রূপগঞ্জে হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ পনির পরিবার।

প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
রূপগঞ্জ  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন পনির হোসেন (৩৬) পিতা- আলীমউদ্দিন, নামে এক ব্যাক্তি । খোজ নিয়ে জানা যায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমাতায় থাকা অবস্থায় পনির তার পরিবারের লোকজন ও তার ক্যাডার বাহিনী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এলাকায় এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করতো না। যার ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে বি এন পি সরকার ক্ষমতায় এলে নারায়নগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন সমর্থীত এলাকার কিছু ছেলেরা পনির এবং তার বাবাকে মেরে আহত করে। আহত অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ সমর্থীত সোলায়মান হোসেন পারুল উকিল পরিবারের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসা এবং তাদের পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ডেমরা সারুলিয়ায় আখ মারাই করে জীবিকা নির্বাহ করতো। পরে কোন এক বাস মালিকের সহযোগিতায় সায়দাবাদ টার্মিনালে গাড়ির সিরিয়াল দিত পনির হোসেন। এবাবেই বিএনপি সরকারের ২০০৬ সাল পর্যন্ত ডেমরা এবং সায়দাবাদে কাটায় পনির ও তার পরিবারের সদস্যরা। ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চলে আসে এলাকায় আবার শুরু হয় তাদের ত্রাসের রাজত্ব।
২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে হঠাৎ করেই সিনেমার মত ফুলে ফেপে উঠে পনিরের সম্পদ ও ক্ষমতা।
২০১৩ সালের ২০ শে নভেম্বর ৫৯ নং আইনে বাংলাদেশে গেজেট এর ৮(খ) ধারা ও ২৮ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ইং এর ১নং আইনের বিধান মোতাবেক কাঞ্চন পৌরসভার অধিনস্থ ও কৃষি জমিতে ইটের ভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করা নিষিদ্ধ ও গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানণীয় প্রধানমন্ত্রী তিন ফসলীয় জমিতে ও কৃষি জমিতে কোন শিল্প স্থাপন করিতে পারিবেনা মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কাঞ্চন পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে অর্ধশতাধিক ইট ভাটা।
এলাকায় খোজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধ ভাবে মানুষের জমি দখল করে গড়ে তোলে ৫/৬ টি ইট ভাটা পরিচালনা করেন পনির ও সহোদর শহিদুল। বছর চুক্তিতে বেকু এনে রাতের আধারে মানুষের ফসলী জমির মাটি কেটে আনা হয় ভাটায়। কেউ বাধা দিলে রাতের আধারে পনির ও তার ভাই শহিদুলের গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তাদের জান ও মালের ক্ষতি সাধন করা এমন কি প্রান নাশের হুমকীও দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক কৃষক জানায়, আমাদের জমি না দিলে পাশের একটা জমি টাকা দিয়ে মাটি কিনে রাতের আধারে এমন ভাবে মাটি কাটা হতো পরের দিন গিয়ে দেখতাম আমার জমির মাটি ভেঙ্গে ওই খাদে পড়ে আছে বাধ্য হয়েই তাদের কাছে পরে কমমূল্যে আমাদের মাটিও বিক্রি করতে হতো।
গত ২০১৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থনে কাঞ্চন পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদপ্রাথী হয়ে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেন পনির হোসেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দসস্তগীর গাজী বীর প্রতিক সাহেবের বাধার মুখে নির্বাচন থেকে সরে আসে পনির হোসেন। নির্বাচন থেকে সরে আসলেও ক্ষোভের মুখে নির্বাচনের দিন ১ নং ওয়ার্ডের তারাইল শাহনুর বানূ উচ্চ বিদ্যালয়ে পনির হোসেনের উস্কানতে হট্টগোল লাগালে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথারী গুলি ছুড়তে থাকে। সেই সুযোগে পনির হোসেনের কাছে থাকা অবৈধ আস্ত্র দিয়ে গুলি চালালে স্থানীয় তারাইল গ্রামেরই সুকুমল নামের এক হিন্দু লোক গুলি বিদ্ধ হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় সুকুমলের। এই মৃত্যুর হয়নি কোন মামলা। উক্ত হত্যাকে ধামা চাপা দিতেও বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ করে পনির হোসেন।
শুধু তাই নয় তারাইল গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে আইমানকে ২০১৯ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারী পনির হোসেনের অবৈধ ড্রাম ট্র্যাক এক্সিডেন্ট করে মেরে ফেলে। তখনকার সময় ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ছিলেন শহিদুল ইসলাম তার সহযোগিতায় মোটা অংকের টাকা খরচ করে আইমানের মৃত্যু রহস্য দামাচাপা দিয়ে দেয়। এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নেই যা পনির ও তার ভাই শহিদুল গ্যাং এর ধারা হয় না। আর এসব অপকর্মের সহযোগিতায় এখনও কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাও জড়িত আছে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পনির হোসেন জুলাই ২০১৯ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাঞ্চন পৌর সভার ১নং ওয়ার্ডের কমিশনার প্রার্থী হয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত কমিশনার হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। জুলাই মাসে নির্বাচনে পাস করার কিছু দিন পার হতে না হতেই অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পতিপক্ষের উপর হামলা চালায়। যার মামলায় উল্লেখ থাকে যে, বে আইনী জনতাবদ্ধ হুকুমমতে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করিয়া সাধারনস ও গুরুতর জখম, চাঁদাবাজী, চুরি ও প্রানাশের হুমকী প্রদর্শনের অপরাধ, চোরাইমূল্য  ২,৪৫,০০০/- ( দুই লক্ষ পয়তাল্লিশ হাজার) টাকা উদ্ধার নাই। বাদীর দায়েরকৃত পিটিশন মামলা নং ৩৫০/১৯ । এই মামলার ১নং আসামী পনির হোসেন। শুধু তাই নয় পনির  ও তার ভাই শহিদুল আলাদা দুটি গ্যাং পরিচালনা করে। দুজনের গ্যাংয়ের সদস্যদের নামে রূপগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা থাকলেও কোন অদৃশ্য শক্তির বলে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে তার অপকর্ম তা নিয়ে শঙ্কিত এলাকার সাধারন মানুষ।
শুধু তাই নয় ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের উপর হামলার ঘটনা ঘটায় পনির ও তার ভাই শহিদুল গ্যাং এর লোকজন। এসময়  হামলাকারীরা ৬ ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গেলে প্রাইভেটকার চালিয়ে এক পুলিশ কর্মকতার্কে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায় শহিদুল ও তার দলের লোকজন। এ ঘটনায় পুলিশ কাঞ্চন পৌরসভার প্যানেল  মেয়র  স্থানীয় ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পনির হোসেনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
   স্থাণীয়দের বরাত দিয়ে তখন দায়িত্বে থাকা ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর মাহাবুুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে কাঞ্চন পৌরসভার তারাই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাঞ্চন পৌরসভার প্যাণেল মেয়র পনির হোসেন ও তার ভাই শহিদুল ইসলামের সাথে একই এলাকার আয়নাল হক ও সজিব মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে ৩ নভেম্বর ২০২০ ইং মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আয়নাল হক, সজিব মিয়া, রবিউল ইসলাম, দুলাল মিয়াসহ ৭/৮জনকে  বিরাব বাজারে  পেয়ে প্যানেল মেয়র পনির হোসেন, তার ভাই শহিদুল ইসলামসহ ২০/২২ জন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় আয়নাল হক, সজিব মিয়া, রবিউল ইসলাম, দুলাল মিয়াসহ ৬ ব্যক্তি গুরুত্বর আহত হয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে প্যাণেল মেয়র পনির হেসেনে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মাহাবুবুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্য তার উপর দিয়ে গাড়ী তুলে দেয়ার চেষ্টা করলে গাড়ীর ধাক্কা খেয়ে সে সময় গুরুত্বর আহত হয় তিনি। এ ঘটনায় পুলিশ প্যানেল মেয়র পনির হোসেনকে  গ্রেপ্তার  করে। আহতদের  মধ্যে আশংকাজনক  অবস্থায় আয়নাল হককে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে। এছাড়া ইন্সপেক্টর মাহাবুবসহ বাকিদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।  এঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় তারাইল এলাকার সজিব মিয়া বাদী হয়ে ১৪ জনের নামে ও রূপগঞ্জ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী  হয়ে ১৪ জনের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছিল।
সাম্প্রতি গত ৩০ শে নভেম্বর বুধবার অবৈধ গাড়ি কাঞ্চন টোল প্লাজা পার হবার সময় টোল কালেক্টর ড্রাইভারের কাছে টাকা চাইলে টাকা দিতে অস্কিকার করলে তার গাড়ি আটকে দেয়। ড্রাইভার ফোন করলে শহিদুল ১৫/১৬ টি মটর সাইকেল নিয়ে ট্রোলপ্লাজায় এসে কালেক্টরকে অকথ্য ভাষায় গাল মন্ধ করে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। পরে টোল কতৃপক্ষ পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে জেলা হাইওয়ে পুলিশ এসে শহিদুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বেশ কয়েকটি মটর সাইকেল সহ আটক করে। পরে শহিদুলের ভাই পনির কমিশনার ফোন করে স্থানীয় পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভাইসহ তার সঙ্গীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
গত পহেলা ডিসেম্বরে একদল সাংবাদিক অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিরাব বাজারের পাশে ছবি তুললে শহিদুল সাংবাদিককে হুমকী প্রদান করে, এবং ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাংবাদিকরা সেখান থেকে চলে আসে। অন্যের জমি দখল, জোরপূর্বক অন্যের জমি রাতের আধারে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি, জোরপূর্বক মাটিকাটা অন্যের জমিতে মাছের চাষকরা, সরকার ঘোষিত অবৈধ একাধিক ইটভাটা পরিচালনা, অস্ত্র সরবরাহসহ, কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে বহার তবিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছে শহিদুল। পনির কামিশনারের ভাই শহিদুলের খুটির জোর কোথায় তা নিয়ে এখন জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন।



error: Content is protected !!