সমুদ্রসীমায় বৈধ জেলেদের তালিকায় দুর্নীতির কারনে আবারো পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত কতৃপক্ষের

প্রকাশিত: ১১:১৫ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০

রাসেল কবির মুরাদ,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ  সমুদ্রসীমায় মৎস্য আহরনে বিরত থাকা জেলেদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দূর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটসহ নানা অনিয়মের পর শেষপর্যন্ত বৈধ জেলেদের তালিকা আবারো পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুনির্দ্দিষ্ট কতৃপক্ষ। মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপসচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনায় আগামী ১৫ জুনের মধ্যে প্রকৃত জেলেদের তালিকা পর্যালোচনা করে মানবিক সহায়তা বিতরনের জন্য বলা হয়েছে। এসংক্রান্ত নির্দেশনা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কুয়াকাটা উপকূলের জেলে সংগঠন গুলোর দাবী দূর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রকৃত জেলেদের তালিকা পর্যালোচনা নিয়ে সংশয় রয়েছে পেশাদার জেলেদের মধ্যে। কারন কালো টাকা ও ভোটের রাজনীতির প্রভাব দেখা দিতে পারে জেলেদের তালিকা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে। 

উল্লেখ্য, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন রূপালী ইলিশ রক্ষায় সমুদ্রে সকলধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এতে কর্মবিমূখ হয়ে পড়া প্রকৃত জেলেদের সরকার প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি করে মানবিক সহায়তা (চাল) দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য সমুদ্রগামী প্রকৃত জেলেদের তালিকা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। ইতিপূর্বে কার্ডধারী জেলেদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন,  কেউভুল তথ্য দিয়ে তালিকায় নাম সংযুক্ত করেছেন, কেউবা আবার নতুন করে এ পেশায় এসেছেন, কেউ আবার পেশা পরিবর্তন করেছেন। এসব কারণে সমুদ্রগামী প্রকৃত জেলেদের জন্য সরকারের মানবিক সহায়তা তুলে দিতে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে সরকার প্রদত্ত ভিজিএফ সুবিধা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ জেলেদের প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিগন এই তালিকা চুড়ান্ত করবেন। তাই এবারও জেলেদের তালিকা নিয়ে উপকূলের জেলে সংগঠনগুলোর শংকা কতটা সঠিক সেটা দেখা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেননা আর্থিক সুবিধা নিয়ে জেলে তালিকায় অন্তর্ভূক্তি ও সরকারী সুবিধা বিতরনের সাথে জড়িত বিতর্কিত অনেক জনপ্রতিনিধি যুক্ত থাকছেন প্রকৃত জেলেদের এ তালিকা নিরিখের কাজে এ সুযোগ নিয়ে তারা ইতিপূর্বে মৎস্য বিভাগকে ম্যানেজ করে প্রায় চার হাজার ভুয়া নাম জেলে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। কলাপাড়া উপজেলায় জেলেদের এই মানবিক সহায়তা জনপ্রতিনিধি কর্তৃক লুটপাট নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় মৎস্য কর্মকর্তা ও ২য় দফায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত হলেও রহস্যজনক কারনে অদ্যবধি অভিযোগের সত্যতা জানা যায়নি। কলাপাড়ায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে কার্ডধারী রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ জন আর এ তালিকায় প্রায় ৪ হাজার নাম রয়েছে যারা প্রকৃত জেলে নয়। জেলেদের এ মানবিক সহায়তা নিয়ে কুয়াকাটা, চম্পাপুর, ধূলাসার, ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা বহুল আলোচিত হয়ে ওঠেন। সরকারী চাল নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের লুটপাটের অভিযোগে জেলেদের মানববন্ধন ও লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রমও পরিচালিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সব ম্যানেজ করে অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনই সুরাহা না করে  দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিতরনকৃত জেলেদের মানবিক সহায়তার মাষ্টার রোলে জেলে নয় এমন ভিন্ন পেশার বহু মানুষের নাম পরিলক্ষিত হয়। তালিকা সংগ্রহে মৎস্যকর্মকর্তার কার্যালয় যোগাযোগ করার পর কলাপাড়া মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী লিখিত আবেদন করতে হবে এবং তা অনুমোদনের পর আইন অনুযায়ী সরবরাহ হবে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়,  ২৫৭ ও ২৮৯ ক্রমিকে আছে আওয়ামীলীগ নেতা ও ছাত্রলীগ নেতার নাম, ২৯৭,  ২৯৯ ক্রমিকে রয়েছে যুবলীগ নেতার নাম, ৪৬২ ক্রমিকে রয়েছে কৃয়াকাটার বিলাস বহুল এক আবাসিক হোটেল মালিকের নাম। এছাড়াও তালিকায় অগনিত নাম রয়েছে যারা আদৌ জেলে নয় এবং যাদের কোন জেলে কার্ড নেই। কিন্তু তারাই পেয়েছেন জেলে হিসেবে সরকারের বিশেষ সুবিধা, তবে দাখিলকৃত তালিকায় এদের অনেককেই অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। এরপর জেলাপ্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সম্প্রতি তদন্ত করেছেন।

মৎস্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের দূর্নীতিযুক্ত তালিকায় সুবিধা বঞ্চিত প্রকৃত জেলেদের দাবি, জেলেদের তথ্য সংগ্রহকালে কারা কোন ট্রলারের জেলে এসব তথ্য নিশ্চিত এবং ট্রলারের নাম,  মালিকসহ জেলের মোবাইল নম্বর পর্যন্ত প্রশাসনের তালিকায় থাকা প্রয়োজন বলেও জেলেদের দাবি।

কলাপাড়া মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, জেলেদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে সরকারের আদেশ জনপ্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে, যা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আ: বারেক মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওয়ার্ড ভিত্তিকি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত জেলের তালিকা পৌরসভায় জমা দিবেন এবং তাদের তৈরীকৃত তালিকা আবারো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মৎস্য কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি যাচাই-বাছাই করবেন। বৈধ জেলেদের তালিকায় অপেশাদারদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কোনো সূযোগ নেই বলে তিনি জানান।




error: Content is protected !!