
মুফতি রুহুল আমিন;
যদি কোনো ব্যাক্তি বড় কামেল পীর, বড় বুজুর্গানে দ্বীন, বড় আলেম হয়। কিংবা সে যত বড়ই স্কলার আর পন্ডিত হোক না কেনো, তার ঝুঁলিতে ডিগ্রির সনদপত্র যতোই উপচে পড়ুক। তার জানার পরিধি যদি উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্তও যদি বিস্তৃত হয়। তার কাছে যদি বিনয় না থাকে। তাকে যদি আমি আত্মম্ভরিতার মাঝে বিভোর পাই। যদি অহংকারে তার পা মাটিতে না ঠেকে। তাহলে অন্তত নিজের জন্য, নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে হলেও আমি তার কাছ থেকে কোনো জ্ঞান নিতে আগ্রহী নই। তার কোনো মজলিসে, তার কোনো আলোচনাতেও আমি বসতে চাই না।
কেউ কিচ্ছু জানে না কেউ কিচ্ছু বুঝে না বলে আমরা যারা নিজেদের জাহির করি। আমাদের জানা থাকা উচিত বেদুইনদের মধ্য থেকে কোনো একজন নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমি যদি কালেমার সাক্ষ্য দিই, সালাত পড়ি, সিয়াম রাখি, সাধ্য থাকলে যাকাত দেই এবং হজ করি তাহলে কি আমি জান্নাতে যেতে পারবো?
নবিজী সা. বললেন, হ্যাঁ। জান্নাতে যাওয়ার জন্য তুমার এটুকুই যথেষ্ট।
জান্নাতে যাওয়ার জন্যে জ্ঞানে টইটম্বুর হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু জ্ঞানে টইটম্বুর হয়ে আমি যদি অহংকার এবং আত্মম্ভরিতায় ভুগি, তাহলে আখিরাতে আমার যাবতীয় জ্ঞান আমার জন্যে বিপদ হয়ে দাঁড়াবে।
বিনয় হলো জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। যে লোক যতো বেশি জ্ঞানী, তার বিনয়ের পরিমাণ ততো বেশি। বলা হয়, যে গাছে ফলের পরিমাণ যতো বেশি, সে গাছ ততোবেশি মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ে। আরো বলা হয়, যে-নদী যতো গভীর, তার বয়ে চলার শব্দও ততো কম।
আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন, আমি আগে বিশ বছর আদব শিখেছি, পরের ত্রিশ বছর শিখেছি জ্ঞান।
জ্ঞানে টইটম্বুর হয়ে আমাদের যদি দিন শেষে আদবের গন্ডি থেকেই বেরিয়ে যেতে হয়। তাহলে এমন অভিশপ্ত জ্ঞান লাভ করা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়াটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ইবলিশ ধ্বংস হয়েছে নিজের আমিত্বের জন্যে। কেউ যদি ‘আমিত্ব’ নিয়ে বড়াই করে, তার কাছ থেকে দ্বীন শেখার চাইতে নিজেকে মূর্খ রেখে দেওয়াই উত্তম বলে আমি মনে করি।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহিহ বুঝ-শক্তি দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।