পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা

প্রকাশিত: ১২:৫৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

ভোগ্যপণ্য বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। আজ বৃহস্পতিবার এই বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিতে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৮০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দামে ধ্স নামার কারণগুলো হচ্ছে, ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহারের গুজব, মিয়ানমার থেকে অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি এবং খুচরা বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া।

পাইকারি বাজারে আজ ছয় দেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সবচে কমদামে। এরমধ্যে ভালো মানের চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ৫০ টাকা, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আসা মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। হল্যান্ডের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত মঙ্গলবারও সেব পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ১শ টাকা কেজিতে।

দাম কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্লাহ মার্কেট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, টেকনাফ দিয়ে প্রচুর পেঁয়াজ ঢুকেছে; আসার পথেও আছে অনেক পেঁয়াজ। আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও ঢুকেছে বিভিন্ন দেশের পেঁয়াজ। কিন্তু সেই অনুযায়ী বাজারে চাহিদা নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দাম কমেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুুদিন ধরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এখনো আসার পথে রয়েছে ৭০টি ট্রাক; যেখানে পেঁয়াজ রয়েছে এক হাজার টনের বেশি। ফলে সরবরাহ বেশি হয়ে যাওয়ায় দাম কমেছে। কারণ সব পেঁয়াজের দাম কমলেও পাইকারিতে মিয়ানমারের পেঁয়াজ এখন পর্যন্ত কেজি ১শ টাকার নীচে নামেনি। অথচ গতকাল বুধবার বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়।

আড়তদার নাজিম উদ্দিন বলছেন, এখন পেঁয়াজের বাজারের অবস্থা খাদের কিনারে। একটু এদিক-ওদিক হলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে। একটু বৃষ্টিতে সরবরাহ বন্ধ হলেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, সেটা ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি। এখন বাজারের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখতে নিয়মিত সরবরাহ বাড়ানো নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আবারও দাম বেড়ে যাবে।

এদিকে, দাম কমার আরেকটি কারণ হচ্ছে দু-তিনদিন ধরে বাজারে গুজব রটেছে ‘ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে’। এই গুজবে বাজারে দামে ধ্বস নেমেছে। কারণ সব ব্যবসায়ীদের ধারনা, ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসলেই অন্য যেকোন দেশের পেঁয়াজের দামে ধ্বস নামবে।

জানা গেছে, মুলত এই গুজবের কোন ভিত্তি নেই। ভারতে আমদানিকৃত এবং অবিক্রিত কিছু পেঁয়াজ কমদামে বাংলাদেশে বিক্রির প্রস্তাবকে ঘিরেই এই প্রচারনা তৈরি হয়েছে।

ভারতের গণমাধ্যম দি প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, পেঁয়াজের বাজার যখন একশ রুপি ছাড়িয়ে যায় তখন বাজার নিয়ন্ত্রনে ভারত সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। এবং বিভিন্ন প্রদেশে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে। ইদানিং ভারতে পেঁয়াজের উত্পাদন ও সরবরাহ বাড়ায় বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো আমদানিকৃত পেঁয়াজ অবিক্রিত থেকে যায়। সেই পেঁয়াজ কেন্দ্রে ফেরত পাঠানোর কারণে আমদানিকৃত পেঁয়াজ পঁচে যাওয়ার শঙ্কা তৈরী হয়। এই অবস্থায় ভারত আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজ প্রতি টন ৫৫০ থেকে ৫৮০ ডলারে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে। ভারতের যুক্তি হচ্ছে, এসব পেঁয়াজ প্রতি টন ৬০০ থেকে ৭০০ ডলারে কেনা। বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার রকিবুল হক বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ার কথা বললেও এসব পেঁয়াজ নিবেন কিনা সিদ্ধান্ত জানাননি।

এই খবর দেশের বাজারে প্রচার হলে পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা বলেন, পঁচা পেঁয়াজ কেন আমরা আনবো? এটা তো দয়া নয়। এ বিষয়ে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় নিম্নমানের পেঁয়াজ আমাদের দেশে পাঠানোর যে প্রস্তাব ভারত সরকার দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে আমাদের জন্য আত্মঘাতি হবে। কারণ ভারতের ভোক্তারা যেই পেঁয়াজ খেতে চাইছে না; সেটি আমাদের গছিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ পেঁয়াজ সংকটের সময় ভারত আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। দেশের ব্যবসায়ীরাই পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার ধরে রেখেছেন।




error: Content is protected !!