সামনে আমাদের জন্য সতর্ক সংঙ্কেত

প্রকাশিত: ১:৫১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২০

ডা:এস,এম ইব্রাহীম।
যেকোনো রোগের মহামারী মোকাবেলায় প্রথম লক্ষ্য থাকে সংক্রমণ প্রতিহত করা। সংক্রমণ প্রত্যাশিত মাত্রায় রোধ করা না গেলে বা ব্যাপকভাবে সামাজিক সংক্রমণ ঘটলে মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুহার যতটা সম্ভব কম রাখা। তখন সে দিকে লক্ষ্য রেখে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে দেশে এখন মৃত্যুহার কম রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কারণ, দেশে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। দিন যত গড়াচ্ছে মৃত্যুর তালিকা তত দীর্ঘ হচ্ছে। দেশে ব্যাপকভাবে যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, এর বড় প্রমাণ এক দিনেই সংস্রাধিক নাগরিকের করোনা শনাক্ত হওয়া; যা উদ্বেগের বিষয়। ঘটনাপ্রবাহের দিকে লক্ষ করলে প্রতীয়মান হয়, প্রথম দিকে দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম থাকলেও এখন তা উদ্বেগজনক পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে। এটি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা অজানা। অনেক দেশে প্রথম দিকে করোনা সংক্রমণের হার কম থাকলেও পরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কাজেই আমাদের দেশে এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তা সবার জন্যই একটি সতর্কসঙ্কেত।
করোনা মোকাবেলায় সর্বপ্রথম যে দিকে জোর দেয়া প্রয়োজন, তা হলো প্রতিকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির মাধ্যমে দেশে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত কি না, ভেবে দেখা দরকার। যদিও দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে সর্বসাধারণের চলাফেরায় কিছুটা শিথিলতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর প্রভাব কেমন হবে তা সামনের দিনগুলোতে বোঝা যাবে। এ কথা ঠিক, স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে অনেক দেশ। এ ধরনের ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াসে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণে।
অন্য দিকে করোনার নমুনা পরীক্ষা এবং সংক্রমিতদের যথাযথ চিকিৎসায় দেশে দেশে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা আশাব্যঞ্জক নয়। পরীক্ষা এবং সংক্রমিতদের চিকিৎসা নিয়ে এখনো মানুষজনের দুর্ভোগের শেষ নেই। বস্তুত দেশে যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা চলছে, তাতে করোনা মোকাবেলায় দ্রুত সফলতা আসা কঠিন। এখনো শুধু তারাই পরীক্ষার আওতায় আসছেন, যাদের করোনা উপসর্গ রয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনায় আক্রান্ত ৮০ শতাংশই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ফলে এদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কাজেই করোনা পরীক্ষা বেশি মাত্রায় করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে এলাকা ধরে ধরে সবার পরীক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ দ্রুত নেয়া দরকার। করোনা মোকাবেলায় সাফল্য পেতে এর বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা কতটা প্রস্তুত এবং সামর্থ্যইবা কতটুকু রয়েছে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। একই সাথে দেশের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থাও তেমন সন্তোষজনক নয়। করোনার চিকিৎসায় চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। পরীক্ষা থেকে আরম্ভ করে চিকিৎসা পর্যন্ত কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। এসব সীমাবদ্ধতা যত দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারা যাবে ততই আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। তা না হলে দেশে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্ত দুই রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেয়ার পর এর দুই মাসাধিককালে গত রোববার সকাল থেকে সোমবার ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট এক হাজার ৩৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থতার হার ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। যদিও অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যুহার কম। এতে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের সময়টা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গত দেড় মাস যতটুকু মানুষজনকে সংযত রাখা গেছে; ঈদ পর্যন্ত তা ধরে রাখা গেলে করোনা মোকাবেলা আমাদের জন্য কিছুটা সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ঈদে সংযমী না থেকে কেনাকাটা ও এক স্থান থেকে অন্যত্র যাতায়াত বেড়ে গেলে উল্টো ফল হতে পারে। তখন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই-ই বেড়ে যেতে পারে; যা দেশের জন্য কাংক্ষীত নয়।




error: Content is protected !!