সব শ্রেণির মানুষই হাসুক এই ঈদে

প্রকাশিত: ১:০৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২০

রুহুল আমিন;

রাত পোহালেই ঈদুল আযহা। মুসলিম উম্মাহর প্রধান দুটি উৎসবের মাঝে একটি হলো ঈদুল আযহা। এই ঈদের প্রধান প্রধান আনন্দ হলো পশু কুরবানী করা।
কিন্তু করোনা ভাইরাস ও বন্যার প্রাদুর্ভাবে শুধু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে তা নয়। শিল্প-কারখানা, ব্যাবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক ধস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগাতার বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘঠাসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যেও ব্যপক পরিবর্তন চলছে।অথচ অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এদেশের হাজারো এতিম শিশু, প্রান্তিক কৃষক ও খামারি এবং সম্বলহীন বিপর্যস্ত বহু মানুষের জীবন।

বর্তমানে বন্যার পানি দেশবাসীকে চরম দূর্ভোগে ফেলেছে। এদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থা ও জনসাধারণের জীবনচক্রকে সচল রাখতে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আছি আমরা। গ্রামের ঘরবাড়িসহ শহরের অনেক হাট-বাজার বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। বহু জেলা-উপজেলা পানিতে তলিয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। সিন্ডিকেট গ্রুপের কারণে ত্রাণ-সামগ্রী সবার কাছে পৌঁছাচ্ছেনা।

পরিস্থিতি সরকারের একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিত্তবান, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, এনজিও ও সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যার যতঠুকু সাধ্য তা নিয়েই এগিয়ে আসাটা সামর্থ্যবান সকলের মানবিক কর্তব্য। অন্যদিকে মধ্যবিত্তরা বড় সংকটে পড়েছে। তারা না পারে সইতে, না পারে কইতে, না পারে কারো কাছে হাত পাততে বা ত্রাণসামগ্রী চাইতে। তাই বিশেষভাবে তাদের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ব্রাকসহ আরো কয়েকটি সংস্থা সম্মিলিতভাবে একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে নতুন করে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চলে এসেছে। কিন্তু এরা কারা? এরা সবাই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ।

আমরা জানি যে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি ঘটে। পশু বিকিকিনি, চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে দেশের রপ্তানি আয়ের যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছিল, তা সিন্ডিকেটের তৎপরতায় ক্রমেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে অগ্রসর হচ্ছে। যার ফলে এদেশের চামড়া শিল্প ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চাই না, যেভাবে এদেশের পাট শিল্প ধ্বংস হয়েছে সেভাবে চামড়া শিল্পও ধ্বংস হয়ে যাক! অথচ এর সাথে যে অনেক বড় একটি জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কুরবানি পশুর চামড়ায় কত গরিব ও দরিদ্র শিশু বাঁচে। কুরবানি চামড়ার মূল্য না থাকায় উৎসবের হাসি যেন চিরতরে হারিয়ে গেছে তাঁদের আনন-নয়ন থেকে। এদেশের অনেক দরিদ্র-গরীব শিশু আগামীতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারের এখনি সময় দেশের নিঃস্ব সর্বহারা মানুষগুলোর দিকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করা।

পরিশেষে বলতে চাই, করোনা এবং বন্যার এই করুণ পরিস্থিতিতে সকল অসামর্থ্য ও প্রকৃত অভাবিদের মধ্যে প্রথমত একটি জরিপ প্রয়োজন এবং তাদের বাঁচার জন্য সুস্পষ্ট রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনাও প্রয়োজন। যে পরিকল্পনায় থাকবে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র ও অভাবীদের সমস্যা ভিত্তিক সুস্পষ্ট উপখাত। পৃথক পৃথক বরাদ্দ এবং অর্থ ব্যবস্থাপনার সঠিক দিক- নির্দেশনা। কাজেই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মধ্যবিত্তসহ অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত মানুষদের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন নতুন নতুন পরিকল্পনা-প্রকল্প এবং তার সৎ-সঠিক বাস্তবায়ন। মহান রাব্বুল আলামিনের সকাশে অকাতরে প্রার্থনা করি তিনি যেন এই কালো মেঘ সরিয়ে নেন।তবেই সবাই মিলে হাসতে পারবো খুশি ও সুখের হাসি।

লেখকঃ দৈনিক অপরাধ
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি




error: Content is protected !!