ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললে ক্যান্সার, হৃদরোগজনিত সমস্যা ও টাইপ টু ডায়বেটিস ছাড়া দীর্ঘ জীবন লাভ সম্ভব। এর ফলে নারীদের অতিরিক্ত ১০ বছর এবং পুরুষদের সাত বছর পর্যন্ত বেশি বাঁচার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যায়াম, পরিমিত মদ্যপান, ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ধূমপানবিহীন জীবনযাপন নিশ্চিত করলে দীর্ঘায়ু লাভ সম
মার্কিন এ গবেষণাটি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এক লাখ ১১ হাজার মানুষের ওপর চালানো হয়েছে।
গবেষণার প্রধান গবেষক ও হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের শিক্ষক ডক্টর ফ্র্যাঙ্ক হু বলেন, এ গবেষণাটি ‘জনগণের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা’ দিয়েছে।
“মানুষ যে শুধু জীবনে বেশি সময়ই পাচ্ছে, তাই নয়, জীবনযাত্রার ধরণ পরিবর্তন করার সাথে সাথে বছরগুলো রোগহীনও হবে।”
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা কী?
গবেষণার জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করা হয় তারা নিম্নোক্ত পাঁচটি কাজের কমপক্ষে চারটি করেন কিনা?
১) কখনো ধূমপান না করা
২) স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার
৩) ৩০ মিনিট পরিমিত অথবা কঠোর ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম
৪) ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই
৫) নারীদের জন্য দৈনিক ছোট এক গ্লাস ওয়াইন বা পুরুষদের জন্য এক বোতল বিয়ারের বেশি মদ নয়
যেসব নারীরা বলেছেন যে এই পাঁচটির কমপক্ষে চারটি তারা করেন, তারা গড়ে আরো ৩৪ বছর হৃদরোগ (হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক) ও টাইপ টু ডায়াবেটিস জাতীয় রোগ ছাড়া বেঁচে থাকেন – যেসব নারী এই পাঁচটির কমপক্ষে চারটি করেন না তারা এসব রোগের প্রকোপে না পড়ে গড়ে অন্তত ১০ বছর কম বাঁচেন।
স্বাস্থ্যবান পুরুষদের মধ্যে যারা পাঁচটির চারটি কাজ করেন তারা রোগহীনভাবে ৩১ বছর বেশি বাঁচেন – যা অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্থ্যবান পুরুষদের চেয়ে কমপক্ষে সাত বছর বেশি।
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পার্থক্য কী?
পুরুষদের চেয়ে সাধারণত নারীরা গড়ে বেশিদিন বাঁচেন।
গবেষণা অনুযায়ী, যেসব পুরুষ দিনে ১৫টির বেশি সিগারেট পান করেন এবং অতিরিক্ত ওজন যেসব পুরুষ ও নারীর, (যাদের বিএমআই ৩০ এর বেশি) তাদের রোগহীন প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল সবচেয়ে কম।
তবে দুই লিঙ্গের জন্যই কিছু বিষয় সত্য – স্বাস্থ্যকর জীবন শুধু ক্যান্সার, হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই কমায় না, এ ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়া নারী ও পুরুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বাড়ায়।
এই রোগগুলোকে কেন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে?
ক্যান্সার, হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিস বৃদ্ধ বয়সের সবচেয়ে সাধারণ রোগ। এই রোগগুলো মানুষের জীবনযাত্রার সাথে খুবই নিবিড়ভাবে জড়িত।
উদাহরণস্বরূপ, স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন থাকার সাথে ১৩টি ভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয় – যার মধ্যে স্তন, অন্ত্র, কিডনি, যকৃত ও খাদ্যনালী রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০টির মধ্যে চারটি ক্যান্সারে প্রতিরোধ করা সম্ভব জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে। যার মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত গোস্ত খাওয়া কমানো, আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া এবং সূর্য থেকে ত্বককে বাঁচিয়ে চলা।
অন্যান্য বিষয় কী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে?
এই গবেষণাটি ছিল একটি বিস্তৃত ও পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা, কাজেই জীবনযাত্রার কোন কোন বিষয়গুলো রোগমুক্ত জীবনে সরাসরি ভূমিকা রাখে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারা সম্ভব হয় না এই গবেষণার মাধ্যমে।
তবে পরিবারের সদস্যদের রোগের ইতিহাস, জাতিগত পরিচয় ও বয়সের মত বিষয়গুলো আমলে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণায়।
গবেষণাতে মানুষের বর্তমান খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের রুটিন, শারীরিক গঠন (উচ্চতা ও ওজন) জানার জন্য অংশগ্রহণকারীকে প্রশ্ন করে জানা হয়েছে, যা সবসময় শতভাগ সঠিক হয় না।
গবেষণায় অংশ নেয়া প্রায় ৭৩ হাজার নারী ও ৩৮ হাজার পুরুষের অধিকাংশই ছিলেন স্বাস্থ্যখাতে কাজ করা শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি।