মিতা খাতুন,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ–
আজ ৯ আগস্ট রবিবার ছাত্র-অবিভাবক মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছে। মহাসমাবেশটি সকাল ১০ টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চলছে। ইতিমধ্যে সমাবেশের জন্য করোনা ঝুকি, প্রচন্ড রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কাফনের কাপড় পড়েই যোগ দিয়েছে দেশের ৬৪ জেলা থেকে ৮১ টি বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা এবং তাঁদের অবিভাবগণ। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত সমাবেশ স্থল। “আইনে কোন বাঁধা নাই গেজেট করে সনদ চাই” এবং “সংস্কার চাই পরীক্ষা নামক জটিলতার, সংস্কার চাই দায়িত্বে থাকা বিবেকের”।
সম্মিলিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি স্মরণ, যুগ্ম আহ্বায়ক একে মাহমুদ, সুমনা আক্তার লিলি, শেখ মো.আবুল হাসনাত বুলবুল, আইনুল ইসলাম বিশাল তথা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গণের ডাকে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সনদের দাবীতে ছাত্র-অবিভাবক মহাসমাবেশ।
জানা জায়,প্রিলিমিনারী পাশকৃত (২০১৭ ও ২০২০) সালের রিটেন পরীক্ষার তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর
ঘোষনা করেছে। তারিখ ঘোষনা করলেও পরীক্ষার্থীরা এ তারিখ মানতে নারাজ। কারন তাদের দাবী রিটেন পরীক্ষার খাতায় ওএমআর পদ্ধতি সংযুক্ত না থাকায় আবুল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে মকবুল। তাছাড়া কোন রকম রিটেন পরীক্ষা একবার নিতে পারলে আর এটার রেজাল্ট যে কবে দিবে তার কোন ইয়ত্তা থাকে না। এমনকি পরীক্ষার খাতা পূনঃ নিরিক্ষনেরও কোন ব্যবস্থা নাই। সব অনিয়ম আর অনিশ্চয়তার জন্য লাইসেন্স পেতে তাঁদের ৩/৫ এমনকি ১০ বছরও লেগে যাচ্ছে। তাই শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ন্যায্য দাবী যেহেতু সঠিক সময়ে বার কাউন্সিল পরীক্ষা প্রসেস শেষ করতে পারছে না তাতে করোনা মহামারীর প্রভাবও চলমান। তাই প্রিলি পাশকৃতদের গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্তির দাবীতে আজ এ মহাসমাবেশ।
শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রধান সমন্বয়ক এ,কে মাহমুদ বলেন, আমরা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্ত করণ এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়ার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০১৭ সালের ২১ জুলাই এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তীর্ণ হই। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর বার কাউন্সিল কর্তৃক এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কোনো পরীক্ষা হয়নি। তবে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী তালিকাভুক্তকরণ পরীক্ষার প্রিলিমিনারি সম্পন্ন হওয়ার পর বর্তমান লিখিত পরীক্ষার তারিখ দিলেও তা অনিশ্চিত ও অনিয়মে ভরা। এ অবস্থায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিষয় মানবিকভাবে বিবেচনা করে লিখিত পরীক্ষা মওকুফ করে অথবা লিখিত ও ভাইভা উভয় পরীক্ষা মওকুফ করে ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ উত্তীর্ণদের গেজেট প্রকাশ করে সনদের প্রদানের জন্য দাবি জানাই।
আন্দোলনের সমন্বয়কদের অন্যতম সদস্য আরেক জন সুমনা আক্তার লিলি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইনের ছাত্র ছিলেন, তিনি সারাজীবন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু আজ আমরা জাতির পিতার বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত, তিন বছর একটি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছি। তাই আর অপেক্ষা নয় আমাদের জীবনের এ দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে প্রিলি পাশকৃতদের গেজেটের মাধ্যমে সনদ দেওয়া হোক।
খুলনার শিক্ষানবিশ আইনজীবী মোঃ রায়হান আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও বার কাউন্সিলের বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি সনাতন হওয়ায় আমরা জীবন নিয়ে সংশয়ে পড়েছি। রিটেন পরীক্ষায় নেই কোন ওএমআর সংযুক্ত। তাই কে পরীক্ষা দিয়ে যে কে পাশ করে তার নিশ্চয়তা নেই। বর্তমানে আধুনিক যুগে এমন পদ্ধতির পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। আর এটা হয়তবা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সম্মানিত বার কাউন্সিলের সদস্যদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাবো যেন বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রিলি পাশকৃতদের গেজেটের মাধ্যমে সনদ দিয়ে বর্তমান সমস্যা নিরসন করে শিক্ষিত বেকারদের স্বনির্ভর করে তোলে।
উল্লেখ্য,এই শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা সারা দেশে গেজেটের মাধ্যমে সনদের দাবী সহ অন্যান্য দাবীতে একযোগে গত ৯জুনে দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে ছিলেন। এছাড়া একই দাবীতে গত ৩০ জুন ঢাকা প্রেসক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করেন এবং ১৯ জুলাই বার কাউন্সিলের সামনে মহাসমাবেশ করে। বর্তমানে প্রতিদিন আন্দোলন চলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।