স্টাফ রিপোর্টারঃ সিলেট -৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবকে মনোনয়ন দিয়েছে দলের মনোনয়ন বোর্ড। মনোনয়ন প্রত্যাশী নবীন-প্রবীণ ২৫ প্রার্থীর মাঝে নৌকার মাঝি হিসেবে অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থী হাবিবকে বেছে নেয় দলটি।
12 জুন শনিবার দুপুরে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে এ মনোনয়ন দেয়া হয়।গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটের ডাক-এর সাথে আলাপকালে হাবিবুর রহমান হাবিব তাকে মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মনোনয়ন বোর্ডের সকল সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দল যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি কাজে-কর্মে তা পালনের চেষ্টা করবেন। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতায় একটি দৃষ্টিনন্দন এলাকা গড়ে তোলাই হচ্ছে আমার লক্ষ্য। উন্নয়নের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়ন করব।তিনি এও বলেন, কোন নির্দিষ্ট গ্রুপ বা লবি’র হয়ে নয়, কাজ করব সকলের জন্য। দিন-তারিখ নির্দিষ্ট না করলেও নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানান তিনি।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল সকাল ১১টার পর দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।সভা শেষে দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সংসদীয় আসন ২৩১ – সিলেট-৩ এ হাবিবুর রহমান হাবিবকে দলের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ সভায় ঢাকা -১৪ আসনে আগা খান মিন্টু ও কুমিল্লা -৫ আসনে আব্দুল হাসেম খানকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। এই তিন আসনের সংসদ সদস্য যথাক্রমে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১১ মার্চ, ১৪ এপ্রিল এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং ৪ এপ্রিল আসলামুল হক হাটর্ এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করায়-এই ৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জানা গেছে, সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজারের ধরগাঁওয়ের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হাবিব যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। দলের সিলেট জেলার সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি যুক্তরাজ্য যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, নব্বইর দশকে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য, তারও আগে সদর দক্ষিণ থানা ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হাবিব ২০০৪ সালে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে যুক্তরাজ্যে গ্রেফতার হন। তিনি প্রবাসী পল্লী গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যানও।
হাবিবুর রহমান হাবিব ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন পেতে দলের টানা তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর (কয়েস) সহধর্মিণী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, জেলার যুগ্ম সম্পাদক কবির উদ্দিন আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতান, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, দলের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল, ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি ও সিনিয়র সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এনাম উল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান শাহিন ও এম সদরুল আহমেদ খাঁন, স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) সাদরুল আহমেদ খাঁন, সাবেক ছাত্রনেতা সেলিম আহমদ, ইস্ট লন্ডন যুবলীগের সভাপতি হোসাইন আহমদ ও শ্রমিক লীগ নেতা শামীম ইকবালসহ ২৫ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৫ জুন মঙ্গলবার। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ জুন। আপীল দায়ের ১৮ ও ২০ জুন। আপীল নিষ্পত্তি ২১ ও ২২ জুন। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ জুন। প্রতীক বরাদ্দ ২৪ জুন। ১৪ জুলাইর পরিবর্তে আগামী ২৮ জুলাই সোমবার এ আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ২৯৩ জন।
গত ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট -৩ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। ১৫ মার্চ সংসদ সচিবালয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে। সংবিধান অনুযায়ী ৮ জুনের মধ্যে এ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু, করোনা মহামারিকে ‘দৈব-দুর্বিপাক’ দেখিয়ে নির্বাচন ৯০ দিন পিছিয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
জানা গেছে, এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচন করেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নামেন। এরপর ১৯৯৬ থেকে টানা ৫ বার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দি¦তা করেন। নৌকা নিয়ে ২ বার পরাজিত হলেও তিনবার তিনি বিজয়ী হন। অবশ্য ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দি¦তায় তিনি নির্বাচিত হন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭ ভোট এবং ধানের শীষ প্রতীকে শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ২৮৮ ভোট। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৭ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপির প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৫৪ হাজার ৯৫৫ ভোট। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৫ হাজার ৯৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী। এ নির্বাচনে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৩৪২ ভোট। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত খান লাঙ্গল প্রতীকে ২৬ হাজার ৬৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ সময় নৌকা প্রতীকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ১৬৮ ভোট। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আতিকুর রহমান আতিক। নৌকা প্রতীকে তিনি ১৯ হাজার ৫৭ ভোট পান। তাকে হারিয়ে জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত খান লাঙ্গল প্রতীকে ৩৩ হাজার ৪১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন।