উমার রাযী।
আজ ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের ৩য় মৃত্যু বার্ষিকী। ২০১৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতে নির্মম-নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনাটি দেশব্যাপী বেদনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকা-ের খবর প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একজন মানুষকে একদল বিপদগামী এভাবে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে? এটা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। জাতি হিসাবে আমরা কি এত নীচে নেমে গেলাম! দেশের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির ছাত্র এত নৃশংস ও নির্মম হয়ে উঠল! আবরার ফাহাদের হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটির জের ধরে আন্দোলন, বিক্ষোভ, গ্রেফতার ও দাবি-দাওয়ার খবরগুলো প্রায় সবাইর জানা। এমন ঘটনা কেন ঘটলো ? এজাতীয় নৃশংস ঘটনার আড়ালে কী কী বিষয় আছে? কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন নারকীয় হত্যাকান্ড-থেকে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকা সম্ভব এসব প্রশ্ন জনমানুষের মনে। জানা যাক কি ছিল আবরার ফাহাদের ফেইসবুক স্ট্যাটাস ‘৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।
কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”
আবরারে স্ট্যাটাসের বিচার-বিশ্লেষণ জাতির কাছে। শুধুমাত্র ছেলেটির ফেসবুক স্ট্যাটাস, চিন্তাধারা তাদের মতের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে একজন মায়ের বুক খালি হয়ে যাবে? মৃত্যুতো সহজ জানতাম, গান শুনেছি এক সেকেন্ডের নাই ভরসা, কিন্তু এবার জানলাম মানুষ মারাও সামান্য ব্যাপার! একজন সহপাঠীকে তার ফেসবুক স্ট্যাটাস পছন্দ হয়নি বলে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়! বাহ! কী অবাধ ক্ষমতা। কী অপার শক্তি। যেন কানের কাছে ভোঁ ভোঁ করে বিরক্ত করছিল কোনও মশা। এক থাপ্পড়ে মারার মতোই সহজ।
স্যোশাল মিডিয়ায় কারও প্রতি বিরক্ত হলে তাকে শেষ করে দেওয়ার তরিকা আছে। ব্লক করে দাও। ‘হারামজাদাকে’ দেখতে হল না। কিন্তু আবরারতো শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই, তাদের চোখের সামনেও আছে। তাকে যেহেতু হাতের কাছে গোবেচারা হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, বাস্তবে ব্লক করে দিতে সমস্যা কোথায়! শুধু সোশ্যাল মিডিয়া না, দুনিয়াতেই চোখের সামনে পড়তে পারবে না সে। হাসতে হাসতে, মারতে মারতে শেষ করে দিয়েছে তারা একটি মেধাবী ছেলের জীবন প্রদীপ।