল তাকে নিজের কর্মী দাবি করলেও অতীতে তাকে কাদের মির্জার সঙ্গেই দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বসুরহাট পৌর এলাকায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছেন কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও জিয়াউল হক মীর।গোলাগুলির সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই মেয়র মির্জা কাদের পৌরসভা কার্যালয়েই অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মির্জা কাদের ও মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দফায় দফায় সংঘর্ষের পর পৌর চত্বরে এ ঘটনা ঘটল।এই দুই পক্ষের সংঘর্ষেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির। সে ঘটনার তিন সপ্তাহ পার না হতেই রক্তাক্ত হলো বসুরহাট।মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় গুলিবিদ্ধদের মধ্যে আছেন মো. রাজিব, মাঈন উদ্দিন, শাহ আলম, আলাউদ্দিন, জাকির হোসেন হৃদয়, দেলোয়ার হোসেন, সোহেল, শাহাদাত হোসেন, আরাফাত হোসেন ও বেলাল হোসেন সেলিম।
গুলিবিদ্ধ ১৩ জনকে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন হৃদয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন আবাসিক চিকিৎসক আব্দুল আজিম।তিনি জানান, যে ব্যক্তি মারা গেছেন তার নাম আলাউদ্দিন। তাকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসুরহাটে সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। সংঘর্ষে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিসহ আহত হন অন্তত ২৫ জন।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেয়র মির্জা কাদের এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।রাত ৮টা পর্যন্ত বসুরহাট পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই পক্ষই পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি দোকান ও অটোরিকশা।স্থানীয় লোকজন আরও জানান, সংঘর্ষের সময় গুলির ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হলে সংঘর্ষ থামে। এরপর মির্জা কাদেরের সমর্থকরা অবস্থান নেন পৌরসভা ফটকে; আর বাদলের সমর্থকরা অবস্থান নেন ১০০ গজ দূরে রুপালি চত্বরে। রাত ১০টার দিকে বাদলের সমর্থকরা গুলি করতে করতে পৌরসভার দিকে এগিয়ে যান।
এ সময় মির্জা কাদেরের সমর্থকরাও পাল্টা গুলি চালান। একপর্যায়ে পিছু হটে পৌরসভার ভেতরে অবস্থান নেন মির্জা কাদেরের সমর্থকরা। তখনও পাল্টাপাল্টি গুলি চলছিল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খিজির হায়াত খানের ওপর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার লোকজনের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রুপালি চত্বরে প্রতিবাদ সভা করে আওয়ামী লীগের একাংশ (মিজানুর রহমান বাদল ও তার অনুসারীরা)সভা চলার সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার পশ্চিম পাশের সড়কের মাকসুদা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে হামলার চেষ্টা চালায় মির্জা কাদেরের সমর্থকরা। এ সময় উভয়পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।




error: Content is protected !!