মাওলানা মুফতি রুহুল আমিনঃ
বিশ্ব যখন মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। মহামারির এ পরিস্থিতিতে কোরবানি দিব কি দিব না বা এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।
ইসলামে কোরবানির গুরুত্ব অতি ব্যাপক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোন মহামারির সময় একজন মুমিন তার ইবাদতে দুর্বলতা দেখায় না বরং আরও গতির সাথে ইবাদতে রত হয়। করোনা পরিস্থিতি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পশু কোরবানি থেকে বিরত থাকার কোন বিধান ইসলামে পাওয়া যায় না। তাই করোনার অজুহাতে কোরবানির বিধান কোনো অবস্থাতেই শিথিল হতে পারে না। সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের অবশ্যই কোরবানি আদায় করতে হবে।
কেবল গোশত খাওয়াই এ কোরবানির উদ্দেশ্য নয় বরং কোরবানির পশুর মত নিজেদের পশুত্বকে বলি দেওয়ার শিক্ষাও আমরা এ থেকেই পেয়ে থাকি।
আল্লাহপাক বলেছেন, ‘এগুলোর মাংস বা এদের রক্ত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার কাছে তোমাদের পক্ষ থেকে তাকওয়া পৌঁছে।’ (সুরা হাজ, আয়াত: ৩৭) হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত অনুযায়ী মহানবীর (সা.) নির্দেশে কোরবানি পালনের মাধ্যমে প্রতি বছর একজন মুসলমান নিজের মাঝে তাকওয়াকে আর একবার ঝালিয়ে নেন যেন প্রয়োজনের দিনে আল্লাহর পথে কোরবানির পশুর ন্যায় নিজেকে সমর্পণ করতে পারেন।
প্রত্যেক বছরই কোরবানি করা আবশ্যক। কোরবানির গুরুত্ব তুলে ধরে মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময় তার উম্মতকে নসিহত করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হে লোক সকল! জেনে রাখ, প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রত্যেক বছরই কোরবানি করা আবশ্যক।’ (আবু দাউদ ও নাসাঈ)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য লাভ করে অথচ কোরবানির আয়োজন করেনি, সে যেন আমাদের ঈদ গাহের কাছে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ)। হজরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) মদিনায় দশ বছর অবস্থানকালে প্রতি বছর পশু কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি)
অথচ মহানবীর (সা.) মদিনা জীবনের প্রারম্ভের কয়েকটি বছর অত্যন্ত কষ্ট ও দারিদ্রের মাঝে মুসলমানদেরকে অতিবাহিত করতে হয়েছে। তাই কেউ যদি মনে করে, করোনা পরিস্থিতি এ বছর কোরবানি না দিলে কি এমন ক্ষতি তা মোটেও ঠিক হবে না। এমনটি মনে করা মহানবীর (সা.) আদর্শের বিরুদ্ধে হবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহানবী (সা.) এবং তার সাহাবিরা (রা.) কত কষ্টই না সহ্য করেছেন, কিন্তু কখনই তার পবিত্র সাহাবিগণ (রা.) একবারের জন্যও বলেন নি যে, হে আল্লাহর রাসুল! এ বছর আমাদের জন্য কোরবানি করাকে মাফ করে দিন। এমন প্রশ্ন কখনো উত্থাপনই করা হয় নি। তাহলে কীভাবে আমরা এ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারি যে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানিতে অংশ না নিলে হয় না। তাই করোনার জন্য কোরবানি করা থেকে বিরত থাকার কোন অনুমতি যে ইসলাম দেয় না তা আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝতে হবে।
কোরআন-হাদিস এবং বুযুর্গানে দ্বীনের ভাষ্য থেকে যতটুকু জানা যায়, কোরবানির পেছনে যে উদ্দেশ্যটি কাজ করা আবশ্যক তা হলো তাকওয়া বা আল্লাহর সন্তুষ্টি। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার একমাত্র পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জবাই করতে উদ্যত হয়েছিলেন। যে কোরবানির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কাজ করে না সে কোরবানি, কোরবানির আওতায় পড়ে না।
পরিশেষে এটাই বলব, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই কোরবানি দিতে হবে। এছাড়া যাদেরকে আল্লাহ সচ্ছলতা দান করেছেন তারা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গরীব এলাকায় নিজেদের পক্ষ থেকে কোরবানির ব্যবস্থা করে অশেষ কল্যাণের ভাগি হতে পারেন। এতে আল্লাহর হক এবং বান্দার হক উভয় আদায় হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে আমাদেরকে কোরবানির পশু ক্রয় করা থেকে নিয়ে অন্যান্য সব কাজে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নিতে হবে। আমরা যেন সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখি।
মুহাদ্দিস-জামিয়াতুস সুন্নাহ, সেকান্দরনগর, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।