টাঙ্গাইলে বিউটিশিয়ান মে‌য়েরা এখন দিনমজুর।

প্রকাশিত: ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২০

আলামিন খান টাঙ্গাইল প্রতিনিধি।
পারলারে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে রূপের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা ছিলো তা‌দের কাজ। ‌কিন্তু তারা কখ‌নো ‌কি ভে‌বে‌ছিল অদৃশ‌্য মরণঘাতী ক‌রোনাভাইরা‌সের কার‌ণে তারা কর্মহীন হ‌য়ে পড়‌বে। আর তা‌দের গ্রা‌মে ফি‌রে গি‌য়ে মা‌ঠে দিনমজু‌রের কাজ কর‌তে হ‌বে। আর সেই দিনমজু‌রের টাকায় সংসার চলবে। বল‌ছিলাম টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপ‌জেলার আ‌দিবাসী সম্প্রদা‌য়ের বিউ‌টি‌শিয়ান‌দের কথা। ক‌রোনায় কর্ম হা‌রি‌য়ে গ্রা‌মে গি‌য়ে এখন দিনমজুরের কাজ কর‌ছেন তারা। ত‌বে নারী হওয়ায় তা‌দের কা‌জে না নেওয়ার অ‌ভি‌যোগ আ‌ছে। যার ফ‌লে বিউটি পারলারে কর্মরত নারীরা কর্মহীন হয়ে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছে। স‌রেজ‌মিনে গিয়ে দেখা যায়, মধুপুর গড়ের চুনিয়া গ্রাম। এই গ্রামটি বিউ‌টি‌শিয়ানদের গ্রাম বলা হয়। এই গ্রা‌মের ‌বিউ‌টি‌শিয়ান অ‌নে‌ক মে‌য়েই এখন অন্যের জমিতে কাজ কর‌ছেন। ত‌বে কেউই পেশাদার শ্রমিক নয়। ক‌রোনার আ‌গে তারা সবাই টাঙ্গাইল, ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের রূপের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার কা‌রিগর ছিল। তারা সমাজের মূলস্রোত থেকে পিছিয়ে থাকা পশ্চাৎপদ পাহাড়ি এই জনপদের মাতৃতান্ত্রিক আদিবাসী। মাতৃতান্ত্রিক নিয়মে পরিপাটি করে বাড়িটি সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব তার। তবে তার থেকেও গুরুদায়িত্ব বাড়ির সকলের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। অতীতে যাদের অধিকাংশের আয়ের উৎস ছিলো দিনমজুরি, বর্তমানে তাদের পরিবারের একাধিক সদস্য বেছে নিয়েছেন বিউটিশিয়ান পেশা।
বেসরকারি উন্নয়ন সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউমেন ডেভেলপমেন্ট (সেড) এর হি‌সেব ম‌তে, ২০১৮ সালে ৪৪টি গ্রামের জরিপে দেখা গেছে মধুপুর এলাকায় ১৭ হাজার ৩ শ ২৭ জন গারো সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যে ১১ শ ৩১ জন নারী দেশের বিভিন্ন জেলায় বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করছে। যা তাদের মোট জনসংখ্যার ৬.৮ শতাংশ। কলা বাগানের
জ‌মি‌তে কাজ করা ওই বিউ‌টি‌শিয়ানরা ব‌লেন, করোনাকালে সেই স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের স্বপ্নে ছেদ ঘটিয়ে ঠেলে দিয়েছে অনি‌শ্চিত আগামী। পেশা বন্ধ থাকায় জীবন বাঁচিয়ে রাখা রীতিমত যুদ্ধ হলেও মানবিক সহায়তার হাত বাড়ায়নি কেউ। উপ‌জেলার শোলাকু‌ড়ি ইউ‌নিয়ন প‌রিষদ চেয়ারম‌্যান আকতার হো‌সেন ব‌লেন, বিউ‌টি‌শিয়ানরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় এর নে‌তিবাচক প্রভাব পড়ে‌ছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। এখন পর্যন্ত তারা কোনো সহ‌যো‌গিতা পায়‌নি।
মধুপুর আদিবাসী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ইউলিয়াম দাজেল ব‌লেন, অপেশাদার শ্রমিক হওয়ায় কাজেও নিচ্ছে না মালিকপক্ষ। এজন্য কোনোদিন ভাগ্যক্রমে কাজ জুটলেও অধিকাংশ দিনই অতিবাহিত করতে হয় অনাহারে-অর্ধাহারে। এবিষয়ে
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা জহুরা সাংবাদিকদের জানান, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বিউটিশিয়ানে কাজ করা কর্মহীনদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে ।




error: Content is protected !!