আলী আজীম,মোংলাঃ
চলতি বছরের মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সর্বক্ষেত্রে নেমে আসে স্থবিরতা। সারাদেশে লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামলেও ব্যতিক্রম ছিল মোংলা বন্দর। এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি চালু ছিল। গত এপ্রিলে এই বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যা কিছুটা কম হলেও মে ও জুন মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে রাজস্ব আয়ও বাড়ে। বন্দর ব্যবস্থাপনা, সঠিক নির্দেশনা সবাই মেনে চলায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন বন্দরের চেয়ারম্যার রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান।
তিনি বলেন, আমরা কোনও অবস্থায়ই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখিনি। বিদেশি যারা এসেছিলেন তাদের যথাযথভাবে সাহায্য করেছি। এছাড়া জাহাজ যেগুলো এসেছে, প্রতিটি জাহাজের বিষয়ে করেন্টাইন রুলস মেনে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছে।’
বন্দরের শীর্ষ এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব প্রজেক্ট আছে। জিওবির আন্ডারেও প্রজেক্ট আছে। প্রত্যেকটি প্রজেক্ট প্ল্যান মাফিক চলছে।’
মোংলা বন্দরের ট্রাফিক পরিচালক মো. মোস্তফা কামাল জানান, করোনা পরিস্থিতিতে জাহাজ আগমন ও নির্গমনের কার্যক্রমে কোনও ভাটা পড়েনি। তিনি আরও বলেন, এ বন্দরে গত অর্থ বছরে ৯০৩ টি জাহাজ আসে এবং এক লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বন্দরে দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রমে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ বিভাগ থেকে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে গত মে মাসে মোংলা বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে ৫৯ টি এবং রাজস্ব আয় হয়েছে ২০ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা, জুন মাসে ৫২টি এবং রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৬২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, জুলাই মাসে ৬৪ টি জাহাজ এবং রাজস্ব আয় হয়েছে ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, আর আগস্ট মাসে ৭০টি জাহাজ এ বন্দরে এসেছে এবং রাজস্ব আয় হয়েছে ২৪ কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
এদিকে, বন্দরের অর্থ বিভাগ জানায়, গত এক দশকে এ বন্দর দিয়ে দেশি-বিদেশি জাহাজ আসা ও যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণ। সর্বক্ষেত্রে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩২০ কোটি টাকা।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু এন্ড সন্স এর মালিক এইচ এম দুলাল জানান, করোনাকালীন সময়ে পণ্য বোঝাই ও খালাসে তাদের কোনও বেগ পেতে হয়নি। বন্দরের এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে যখন বরোনার প্রভাবে ভাটা দেখা দিয়েছে, তখন মোংলা বন্দর আমাদের পণ্য ওঠা-নামা স্বাভাবিক রেখে লক্ষমাত্রার রাজস্ব আয় করেছে।’
বন্দরের আরেক ব্যবসায়ী মশিউর রহমান জানান, করোনাকালীন সময়ে ভিন্ন চিত্র ছিল মোংলা বন্দরে। এ বন্দর দিয়ে তারা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য ছাড় করাতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘এর ফলে বন্দরের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক লাখ মানুষ করোনার সময়েও তাদের উপার্জন স্বাভাবিক রাখতে পেরেছেন।