মাওলানা মুফতি রুহুল আমিনঃ
◆ তাকবীরে তাশরীক ◆
َللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ وَلِله الحَمْدُ
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ৷
অর্থঃ আল্লাহ মহান ! আল্লাহ মহান ! আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এবং আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের ফযর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত ৫ দিনে মোট ২৩ ওয়াক্তের ফরয নামাযের পর এবং ঈদুল আযহার নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা প্রত্যেক নর নারীর উপর ওয়াজিব। তাকবীরে তাশরীক না পরলে কবীরা গুনাহ হয়৷ আর একটি কবীরা গুনাহ করাই জাহান্নামে যাবার জন্য যথেষ্ট এবং কবীরা গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না৷
* মহিলাদের নিচু স্বরে এবং পুরুষদের উচ্চ স্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হয়।
* তাকবীরে তাশরীক একবার করে পড়া ওয়াজিব। তিনবার পড়বে হবে এমন মনে করা বিদআত।
* ফরয নামাযে সালাম ফিরানোর শেষ হবার সাথে সাথে তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। কেউ যদি এ সময় তাকবীরে তাশরীক বলতে ভুলে যায়, তবে যতক্ষন সে মসজিদে থাকবে ও নামায ভঙ্গ হয় এমন কাজ না করে এবং তখন পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক বলার সুযোগ থাকবে। আর যদি নামায ভঙ্গ হয়ে যায় এমন কাজ করে তবে আর তাকবীরে তাশরীক বলার সুযোগ থাকবে না। তবে মনে না থাকার জন্য ওয়াজিব না আদায় করার জিম্মাদারী তার উপর থাকবে না। কেননা তাকবীরে তাশরীকের কাযা আদায় করার নিয়ম নাই।
* চলতি বছরের যিলহজ্জ মাসের উল্লেখিত পাঁচ দিনের ছুটে যাওয়া ফরয নামায উক্ত পাঁচ দিনের মধ্যেই কাযা আদায় করলে, কাযা নামায পর তাকবীরে তাশরীক বলতে হবে।
* অন্য সময়ের ছুটে যাওয়া ফরয নামায এই পাঁচ দিনের মধ্যে কাযা পড়লে অথবা এই পাঁচ দিনের ফরয নামায অন্য সময়ে কাযা আদায় করলে অথবা এক বছরের এই পাঁচ দিনের ফরয নামায অন্য বছরের এই পাঁচ দিনে কাযা আদায় করলে, উক্ত কাযা নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলতে হবে না।
* বাংলাদেশে অনেকে যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকেই তাকবীরে তাশরীক বলা শুরু করেন। তাদের যুক্তি বাংলাদেশের ৮ তারিখেই মক্কা ৯ তারিখ মানে আরফার দিন আর আরাফার দিন থেকেই তাকবীরে তাশরীক বলতে হয়। এটা অগ্রহনযোগ্য যুক্তি। বাংলাদেশ আর সৌদি আরবের মধ্যে সময়ের পার্থক্য সম্ভবত তিন ঘন্টা। মানে বাংলাদেশে যখন কোন নামাযের ওয়াক্ত আসে তার তিন ঘন্টা পূর্বেই সৌদি আরবে সেই নামাযের ওয়াক্ত আসে। আমরা কি সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী তিন ঘন্টা আগে সেই ওয়াক্তের নামায আদায় করি না আমাদের দেশের সময় অনুযায়ী নামায আদায় করি? একই কথা শবে বরাতের ক্ষেত্রেও। আমরা কিন্তু সৌদি আরবের পরের দিন শবে বরাত পালন করি। যে দেশে যখন ওয়াক্ত আসবে, সেই দেশে তখন থেকে সে আমল করতে হবে। আর এ নিয়ম সব আমল যেমন, নামায, রোযা, ঈদ সহ সব আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তেমনি তাকবীরে তাশরীকের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য।
হযরত ইব্রাহীম আঃ যখন পুত্র ইসমাঈল আঃ কে জবাই করার জন্য মাটিতে শুয়ে দিয়ে পুত্রের গলায় ছুড়ি চালাবেন ঠিক এমন মূহুর্তে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল আঃ কে নির্দেশ দিলেন, ইব্রাহীম আঃ পূত্রকে জবাই করার আগেই জান্নাতী দুম্বা নিয়ে পৌছে যাবার৷ জিব্রাইল আঃ খুব দ্রুত আসছিলেন কিন্তু দূর থেকেই দেখতে পেলেন ইব্রাহীম আঃ ইসমাঈল আঃ এর গলায় ছুরি চালাচ্ছেন৷ জিব্রাইল আঃ আশংকা করলেন, তিনি পৌছার পূর্বেই বুঝি ইসমাইল আঃ জবাই হয়ে যাবে৷ তিনি ঘাবড়ে গিয়ে “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার” বলে দ্রুত ইব্রাহীম আঃ এর নিকট হাজির হলেন৷ ইব্রাহীম আঃ জিব্রাইল আঃ কে দেখতে পেয়ে বললেন “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”৷ আর ইসমাইল আঃ তার পরিবর্তে দুম্বা জবাই হতে দেখতে পেয়ে বললেন “আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্”৷ এভাবে তিনজনের যিকিরকে একত্রিত করলে হয় তাকবীরে তাশরিক৷ ফতোয়া শামীতে উল্লেখিত এ ঘটনা মুহাদ্দিসীনদের নিকট সঠিক সূত্রে প্রমাণিত না৷ তাই তাকবীরে তাশরিকের সূচনায় এমনি ঘটছিল দাবি করে তর্ক করা থেকে বিরত থাকা উচিত৷ তাকবীরে তাশরিক কোন ঘটনা থেকে সূচনা হয়ে তা আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
লেখকঃ মুহাদ্দিস জামিয়াতুস সুন্নাহ, সেকান্দরনগর, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।