দুই বছরে ৩৩ মণ সোনা আটক

প্রকাশিত: ১২:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

যাত্রী তল্লাশি ও ব্যাগেজ খতিয়ে দেখতে স্ক্যানার মেশিন খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিমানবন্দর কাস্টমসে রয়েছে সংকট। যাত্রী ব্যাগেজ যাচাইয়ে ছয়টি স্ক্যানার মেশিনের মধ্যে চারটিই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। দুটি স্ক্যানারে যাত্রী সেবা প্রদান করছে ঢাকা কাস্টম হাউস। নতুন স্ক্যানার মেশিন আনা হলেও এখনো বসানো হয়নি।

বিমানবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, এয়ারপোর্ট ইউনিট, এয়ার ফ্রেইট, কুরিয়ার ইউনিট ও রপ্তানি ইউনিটে কার্যক্রম চলছে। ফ্রেইট ইউনিটে স্ক্যানার একটি ও কুরিয়ার ইউনিটে রয়েছে একটি। দীর্ঘদিন কুরিয়ার ইউনিটে কোনো স্ক্যানার ছিল না নতুন করে বসানো হচ্ছে। এয়ারপোর্ট ইউনিটে যাত্রীর ব্যাগেজ যাচাইয়ে স্ক্যানার রয়েছে ছয়টি। যার মধ্যে চারটি স্ক্যানার অকেজো ও নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। নতুন করে স্ক্যানার আনা হয়েছে কিন্তু এখনো বসানো হয়নি।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, স্ক্যানার বসানোয় যাত্রীসেবায় দ্রুততা এসেছে। বেড়েছে স্বচ্ছতাও। যাত্রী হয়রানি আগের চেয়েও কমেছে। কর্মকর্তাদের সজাগ দৃষ্টির কারণে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির পরিমাণও কমেছে। দ্রুততার সঙ্গে পণ্য ডেলিভারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম হওয়ায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। পর্যাপ্ত জনবল বাড়ানো গেলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে আরো গতি আসবে। জনগণকে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কাস্টম হাউসে সরকার কর্তৃক জনবল মঞ্জুরি রয়েছে ৬৩২ জন কিন্তু বর্তমানে রয়েছে ৩৭৩ জন। জনবলের প্রয়োজন থাকলেও না পেয়ে দৈনিক ভিত্তিতে লোকবল দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীসেবা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে জনবল নিয়োগ খুবই প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, পণ্য আমদানিতে বিমানবন্দর কাস্টমসে কড়া নজরদারির কারণে আকাশপথে পণ্য আমদানি আগের চেয়ে কিছুটা নিম্নমুখী। স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মিথ্যা ঘোষণা ঠেকানোয় সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে। আগে যে পরিমাণ পণ্য এসেছে, এখন পণ্য কম এলেও সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে। কর ফাঁকি দিতে এইচএস কোড পরিবর্তন করলেও সেটা খতিয়ে দেখে বাড়তি শুল্ক আরোপ করে পণ্য খালাস করা হচ্ছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতেও অভিযান চালিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। হয়রানি না করেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য পাচ্ছেন আমদানিকারক।

২০১৮ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঢাকা কাস্টম হাউসের মাধ্যমে দুই কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৯ কেজি বা ২১ হাজার ৫৬৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। টাকার অঙ্কে ১৩ হাজার ৬৯৪ কোটি ৮৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এই আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে এক হাজার ৮৩০ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। ভ্যাট থেকে এসেছে ৯৭৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ১০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রেগুলেটরি শুল্ক ৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা, কাস্টমস শুল্ক (সিডি) ৬৮৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আর জরিমানা থেকে আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ঢাকা স্টক কাস্টমসের মাধ্যমে ২৯ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে, টাকার অঙ্কে ১৮ হাজার ৮৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এই পণ্য আমদানিতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে দুই হাজার ১৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। ভ্যাট থেকে এসেছে এক হাজার ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, সম্পূরক শুল্ক ১৬৭ কোটি চার লাখ টাকা, রেগুলেটরি শুল্ক ৫৯ কোটি টাকা ও কাস্টমস শুল্ক ৮৮৩ কোটি ৬১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও জরিমানা থেকে আদায় ২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

বছরের হিসাবে অবৈধ পথে স্বর্ণ আসা কমেছে : কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, এয়ারপোর্টে কড়াকড়ি ও কঠোর নজরদারির কারণে অবৈধ পথে স্বর্ণ আনা কমেছে। বিমানবন্দরে কর্মরত গোয়েন্দা ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের নজরদারি ও গোপন তথ্যের ভিতিত্তে অবৈধ পথে আসা সোনা ধরতে তৎপরতা চলছে। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে অবৈধ পথে আসা সোনা জব্দ কমেছে। কিন্তু একক মাস হিসাবে গত ডিসেম্বরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০১৮ সালে আকাশপথে আসা ৭৬৫ কেজি অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে এটা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৪১ কেজিতে। সর্বশেষ গত বছর বা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ১২১ কেজি অবৈধ সোনা জব্দ করা হয়।




error: Content is protected !!