কোভিড-১৯’র ক্ষত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে কুষ্টিয়ার শিল্প মালিক ও উদ্যোক্তারা

প্রকাশিত: ৮:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২১

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।

কোভিড-১৯ ভাইরাস। যা জীবন ও জীবিকাকে থমকে দিয়েছিল। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ইতিহাসের কঠিনতম অর্থনৈতিক মন্দা পার করলো বাংলাদেশ। দেশের অর্থনীতির এমন কোনো খাত নেই যা আক্রান্ত হয়নি। উক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কেএনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তারও অর্থনীতির চাকা থমকে গিয়েছিল।

বিসিক শিল্পনগরীতে গড়ে উঠেছে পশু খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কেএনবি এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লি: করোনা মহামারিতে পোল্টি শিল্পে ধ্বস নেমে অর্থনীতিকে চরমভাবে প্রভাব ফেলেছে। যা কাটিয়ে উঠতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন প্রতিষ্টানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান নাসির। তিনি বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পোল্টি সেক্টরের অনেক দ্রব্যই আমদানি করতে হয়। প্রত্যেকটি দ্রব্য আমদানিতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। বিশেষকরে বিশ্বব্যাপী কন্ট্রেইনার সংকট ব্যয় ৩ গুন বেশি বাড়িয়েছে। এ খাতে ক্ষতির পরিমান বিবেচনা করে সরকারের এক বছরের প্রণোদনার মেয়াদ বাড়িযে আড়াই বছর করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, আমার শিল্প কারখানাতে করোনাকালীন সময়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ যথেষ্ট নয়। তবে এতো প্রতিকুলতার মধ্যেও আমরা কোন শ্রমিক ছাটাই করিনি। শিল্প কারখানার মিল মালিক ও ছোটখাটো ব্যবসায়ীদেরকে বাঁচাতে সরকারকে আরো প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে যেন সকল শিল্প কারখানার মালিক ও ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা আবারও উঠে দাঁড়াতে পারে। সেইসাথে দেশের অর্থনীতি চাকাকে সচল করতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে করোণা মহামারীর ঐ দুঃসময়ে কেএনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান নাসির তার শিল্প কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তিনি বসে থাকেননি ছুটে বেড়িয়েছেন করোণা রোগীদের সেবায়। প্রতিনিয়ত কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে খাবার বিতরণ করেছেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছেন এমন কোনো দিন নেই যে তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। পথশিশু থেকে শুরু করে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে নিয়মিত খাবার বিতরণ করে চলেছেন। লকডাউনে হোটেল রেস্তোরা বন্ধ থাকায় পশুরা না খেয়ে দিনযাপন করছিল সেসময় তিনি পশুদেরকেও প্রতি রাত্রে তিনি ও তাঁর সহধর্মিনী চামেলি জামানকে সাথে নিয়ে নিজ হাতে খাবার বিতরণ করেছেন।

সুত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের অদূরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন কুমারগাড়া এলাকায় ১৮ দশমিক ৪৯ একর জমির ওপর রয়েছে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগর। ৮৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় উদ্যোক্তাদের। পর্যায়ক্রমে ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় টিকে থাকতে না পেরে অধিকাংশই ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। কুষ্টিয়া বিসিকে ১০ দশমিক ২২ একর জায়গায় বিআরবি গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এতে দশ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি করোনা মহামারিতে হোচট খেলেও তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও শুরুতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় নিজেকে রক্ষায় এবং এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরা ঠেকাতে লক ডাউন দেওয়া হয়। লক ডাউনের সময় বন্ধ থাকে কেএনবি সহ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান। থমকে দাঁড়ায় বিশ্ব অর্থনীতি। কারণ আমদানি রপ্তানিসহ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থগিত থাকে।

করোনা অতিমাত্রার কারণে অন্যসব খাতের সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিল্প বাণিজ্য। সারা বিশ্বেই এই খাত করোনার কারণে বিপর্যস্থ হয়। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রায় সব দেশই লক ডাউনের পথে হাঁটে। সেই সময় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে।

এদিকে দেশের অর্থনীতি থমকে দাঁড়ালেও সব শ্রেণির মানুষের কর্মস্পৃহা ও সরকারের চেষ্টায় দ্রুততম সময়েই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। যদিও এ সময়ের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে দারিদ্র্যের হার। কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী। কুষ্টিয়ার শিল্প খাতে নেমে এসেছিল স্থবিরতা। বড় বড় শিল্পের মালিক থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এখনো ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে বর্তমান সময়ে করোনার সহায়ক অবস্থানে থাকায় পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কুষ্টিয়ার শিল্প মালিক থেকে উদ্যোক্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির সংকট সামলাতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তবে বিশ্বমন্দার এই সময়ে স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসা-বাণিজ্য আগামী দিনগুলোতে অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। এবং সে পথেই হাটছেন।




error: Content is protected !!