গর্ভবতী অবস্থায় কি রোজা রাখা যাবে

প্রকাশিত: ২:৪১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০

বার্তা এডিটর,শেখ সোহানুর রহমানঃ শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। আর এই রমজান মাসে রোজা রাখা সকল মুসলমানদের জন্য ফরয। পারিভাষিক অর্থে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত সমস্তপ্রকার খাদ্যদ্রব্য, পানিয়দ্রব্য থেকে বিরত থাকা হচ্ছে রোজা। কিন্তু যারা গর্ভবতী, তারা কি রোজা রাখতে পারবেন? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই রয়েছে। কেননা, অনেক গর্ভবতী নারী রোজা রাখতে চান, আবার অনেকে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে ভেবে রোজা রাখা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন।

তবে প্রকৃতপক্ষে রোজা রাখা যাবে কি যাবে না তা নির্ভর করে গর্ভধারণকারী নারীর উপর। গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করেই একজন গর্ভবতী নারী চাইলে রোজা রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। রোজার আগে ডাক্তারের কাছ গিয়ে চেকআপ করানোটা খুবই জরুরি।

গর্ভবতী মা যদি সুস্থ থাকেন, গর্ভের শিশুর নড়াচড়া, ওজন, গতিবিধি সব ঠিক থাকে এবং মা যদি দ্বিতীয় তিন মাসে থাকেন তবে রোজা রাখতে পারেন। এছাড়া ইসলামে ‘ফিদায়াহ’ নামের একটি শব্দের উল্লেখ আছে যার অর্থ হলো, কোনো ব্যক্তি রোজা রাখতে অক্ষম হলে তিনি যতদিন রোজা রাখতে পারবেন না সেইসব দিনের রোজার সময় গরিব-এতিমদের খাওয়ানোর মাধ্যমে তা পূরণ করে নিতে পারেন।

তবে হ্যাঁ, গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা না থাকলে, বা কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকলে অবশ্যই সেই মা রোজা রাখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েরা যেহেতু সারাদিন কিছু খেতে পারবেন না তাই ইফতার ও সেহরিতে পুষ্টিকর খাদ্য বেশি খেতে হবে। খাবারে রাখতে হবে দুধের প্রাধান্য। আসুন জেনে নেয়া যাক গর্ভবতী মায়ের সেহেরি, ইফতার এবং রাতের খাবার মেন্যু কেমন হবে।

সেহেরি
গর্ভবতী মায়ের বুকজ্বলা বা গ্যাসের সমস্যা থাকলে সেহরির সময় যে খাবারে গ্যাস হয় বা বুক জ্বালা করে ওই খাবারগুলো অবশ্য বর্জনীয়। ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে নজর দিতে হবে।

পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা এড়াতে পানি ও তরল খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো ফল, যেমন- আম, কলা ইত্যাদি সেহরির মেন্যুতে রাখবেন। ফল ও আঁশযুক্ত খাবার ধীরগতিতে পরিপাক হয় বলে ক্ষুধা কম লাগবে।

ইফতার
ভাজা পোড়া খাবার পরিহার করে ইফতারে খেজুর, ফলের রস, চিঁড়া-দই-ফল খেতে পারেন। এতে করে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকবে। দুধ ও দুধের তৈরি খাবার রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার প্রবণতা কমায়। দুধ, লাচ্ছি, মাঠা ইত্যাদিও ভালো। এছাড়া তাজা ফল বা সবজির সালাদ, স্যুপ ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে।

রাতের খাবার
ইফতারের পর অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করুন কিন্তু বারবার খান। নানা জাতের ডাল, মাছ, মাংস, ইত্যাদি আমিষ খাবারের সঙ্গে সবজির সুষম সমন্বয়ে রাতের খাবার খেতে পারলে খুব ভালো ।

ঢেকিছাঁটা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি খাওয়া ভালো। গুরুপাক, অতিরিক্ত তেল বা ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার ইত্যাদি পরিহার করবেন। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। সেহরি না খেয়ে কখনই রোজা রাখবেন না।

রোজা রাখার আগে গর্ভবতী মায়ের প্রস্তুতি

– রোজার রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যসর্বপ্রথম একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।

– ডায়াবেটিস, অ্যানেমিয়া এবং প্রি-অ্যাকলেমপসিয়া আছে কিনা পরীক্ষা করে নিন। ডায়াবেটিস যদি থেকে থাকে তবে রোজা রাখাকালীন সময়ে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে তখন গর্ভবতী মা ও শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এছাড়া অ্যানেমিয়া আক্রান্ত মায়েরা শারিরিক দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন, তাই অতিমাত্রায় অ্যানেমিয়া আক্রান্ত মায়েদের গর্ভাবস্থায় রোজা না রাখাই শ্রেয়।

– রোজা শুরুর পূর্বে একজন পুষ্টিবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট প্ল্যান তৈরি করে রাখতে পারলে ঐ সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পুষ্টি মান অটুট থাকে।

– রমজান শুরুর পূর্ব থেকেই কফি, চা (এমনকি গ্রিন টি) এবং চকোলেট খাওয়া কমিয়ে দিতে পারলে ভালো। কারণ এগুলোতে ক্যাফেইন থাকে, যার ফলে গর্ভবতী মায়েরা রোজার সময় পানি শূন্যতায় ভুগতে পারেন।

রোজা রাখাবস্থায় যে বিষয়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে

– শরীরের ওজন সবসময় পরীক্ষা করুন।

– আপনি খুব তৃষ্ণার্ত থাকেন কি না? সেদিকে লক্ষ্য রাখুন

– প্রচণ্ড মাথা ব্যথা অনুভব করছেন কি না?

– বমি ভাব বেড়ে যাচ্ছে কি না?

গর্ভবতী মাকে সব সময় বিশ্রামে থাকার চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে দুশ্চিন্তা মুক্ত, চাপ মুক্ত থাকতে হবে। অনেক দূর হাঁটার পথ পরিহার করতে হবে। ভারী কিছু বহন করা যাবে না এবং সেহেরি, ইফতার ও রাতের খাবারের প্রতি মনযোগী হতে হবে।




error: Content is protected !!