মঠবাড়িয়ায় কৃষি কর্মকর্তা বিরুদ্ধে চাষীদের টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ
পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিসে ৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা আত্মসাতে ব্যর্থ হয়ে চুরির নাটক সাজিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে। ওই টাকা প্রান্তিক চাষীদের তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১লা ফেব্রæয়ারি) দুপুরে কৃষি অধিদপ্তর বরিশাল অতিরিক্ত পরিচালক তাওফিকুল টাকা চুরির তদন্তে এসে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিষয়টি গোপন রেখে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত হোসেন গত ২৭ জানুয়ারি উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের প্রধান সহকারী আরিফুল ইসলাম বাদী করে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় উপজেলা কৃষি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী মো. ইব্রাহীমকে (৩৫) গত ২৮ জানুয়ারী গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন পুলিশ। এ ঘটনায় প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরীী ইব্রাহিম উপজেলার চরকখালী গ্রামের আবু জাফর আকনের পুত্র।
মঠবাড়ীয়া থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) কাজী গোলাম সরোয়ার এজাহার নামীয় আসামি ইব্রাহীমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কৃষি বিভাগের পরিত্যাক্ত বীজাগার থেকে ৬ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা জব্দ করেন।
মামলা ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ২০২১- ২০২২ অর্থ বছরে প্রান্তিক চাষীদের ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ৪৯ টি প্রদর্শীর জন্য বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণে কৃষকদের অনুকুলে ১২.০১.০০০.০০০.২০.০৪৪ নং স্মারকে ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৩০ টাকা বরাদ্দ দেয়। উপজেলা কৃষি অফিসার শওকত হোসেন বরাদ্দকৃত ওই টাকা গত ২৬ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংক মঠবাড়িয়া শাখা থেকে অফিসের প্রধান সহকারী আরিফুল ইসলামকে ব্যাংকে পাঠিয়ে দু’টি চেকের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা করেন। একটি চেকে ৩ লাখ ১১ হাজার ২৬ টাকা যার টোকেন নং-০০০২০৫৪৯ আরেকটি চেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৮০৪ টাকা (যার টোকেন নং- ০০০২০৫৪৮)। এরপর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের বেসিক ব্যাংকে হিসাব নম্বর থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকে জমা না দিয়ে শওকত হোসেন নামের ওই কর্মকর্তা সরকারী টাকা আত্মসাতের উদ্দশ্যে বাসায় নিয়ে যান। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এবং অফিসের অন্যান্য স্টাফরা বিষয়টি জেনে ফেলায় দায় এড়াতে নিরাপত্তা প্রহরী ইব্রাহিমের কাছে টাকা গচ্ছিত রাখার নাটক সাজিয়ে থানা পুলিশকে খবর দেয়।
উত্তোলনকৃত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৩০ টাকার মধ্যে জব্দকৃত বাদে বাকি ৯৪ হাজার টাকারও কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কৃষি অফিসার শওকত হোসেন। এ ছাড়া ওইদিন ১০৫ জন কৃষকের প্রশিক্ষন ভাতা বাবদ ৯৪ হাজার টাকা খরচ করা হলে বাস্তবে এর কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
কৃষি কর্মকর্তা শওকত হোসেন আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কৃষকদের অনুকূলে ৪৯ টি ফসল প্রদর্শনীর জন্য টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছিল। অফিসের হিসাব নম্বরে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার সময় চলে যাওয়ায় ওই টাকা অফিসের ফাইল কেবিনেটে রাখা হয় এবং সেখান থেকেই চুরি হয়ে যায়।
বরিশাল বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. তাওফিকুল জানান, কৃষকদের প্রদর্শনীর ৭ লক্ষাধিক টাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বাসভবন থেকে চুরি হয়। নিরাপত্তা প্রহরীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কেউ এতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা করা হবে।
এ বিষয় কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. বেনজির আলম এর সাথে মুঠোফোনে (০১৭০০৭১৫০০০) যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারি টাকা বাসায় রাখার কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। সরকারি টাকা চুরির বিষয়টি তদন্তের জন্য বরিশালের অতিরিক্ত পরিচালক কে মঠবাড়িয়ায় পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা