মনুনদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভেতর নির্মাণ হচ্ছে গৃহহীনদের ঘর,বন্যাভীতি

প্রকাশিত: ৫:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২১

মাসুদ আলম চয়ন মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ

মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় মনুনদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভেতর গৃহহীনদের জন্য ৪০টি ঘর নির্মাণ করছে সদর উপজেলা প্রশাসন।মাটির ২ ফুট নিচ থেকে ১০ ইঞ্চি ইটের গাতুনি দিয়ে ঘরগুলো উঠানো হচ্ছে।নকশায় কোথায়ও রডের ব্যবহার নেই।
স্থানীয়রা বলছেন,গৃহহীনরা কোনো অবস্থাতেই ওই ঘরে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারবে না।কারণ প্রায় প্রতি বছরই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল,অতিবৃষ্টি ও বন্যায় বর্ষাকালীন সময়ে ওই জায়গায় ১০/১২ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। অন্তত ৫/৭ ফুট মাটি ভরাট করে ঘর নির্মাণ করলে হয়তো কিছু দিন বসবাস করা যেতো।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের গৃহহীণ পরিবারের জন্য ওই জায়গায় ৪০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা।মোট ব্যয় হবে ৬৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, গৃহহীনদের জন্য নির্মানাধীন ঘর থেকে নদীর দূরত্ব প্রায় ১৫ফুট।এ সময় স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা বলেন, গৃহীনদের জন্য সরকারের এটি মহত উদ্যোগ।কিন্তু আমরা আশষ্কা করছি বন্যার স্রোতের সাথে হয়তো ঘর গুলো নদীতে ধসে পড়বে এবং বন্যা হলে ওই ঘরের চালের উপর দিয়ে পানি অতিবাহিত হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে ওই দিয়ে বাঁধ ভেঁঙ্গে মৌলভীবাজার পুরো শহর ৮ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। ভয়াবহ ওই বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল সরকারি অফিসের নথিপত্রসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। ক্ষতি হয়েছিল কয়েক শত কোটি টাকার।
নদীর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা স্বরসতী বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে বাস করে আসছি।নদীর পানি অল্প বাড়লেই ওই জায়গায় উঠে যায়।বন্যা হলে তো ঘরের উপর দিয়ে পানি যাবে।একই এলাকার কালন্তী বলেন,আমি দেখেছি বর্ষার সময় পানির স্রোতে অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়।পানির শক্তির সাথে কারো পক্ষে মুকাবেলা করা সম্ভব নয়।পানির স্রোতের জন্য ওই ঘর গুলোতো কিছুই নয়।
গাড়ি চালক দুলাল,দোকান মালিক জুয়েল,মিস্ত্রি রফিক মিয়া ও ব্যাংকার অমিতসহ অনেকেই বলেন, মনে হচ্ছে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। তারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই মহত উদ্যোগ সঠিক জায়গা নির্ধারণ না করার কারণে গৃহহীনদের কোনো কাজে আসবে না।অথচ অত্র ইউনিয়নের ভেতরে সরকারের আরো অনেক খাস ভূমি রয়েছে।নদীর তীরে ৬০ বছর যাবত বসবাসকারী আফুরোন বলেন,প্রতি বছরই এখানে পানি উঠে। যার কারণে ওই ঘর গুলো গৃহহীনদের কোনো কাজে আসবে না।
পরিবেশ বাদী সংগঠনের নেতা সালেহ সুহেল,নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, সাংবাদিক রিপন দে সহ অন্যান্যরা বলেন,নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের বাহিরে ঘর নির্মাণ করা নদীর জন্য খুবই হুমকি।এটা কোনো অবস্থাতে ঠিক নয়। এ ঘর নির্মাণে নদী শাসন আইন মানা হয়নি।

সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো:আজাদের রহমান বলেন,স্থানীয়দের সাথে কথা বলেই ওই জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।পৌর শহরের পাশে এরকম জায়গা পাওয়া মুশকিল।যারা এখানে ঘর পাবে তারা অনেকটা সৌভাগ্যমান।ওই জায়গা অল্প পানিতেই তলিয়ে যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি গত বছর পানি উঠেনি।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন,নদীর বাঁধের ভেতর ঘর হচ্ছে বিষয়টি আমি অবগত নয়। তবে নদীর বাঁধের বাহিরে ঘর করার কোনো সুযোগ নেই।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুজ্জামান বলেন,স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জেনেছি অনেক বছর ওই জায়গা পানি উঠেনি। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে এখানে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।এটা জেলা প্রশাসকের ১নং খতিয়ানের জায়গা।তারপরেও আমরা ঘরের পাশে নদীর অংশে দেয়াল করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।




error: Content is protected !!