বীর প্রতীক শেখ দিদার আলীর মাতাকে সম্মাননায় ভূষিত করলেন জয় নেহাল মানবিক ইউনিট
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
মহান স্বাধীনতা ও মুজিববর্ষ দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়া আড়ুয়াপাড়ার কৃতি সন্তান শহীদ বীর প্রতীক শেখ দিদার আলীর গর্বিত ও রত্নগর্ভা মাতা সুফিয়া বেগমকে গত ২৫ মার্চ জয় নেহাল মানবিক ইউনিট সম্মাননায় ভূষিত করলেন। নুরুল ইসলামের ছেলে শেখ দিদার আলী পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতেন কুষ্টিয়া টেলিফোন অফিসে। ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণের জন্য চলে যান ভারতে।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে শেখ দিদার আলীসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসেন। পাক দোসরদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বীর প্রতীক শেখ দিদার আলী। কুষ্টিয়া শহরের অদূরবর্তী দূর্বাচারা গ্রামে জিয়াউল বারী নোমানের নেতৃত্বে বিএলএফ এর একটি দল ছিল। তাদের পৃথক পৃথক ক্যাম্প ছিল।
উক্ত একটি ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন শামসুল হাদী। ৫ই সেপ্টেম্বর তার অনুপস্থিতিতে ক্যাম্প ইনর্চাজ শাহাবুব আলী ও বাহারের নেতৃত্বে ৫ই সেপ্টেম্বর প্রায় ২০০ মুক্তিযোদ্ধা দুর্বাচারা এলাকায় অবস্থান নেয়। ঐ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিল শেখ শেখ দিদার আলী। তাদের গোপন অবস্থান সম্পর্কে রাজাকাররা কুষ্টিয়ার পিস কমিটিকে জানিয়ে দেয়। পিস কমিটি পাকসেনাদের ক্যাম্পে জানালে পাক বাহিনী ঐ সকল মুক্তিবাহিনীদের আক্রমণের উদ্দেশ্য ভাদালিয়া হয়ে দূর্বাচারার দিকে অগ্রসর হয় । পাকসেনাদের আগমনের খবর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে পৌছে যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা দূর্বাচারার বংশীতলায় এ্যাম্বুশ করে সম্মুখ যুদ্ধে। পাকসেনারা সেনারা খুব কাছাকাছি চলে আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের হঠাৎ আক্রমনে পাকিস্তানীরা হতভম্ভ হয়ে পড়ে। বংশীতলার এই সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় ৮০ জন পাকসেনা ও কয়েক জন অফিসার নিহত হয়। অন্যদিকে সম্মুখযুদ্ধে নুরুল ইসলামের ছেলে শেখ দিদার আলী সহ সর্বমোট ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এবং আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছিল সেদিন। রাগ ক্ষোভ মেটাতে পরদিন পাকিস্তানীরা বংশীতলা দূর্বাচারা ও আশে পাশের এলাকায় বিমান হামলা করে।
দেশ স্বাধীনের পর ঐ সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বীর প্রতীক পদে উপাধি প্রদান করেন বর্তমান সরকার। কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়াতে শেখ দিদার আলীর বাড়ি রয়েছে। উক্ত বাড়িতে তার মাতা সহ সকলেই বসবাস করছে। তার নামে রাস্তার নামকরণ হয়েছে, তার নামে একটি স্কুল ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহান স্বাধীনতা ও মুজিব বর্ষ দিবস উপলক্ষে জয় নেহালের উদ্যোগে বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত ও রত্নগর্ভা মাতা সুফিয়া বেগমকে গত ২৫ তারিখে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জয় নেহাল মানবিক ইউনিটের সদস্যরা।