দেশের উন্নয়ন ও আমজনতার অর্থনীতি

প্রকাশিত: ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০

সমতটের এই বাংলা ভূখ- ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রকৃতির মিশ্র সহযোগিতাপ্রাপ্ত একটি দেশ। কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর বাংলাদেশের অবস্থান হয়েও মাথার ওপর হিমালয় পর্বত এবং পায়ের নিচে বঙ্গোপসাগর থাকায় বাংলাদেশ মরুভূমি নয় বরং মৌসুমি বায়ুম-ল ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বলয়ের কারণে সুজলা সুফলা। এ কারণেই এ দেশের প্রতি বহু বিদেশি জাতির আধিপত্যের আকাক্সক্ষা সুদূর অতীত থেকেই প্রবল ছিল। হাজার বছরের ঔপনিবেশিক শাসন তারই প্রমাণ।

গাঙ্গেয় বদ্বীপ বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের বিচিত্র খেয়ালেরও শিকারÑ বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সিডর, আইলা, গোর্কির গোলকধাঁধায় এর জীবনায়ন অর্জনে ঘটে থাকে নানান দুর্বিপাক। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে  জলবায়ুর পরিবর্তন আর পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে হিমালয়ও এখন এ দেশের জন্য আশীর্বাদের পরিবর্তে ক্রমশ হয়ে উঠছে অকাল বন্যা আর খরার কারণ। এসবের প্রভাবে এদেশের জনগণ, তাদের মূল্যবোধ, কর্মস্পৃহা এবং জীবনযাত্রা প্রকৃতির এই মিশ্র স্বভাবে সিদ্ধ। এদেশের জনগণ সরলমনা, ভাবুক, কিছুটা পরিশ্রমী এবং অল্পে তুষ্ট। শারীরিক গঠন খাদ্যাভাসের কারণে কঠোর ও দীর্ঘস্থায়ী কায়িক পরিশ্রমে অপারগ এদেশের জনগণ প্রকৃতির খেয়াল-খুশির ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। সঞ্চয়ের অভ্যাস তাই কম। এদেশের অর্থনীতিও তাই

প্রকৃতির এই মিশ্র স্বভাবে প্রভাবিত।

বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতি রাষ্ট্রীয় সীমানা ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের দ্বারাও বিশেষভাবে প্রভাবিত। বাংলাদেশের শতকরা ৭৫ ভাগ সীমান্ত ভারতীয় উন্মুক্ত ভূমি, নদী ও পাহাড়ে পরিবেষ্টিত,  ৫ ভাগ সীমান্ত মায়ানমারের সঙ্গে পাহাড়ি পথ এবং  বাকি ২০ ভাগ সীমান্ত বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূল-বঙ্গোপসাগর বিধৌত। বৃহতের পাশে ক্ষুদ্র একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পক্ষে স্বাধীন স্বয়ম্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা কিংবা মুক্তবাজার অর্থনীতির নির্দেশনা ও প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণে যে সমস্ত প্রতিকূলতা সচরাচর ঘটে থাকে, বাংলাদেশ তার থেকে ব্যতিক্রম নয় কোনো দিক দিয়েই।

বলাবাহুল্য বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ২৯ ভাগ আসে কৃষি ও তদসংশ্লিষ্ট খাত থেকে। সমতল ভূমির মোট জমির শতকরা ৯২ ভাগ ব্যবহার হয় কৃষিকাজে আর কৃষিকে অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে শতকরা ৬৪ ভাগ মানুষ। কৃষি খাতে দেশের সিংহভাগ ভূমি ব্যবহৃত এবং এ খাতেই কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস। এ পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ, উচ্চ ফলনশীল শস্যের উৎপাদনে সহায়তাকারী বীজ, উপকরণ, সার ইত্যাদি সরবরাহ, কৃষককে সহজ শর্তে মূলধন জোগান এবং তার উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিপণন ব্যবস্থা তদারকি করে কৃষি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং কৃষি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে কৃষিকেই দেশের জিডিপির অন্যতম জোগানদাতা হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে কৃষিনির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং

কৃষির উন্নয়নকামী পদক্ষেপ; নদীমাতৃক দেশে পানিসম্পদের সদ্ব্যবহার এবং নদীশাসন ও নৌযোগাযোগ; জনবহুল জনপদের জনশক্তিকে সম্পদে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশীয় কাঁচামালের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশজ সম্পদের সমাহার ঘটিয়ে উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণে স্থানীয় সঞ্চয়ের বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ, ব্যক্তি তথা বেসরকারি খাতের বিকাশ, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্ভাবনার বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের অন্যতম, বাঞ্ছিত ও কাক্সিক্ষত উপায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অনিষ্টকারী প্রভাব ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করে

কৃষিব্যবস্থাকে যতটা সম্ভব নিরাপদ সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ আশানুরূপ হলেই  বাংলাদেশের সমৃদ্ধি সাধনে অনিশ্চয়তা ও ভবিতব্যের হাতে বন্দিত্বের অবসান ঘটবে। গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল শস্যের উৎপাদনে প্রযুক্তির বিবর্তন ঘটাতে হবে, শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে সাময়িকভাবে উৎপাদন বাড়ানোর ফলে জমির উর্বরা শক্তির অবক্ষয় ঘটতে থাকলে আখেরে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। খাদ্যশস্যের বর্তমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিশেষ করে কৃষি এবং সার্বিকভাবে পরিবেশের ভবিষ্যৎ যাতে বিপন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়।

বাংলাদেশের নদীশাসনের উদ্যোগকে কার্যকর তথা পানিপ্রবাহ যথাযথ রেখে নদীর নাব্য বজায় রাখা আবশ্যক হবে। পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়া হলে কৃষিকাজ তো বটেই, সুপেয় পানির অভাবসহ পরিবেশ বিপন্নতায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাতে পারে বাংলাদেশ। অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে কৃষিজমির যথেচ্ছ ব্যবহার দুঃসহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। নৌপথে যোগাযোগের যে নেটওয়ার্ক নদীমাতৃক বাংলাদেশের, তা অত্যন্ত স্বল্পব্যয়ের হওয়া সত্ত্বেও, উপযুক্ত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগের অভাবে সেটিও ক্রমশ হাতছাড়া যাতে না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। দ্রুত এবং সহজ যোগাযোগের উপায় হিসেবে সড়ক নেটওয়ার্কের তুলনামূলক উপযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় আসার অর্থ এই হতে পারে না যে, নৌপথ বিলুপ্তির মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হতে হবে। নৌপথের ন্যায্যবিকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়াও মৌসুমি বলয়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যও অতি জরুরি। মাছ-ভাতের বাঙালির প্রধান দুই উপজীব্যের অস্তিত্ব ও বিকাশও তো দেশের অগণিত খালবিলের নাব্যর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে প্রকৃত বিনিয়োগ ক্ষেত্র হলো কৃষি। এই কৃষি থেকে খাদ্য (ভাত, মাছ, সবজি ও শর্করা) বস্ত্র, বাসস্থানের সব ব্যবস্থা হয়। কৃষি খাতকে টেকসই করে তোলার মাধ্যমে অপরাপর সংশ্লিষ্ট খাতসমূহের উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণও স্বাভাবিক হতে পারে। বাংলাদেশের স্বয়ম্ভর উন্নয়ন ভাবনা এই চিন্তাচেতনাকে অবলম্বন করে হওয়ার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।

দেশীয় শিল্প সম্ভাবনাকে উপযুক্ত প্রযতœ প্রদানের মাধ্যমে স্বয়ম্ভর শিল্পভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব। দেশজ কাঁচামাল ব্যবহার দ্বারা প্রয়োজনীয় ফিনিশড্ প্রডাক্ট তৈরিতে দেশের শিল্প খাতকে সক্ষম করে তুলতে হবে এবং এর ফলে বিদেশি পণ্যের ওপর আমদানি নির্ভরতা তথ্য মহার্ঘ্য বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে। শিল্প ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগে আর বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহারে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশিত অগ্রগতির হিসাব সংক্রান্ত তুলনামূলক সারণিগুলোর সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান ও সম্পর্কের শুমার ও বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশ অর্থনীতির অগ্রগতি ও গতিধারা শনাক্তকরণে অসুবিধা হয় না। দেখা যায় আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ জিডিপির অংশ হিসেবে ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও রপ্তানির মিশ্র প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। অস্থিতিশীল ও ভিন্ন মাত্রিক ট্যারিফ স্ট্রাকচারের প্রভাব পড়েছে বহির্বাণিজ্যে ভিন্ন অনুপাতে। এতে বোঝা যায় বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য সাধারণ সূত্র অনুসরণ করতে দ্বিধান্বিত হয়েছে। উৎপাদন না বাড়লেও সরবরাহ বাড়ার প্রবণতায় মূল্যস্থিতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে আভ্যন্তরীণ বাজারে। আবার ইনফরমাল বর্ডার ট্রেডের ফলে দেশজ উৎপাদনের বিপত্তি ঘটতেই পারে। ইনফরমাল ট্রেড বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অদৃশ্য এক অন্ধগলি ও কালো গর্ত হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের আমদানিকৃত সামগ্রী অন্যদেশে পাচার হয়েছে আবার কোনো কোনো বিদেশি পণ্যের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে গিয়ে আরোপিত ট্যারিফে দেশি সামগ্রী উৎপাদন ব্যবস্থার স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে।

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। মানুষই বড় কথা। এই মানুষের দায়িত্ব বোধের দ্বারা কর্তব্যকর্ম সুচারুরূপে সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। আবার এই মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে সমাজের সমূহ ক্ষতিসাধিত হয়। সবার সহযোগিতা ও সমন্বিত উদ্যোগে সমাজ নিরাপদ বসবাসযোগ্য হয়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানীরা তাই মানুষের সার্বিক উন্নয়নকেই দেশ জাতি রাষ্ট্রের সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করে থাকেন। সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণ সৃষ্টিতে মানুষের সার্বিক উন্নতি অপরিহার্য শর্ত। আগে সমাজ না আগে মানুষ এ বিতর্ক সর্বজনীন। মানুষ ছাড়া মনুষ্য সমাজের প্রত্যাশা বাতুলতামাত্র। রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার এবং দায়িত্ব নির্ধারিত আছে। কিন্তু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা অধিকার আদায়ের সম্ভাবনা ও সুযোগকে নাকচ করে দেয়। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি না হলে চাহিদা অনুযায়ী ভোগের জন্য সম্পদ সরবরাহে ঘাটতি পড়ে। মূল্যস্ফীতি ঘটে, স¤পদপ্রাপ্তিতে প্রতিযোগিতা বাড়ে। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করে যে মানুষ সেই মানুষই ভোক্তার চাহিদা সৃষ্টি করে। উৎপাদনে আত্মনিয়োগের খবর নেই- চাহিদার ক্ষেত্রে ষোলআনা- টানাপড়েন তো সৃষ্টি হবেই।

সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা ঠুনকো কার্যকারণকে উপলক্ষ করে নেওয়া পদক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী ফল বয়ে আনে না। শুধু নিজের মেয়াদকালে বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ ও কার্যক্রম গ্রহণ করলে, ধারাবাহিকতার দাবিকে পাশ কাটিয়ে ইতিপূর্বে গৃহীত কার্যক্রমকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার রেওয়াজ শুরু হলে টেকসই উন্নতির সম্ভাবনা সীমিত হয়ে পড়ে। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য দূরদৃষ্টি রূপকল্প প্রণয়নকারীর, প্রগাঢ় প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ়প্রত্যয় প্রয়োজন হয়। সমস্যা গোচরে এলে ব্যবস্থা নিতে নিতে সব সামর্থ্য ও সীমিত সম্পদ নিঃশেষ হতে দিলে প্রকৃত উন্নয়নের জন্য পুঁজি ও প্রত্যয়ে ঘাটতি তো হবেই। তেল আনতে নুন ফুরায় যে সংসারে সেখানে সমৃদ্ধির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। সমস্যারা পরস্পরের মিত্র, একটার সঙ্গে একটার যেন নাড়ির যোগাযোগ। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যক্তি নিরাপত্তার, ব্যক্তি নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার, সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে আয় উপার্জনের সব কার্যক্রমের কার্যকারণগত সম্পর্ক রয়েছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে চাই আয় উপার্জনের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। সর্বত্র সেই পরিবেশের সহায়তা একান্ত অপরিহার্য যেখানে সীমিত সম্পদের ও সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব। একটাকে উপেক্ষা মানে যুগপৎভাবে অন্যান্য অনেক সমস্যাকে ছাড় দেওয়া। সমস্যার উৎসে গিয়ে সমস্যার সমাধানে ব্রতী হতে হবে।

বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে এর সম্পদশালিতায় ভাগ বসাতে এর সৌন্দর্যময়তায় মুগ্ধ  হয়েই এখানে যুগে যুগে নানান বেশে বিদেশিদের আনাগোনা ঘটেছে। নিজেদের আত্মত্যাগের ফসলকে অন্যের অবদান হিসেবে পরিচিতিকরণের সংস্কৃতি ও মানসিকতা সৃজিত হয়েছে। ভেতর থেকেই সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নাম করে তোষণ পোষণের তরিকা যেমন বেরিয়ে এসেছে আবার উত্থিত বিরোধিতাকে বাইরের সাহায্য নিয়েই অবদমনের প্রয়াস চলেছে। ফলে এদেশের উন্নয়ন বারবার হোঁচট খেয়েছে পথেঘাটে ছড়ানো ছিটানো সংশয় সন্দেহের অবগঠিত ষড়যন্ত্রের নুড়ির আঘাতে। আর এভাবে আত্মঘাতি বাঙালি পদবাচ্যে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার ক্ষেত্রে নিজেদের তৎপরতায় তাদের কাটে অধিকাংশ সৃজনশীল সময়, মনোযোগে মন্দা আর উন্নয়নে ভাটা। সমূহ সম্ভাবনাময় হয়ে এসব আপদ বিপদের সুদাসলে সঞ্চয় ভেঙে যায়, তৈলাক্ত বাঁশের মতো জিডিপির গ্রোথ বাড়ে কমে, আত্মবিশ্বাসে ঘুণ ধরে, আত্মমর্যাদা সংশয় সন্দেহের উইপোকায় খেয়ে ফেলে। এসব রোগবালাই না থাকলে সুস্থ সবল দেহে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এত বিলম্ব ঘটত না। এসব অপঘাত অপযাত্রা অপবাদ অপপ্রয়াস এড়িয়ে চলতে পারলে বাংলাদেশের জিডিপি, রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বাণিজ্য, প্রকৃত শিক্ষিতের হার, প্রশিক্ষিত শ্রমিক আর জনসম্পদ উন্নয়নের মাত্রা বর্তমানের চাইতে দ্বিগুণ হতে পারত নিঃসন্দেহে। জগৎ সভায় অন্যান্য অনেক সহযাত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটত সাফল্যের শামিয়ানার নিচে।




error: Content is protected !!