মাওলানা মুফতি রুহুল আমিনঃ
সালাম পুণ্যময় একটি ইবাদত। ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-‘আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দেবো, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে, আল্লাহর রহমত ও নেকি অর্জন হবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যা, বলুন; তখন নবীজী এরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের পরস্পরের মাঝে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করবে’। (মুসলিম :১/৫৪)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-‘এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) সেগুলো কি কি? উত্তরে তিনি এরশাদ করেন, কোনো মুসলমানের সাথে তোমার দেখা হলে প্রথমে তাকে সালাম করবে, তোমাকে আহবান করলে তার আহবানে সাড়া দেবে, তোমার কাছে সৎ উপদেশ কামনা করলে তাকে সৎ উপদেশ দেবে, হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে এর জবাব দিবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে, অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে এবং তার মৃত্যু হলে জানাজার পর লাশের সাথে চলবে’। (মুসলিম :২/২১৩)। একদা জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (সা.) এর নিকট এসে বললো ‘আসসালামু আলাইকুম’। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে ব্যক্তি বসলে নবী করীম (স) বললেন, ‘দশ’ অর্থাৎ তার আমলনামায় দশটি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললো ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে ব্যক্তি বসলে তিনি বললেন, বিশ অর্থাৎ তার আমলনামায় বিশটি নেকি লেখা হয়েছে। তারপর অপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে বসলে তিনি বললেন, ‘ত্রিশ’ অর্থাৎ তার আমলনামায় ত্রিশটি নেকি লেখা হয়েছে’। (আবু দাউদ : ২/৭০৬)। হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেন ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করলে উভয়ে আলাদা হওয়ার পূর্বেই সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়’। (আবু দাউদ : ২/৭০৮)। ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম দেয়া এবং ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’ বলে সালামের উত্তর দেয়া ইসলামের বিধান। কেউ সালাম দিলে সালামের উত্তর মৌখিক দিতে হবে। মাথা বা হাতের ইশারা-ইঙ্গিতে জবাব দিলে উত্তর আদায় হবে না। নিকটবর্তী ব্যক্তিকে শুনিয়ে মৌখিক জবাব দিতে হবে। মাথা বা হাতের ইশারায় জওয়াব দেয়াকে যথেষ্ট মনে করলে হবে না। তবে দূরবতী থাকলে ইশারা-ইঙ্গিতে উত্তর দেয়া যাবে। সালামের জবাব সালামের চেয়ে উত্তম হতে হবে। কেউ যদি আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম প্রদান করেন তাহলে উত্তরদাতা বলবেন ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। সম্ভব হলে এর সাথে ওয়া বারাকাতুল্লাহ শব্দটি বাড়িয়ে বলতে পারলে এটা আরও ভালো। (মাজালিছুল হিকমাহ)। যদি কারও কাছে কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির সালাম নিয়ে আসেন তাহলে ওই ব্যক্তির সালামের উত্তর ‘ওয়া আলাইকুম ওয়া আলাইহিস সালাম’ বলে দিতে হবে। (ইমদাদুল ফাতওয়া)। চিঠিপত্রে যেসব সালাম পূর্ণাঙ্গভাবে আসসালামু আলাইকুম বলে লিখিত হয়ে আসে তাহলে এর জওয়াব দেয়াও ওয়াজিব। যদি কারও সাথে ওয়াদা করা হয় যে, আমি আপনার সালাম পৌছে দেবো অমুখের কাছে তাহলে ওই ব্যক্তির সালাম পৌছানো ওয়াজিব হয়ে যাবে ওয়াদাকারী ব্যক্তির ওপর। ওয়াদা না করলে ওয়াজিব হবে না। এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে দেখা-সাক্ষাত হওয়া মাত্রই আগে সালাম দিতে হবে। সালাম দেয়ার ব্যাপারে চেনা-অচেনার মাঝে কোন পার্থক্য করবে না। যানবাহনে আরোহী ব্যক্তি হেঁটে চলা লোকদেরকে, চলন্ত ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে। কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম করবে। কয়েকজনের মধ্যে একজনে সালাম দিলেই সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যায়। তেমনি অনেকের মধ্যে একজন জওয়াব দিলে সকলের পক্ষ থেকে উত্তর দেয়া হয়ে যাবে। নিজের ঘরে গিয়ে ঘরের লোকদেরকেও সালাম দিতে হবে। যিনি আগে সালাম দিবেন তিনি অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকবেন। আসুন সালামের গুরুত্ব আনুধাবন করে আমল করার চেষ্টা করি।