বাগেরহাটে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত,ভেসে গেছে মৎস্য ঘের

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০

মোঃমাসুদ পারভেজ,বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ-

বাগেরহাটে সপ্তাহ ধরে অতিবর্ষনে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাগেরহাট জেলা শহরের প্রধান বাজার,মোরেলগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও সড়ক ডুবে গেছে পানিতে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মৎস্য ঘেরের মাছ।নষ্ট হয়েছে চাষীদের সবজি ক্ষেত। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৎস্য ও সবজি চাষীরা। অনেকের বাড়ি ঘরেও পানি উঠে গেছে।রান্নাও বন্ধ রয়েছে অনেকের। তবে সঠিক কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেননি মৎস্য ও কৃষি বিভাগ।

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ,শরণখোলা,মোংলা,রামপাল,চিতলমারী,কচুয়া,ফকিরহাট,সদর উপজেলার বিপুল পরিমান মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।মাঠের ঘেরগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে একাকার হয়ে পড়েছে। মাছের ঘের থেকে পানির সাথে মাছ বের হয়ে বিভিন্ন নদী ও খালে চলে যাচ্ছে।এতে চাষীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।ইতিপূর্বে এ অঞ্চলের মানুষের সুপারসাইক্লোন আম্পান ও জোয়ারের পানিতে চিংড়ি ও মাছের অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে।এখন অতিবর্ষনে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৎস্য ও সবজি চাষীরা চরম সঙ্কট ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার শেখ আতিয়ার রহমান ও শেখ লিটন বলেন,পানিতে মাছ তো গেছেই। বিভিন্ন সবজি গাছও মরে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে গাছের গোরায় পানি জমে শিকর পচে গেছে প্রায়। এখন রোদ উঠলেই মারা যাবে সবজি গাছগুলো।

চিতলমারী উপজেলার ঘের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, আমি ৫ একর জায়গা অন্যের জমি লিজ নিয়ে ঘের করি ও ঘেরের পাশে সবজি চাষ করি। যা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। কয়েকদিন ধরে অতি বৃষ্টির কারনে আমার ঘের পানিতে ডুবে গেছে। চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে।

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ঘষিয়াখালী গ্রামের পলাশ শরিফ বলেন,২২ বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে মাছ চাষ করেছিলাম। পানিতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। কীভাবে দেনা শোধ করব জানিনা।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ইউনুস শেখ বলেন,পোনা ছাড়ার কিছুদিন পরেই আম্পানের আঘাতে পানিতে তলিয়ে যায় আমাদের ঘের।ভেসে যায় মাছ। আম্পানের পরে আবার নতুন করে শুরু করেছিলাম সব কিছু।যখন মাছ বিক্রি করব তখনই টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আবারও ভেসে গেল আমাদের স্বপ্ন।কী করব জানি না।

মোংলা উপজেলার মোংলা ফেরিঘাট,বাজার,কাইনমারী,চিলা,চাঁদপাই, মিঠাখালী,জয়মনি সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ায় আতঙ্কে আছে স্হানীয় বাসিন্দা।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদী ও সাগরে জাল ফেলতে না পেরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবনে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার জেলে। কেউ কেউ আবার শরণখোলায় নিজ উপজেলায়ও ফিরে এসেছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন,সমুদ্রে ঝড় হলে জেলেরা সাধারণত বনের খালে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অনেক জেলে আবার লোকালয়েও আশ্রয় নিয়েছে। কোনো জেলে যদি সমুদ্রে সমস্যায় পড়ে থাকে তাহলে তাদের আশ্রয় ও উদ্ধারের জন্য বন বিভাগ চেষ্টা করবে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর জানান,সবজি মৌসুমের এখন প্রায় শেষ সময়। এখনো বৃষ্টিতে সবজির তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।এভাবে যদি আরো ২/১ দিন ধরে বৃষ্টি হয় তাহলে সবজি ও আমনের বীজতলা সহ আগাম শীত কালিন সবজির বীজ তলার ব্যাপক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক নারায়ন চন্দ্র মন্ডল বলেন,আমরা খবর পেয়েছি অবিরাম বৃষ্টি ও বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাগেরহাটের কোথাও কোথাও চিংড়ি ঘের ডুবে গেছে। আমরা জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পেলে সরকারকে পরিমান জানানো হবে।




error: Content is protected !!