কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : সাগরকন্যা কুয়াকাটায় আজ থেকে অনুষ্ঠিত হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত বছর ধরে চলে আসা রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান। দুইদিন ব্যাপী রাস মেলা রবিবার অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে সোমবার ভোরে গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন রাসমেলা আয়োজক কমিটি। ইতোমধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান এবং রাস উৎসবে আগত পূণ্যার্থী ও দর্শণার্থীদের বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান রাসমেলা আয়োজক কমিটি ও প্রশাসন।
রবিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাস উৎসবকে সামনে রেখে শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরে প্রতিমায় রং তুলির আচঁরে সাজিয়ে ভিন্নতা পেয়েছ প্রতিমাগুলো। মেলায় অংশগ্রহন করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান দোকানিরা মেলার সামগ্রী নিয়ে কুয়াকাটায় আসছে। বিগত বছরে এ মেলায় বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হতো। তবে মাঝে দুই বছর করোনা আর এবার যোগ রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ নিয়ে অস্বস্তি বিরাজমান আয়োজকদের মধ্যে। আয়োজকদের কমতি নেই ভক্তবৃন্দকে বরণ করতে, তবে শঙ্কাও কাজ করছে হরতাল আর অবরোধের কারনে ভক্তদেও ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, গঙ্গাস্নান ও রাসমেলা উৎসবকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌরসভা দফায় দফায় মেলা উৎযাপন কমিটি ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন। ব্যাপক সংখ্যক আগত পূণ্যার্থী ও দর্শণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেক পোষ্ট। পুলিশের পাশাপাশি নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোন নাশকতা রোধে আনসার, র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মোতায়েন করা হয়েছে এমনটা জানান পুলিশ প্রশাসন।
অপরদিকে গঙ্গাস্নান ও রাস মেলায় আগত হাজার হাজার পূন্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সমাগমকে সামনে রেখে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হোটেল-মোটেল ও পর্যটনমূখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এবিষয়ে কথা হয় শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরের পরিচালক ও পুরোহিত ব্রম্মচারী শিশির মহারাজ জানান, আগত হাজার হাজার পূন্যার্থীদের সমন্বয়ে ২৬নভেম্বর রবিবার শ্রী কৃঞ্চের মহা নাম যজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ রাস পুজার আরম্ভ করা হয় এবং ২৭ নভেম্বর সোমবার বিকেলে শ্রী কৃঞ্চের নাম যজ্ঞ শেষে স্নানের মধ্যে দিয়ে রাস পূজা শেষ হবে। রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয়ভাব ধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব৷ শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসসমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবতœার থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে। প্রচলিত বিশ্বাসের জায়গা থেকে তারা মনে করে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে তারা স্নানের মধ্যে দিয়ে জাগতিক পাপ মোচন হয়ে থাকে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, মেলায় আগত দর্শনার্থী ও পূন্যর্থীদের বরণ করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। পর্যটকরা হোটেলে রাত্রি জাপনে ৪০থেকে৫০ শতাংশ ছাড় পাবে। অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের চাপকে পুঁজি করে কোন হোটেল মালিক যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সে দিকে নজর রাখা হবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের ওসি হাসনাইন পারভেজ জানায়, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ধর্মীয় উৎসবকে সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সমাপ্ত করার জন্য যা যা করার তা করা হচ্ছে। কুয়াকাটার দর্শনীয় স্পটগুলো ও মন্দিরের আশেপাশে নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, রাসমেলা উপলক্ষ্যে আগত পর্যটক ও পূন্যার্থীদের নিরাপত্তায় আমরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছি এবং প্রশাসনও এব্যাপারে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রাসমেলা ও রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে আগত ভক্তবৃন্দকে নিরাপত্তা প্রদানে সব কিছুরই প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে এবং কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করা হয়েছে।