‘ফ্রেশ’ রেজাউলের বিপরীতে ৪৮ মামলার আসামি শাহাদাত

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০

স্টাফ রিপোটার:

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী মাসখানেক আগেও নগরবাসীর কাছে অপরিচিত ছিলেন। সে হিসেবে বয়সে তরুণ ও বেশ পরিচিত বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। গত ১০ বছরে বেশ কয়েক দফায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী শাহাদাতকে। বর্তমানে তিনি ৪৮ মামলার আসামি। বিপরীতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এ দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামায় এসব বিষয় উল্লেখ করেছেন।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর চেয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়া শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলা ও ব্যাংক ঋণও রয়েছে অনেক।

এদিকে চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট এলাকার খ্যাতনামা বহদ্দার বাড়ির মরহুম হারুন অর রশীদ চৌধুরীর বড় ছেলে রেজাউল করিম চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। রাজনৈতিক জীবনে কোনো মামলা-মোকদ্দমার মুখোমুখি হননি তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী এ রাজনীতিবিদ মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানাধীন পশ্চিম বাকলিয়ার ডিসি রোড এলাকার আহমদুর রহমানের ছেলে শাহাদাত হোসেন। তিনি এমবিবিএস ডিগ্রিধারী, পেশায় চিকিৎসক।

হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা নেই। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালত ও নগরের বিভিন্ন থানায় ৪৮টি মামলা রয়েছে। তবে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি এ বিএনপি নেতার। এসব মামলার মধ্যে ৪৩টি বিচারাধীন। দুটি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত এবং তিনটি তদন্তাধীন আছে। দ্রুত বিচার আইনে করা একটি মামলায় শাহাদাত হোসেন খালাস পেয়েছেন।

‘ক্লিন’ রেজাউল, ঋণে জর্জরিত শাহাদাত

হলফনামায় রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে মোট ৭১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৮ টাকা অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে। আর ডা. শাহাদাতের নামে অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকা।

এছাড়া বিভিন্ন খাতে রেজাউল করিমের নিজের ও নির্ভরশীলদের মিলে বার্ষিক আয় ৮ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা। বিপরীতে শাহাদাত হোসেনের পেশাগত ও নানা ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৫ টাকা, যা রেজাউল করিমের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিমের মোট অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে আছে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৩৯ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা। পোস্টাল, সেভিংসে নিজ নামে না থাকলেও রেজাউলের স্ত্রীর নামে আছে ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড।

 

রেজাউল করিমের নিজ নামে রয়েছে একটি ৪ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে বিবাহসূত্রে নিজ নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ২০ তোলা স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪০ তোলা স্বর্ণ আছে।

বিবাহ সূত্রে নিজ নামে ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও এক লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে রেজাউল করিমের। অন্যান্য অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূলধন ২ লাখ টাকা ও ফার্মের মূলধন দশ লাখ ৬ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি মেসার্স চৌধুরী ইলেকট্রনিক্স ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ফার্মের মূলধন ২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা ও ঋণ হিসেবে প্রদত্ত চার লাখ টাকা।

রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের বার্ষিক আয় বাড়ি এপার্টমেন্ট, দোকান থেকে ৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ব্যবসায় নিজের কোনো আয় না থাকলেও নির্ভরশীলদের আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ফার্মের শেয়ার থেকে নিজের আয় দুই হাজার ১০০ টাকা ও নির্ভরশীলদের আয় ৫০ হাজার ৩০০ টাকা।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের নামে কৃষি ও অকৃষি জমি না থাকলেও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ গন্ডা দুই কড়া অকৃষি জমি। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে নিজ নামে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমির ওপর আবাসিক গৃহমূল্য এক লাখ টাকা ও যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত চার ভাগের এক অংশ। তার নিজ নামে চারটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার মূল্য এক কোটি নয় লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা। এছাড়া রেজাউল করিমের নামে কোনো ঋণ নেই।

জানা গেছে, নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য নিজের ব্যবসা থেকে এক লাখ টাকা খরচ করবেন রেজাউল। পাশাপাশি স্ত্রী পাঁচ লাখ ও এক ভাই সাড়ে তিন লাখ টাকা দেবেন। এর বাইরে রেজাউল তার দুই ভাইয়ের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা ভোটের জন্য ধার করবেন ।

অন্যদিকে, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতের বাৎসরিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৫ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ নিজের আয় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা, পেশাগত আয় ১৭ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা।

 

চিকিৎসক শাহাদাত নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার দ্য ট্রিটমেন্ট সেন্টার নামের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মূলধন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকা।

ডা. শাহাদাতের নিজ নামে অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকা। এর মধ্যে নিজের আছে নগদ ১৫ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমা অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা। তার নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির শেয়ার বাবদ ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা।

শাহাদাতের নিজের নামে ১১ লাখ ৮০ হাজার মূল্যমানের কার (ফিল্ডার-টয়োটা) ও ২৭ লাখ ২০ হাজার মূল্যমানের ভি-৭৩ মডেলের পুরনো জিপ গাড়ি আছে। ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের নিজের নামে স্বর্ণালঙ্কার আছে। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে নিজ নামে ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ফ্রিজ ও ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের টিভি আছে। খাট, সোফা সেট, আলমিরা, ওয়ারড্রোব মিলিয়ে নিজ নামে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র আছে ডা. শাহাদাতের।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে ডা. শাহদাতের নিজ নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। এর মধ্যে নিজ নামে ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১৮ শতক এবং ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১ দশমিক ৫ কাঠা অকৃষি জমি আছে। নিজ নামে ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার আটতলা বিশিষ্ট একটি দালানের এক অংশ আছে। এছাড়া ৩৫ লাখ টাকা দামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে শাহাদাতের।

ব্যাংক ঋণের মধ্যে শাহাদাতের নিজ নামে উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা ঋণ আছে।

নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য নিজের আয় থেকে ২০ লাখ খরচ করবেন ডা. শাহাদাত। আর দুই বোনের কাছ ঋণ করবেন পাঁচ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা।




error: Content is protected !!